শানতুং প্রদেশ চীনের পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চল এবং বো সমুদ্র অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ। শানতুং প্রদেশ হলো চীনা সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স। এটা কনফুসিয়ান সংস্কৃতির জন্মস্থান। শানতুং প্রদেম কনফুসিয়াস ও মেনসিয়াসের জন্মস্থান এবং এটি 'শিষ্টাচার স্থান' হিসেবে পরিচিত। বিগত ৭০ বছরে শানতুং প্রদেশের অর্থনীতি ও সমাজের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছরে শানতুং প্রদেশের জিডিপি ৭.৬৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান আরএমবি ছিল। এটি হল ১৯৫২ সালের ৩৪৪ গুণ। বর্তমানে শানতুং প্রদেশে একদিনে সৃষ্ট সম্পদের পরিমাণ ১৯৫২ সালের সমগ্র বছরের ৪.৮ গুণ।
শানতুং প্রদেশের সিপিসি'র কমিটি'র সম্পাদক লিউ চিয়া ই ১৬ জুলাই চীনা রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, গত বছরের শুরুর দিকে শানতুং প্রদেশে চীনের প্রধান নতুন ও পুরাতন শক্তি রূপান্তর বহুমুখী পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র নির্মাণকাজ শুরু হয়। শানতুং প্রদেশ 'এক বছরের মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া, তিন বছরের মধ্যে প্রাথমিক সাফল্য লাভ করা, পাঁচ বছরের মধ্যে ব্রেকথ্রু করা ও দশ বছরের মধ্যে নিজের সুবিধা গড়ে তোলা' শীর্ষক মৌলিক কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় নতুন প্রজন্মের তথ্যপ্রযুক্তি, উচ্চমানের সরঞ্জাম, নতুন জ্বালানিসম্পদ, আধুনিক সমুদ্র, চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য, উচ্চ মানের রাসায়নিক শিল্প, আধুনিক কৃষি, সাংস্কৃতিক নব্যতাপ্রবর্তন, বিশিষ্ট পর্যটন ও আধুনিক ব্যাংকিং—এই দশটি শিল্প ক্লাস্টার গড়ে তোলা হবে। লিউ চিয়া ই আরো বলেন, "সমগ্র প্রদেশে জিডিপি'র নতুন চালিকাশক্তির বৃদ্ধির হার ২০১৬ সালের ৩৯ থেকে ২০১৮ সালের ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। নতুন পদ্ধতি, নতুন প্রযুক্তি, নতুন শিল্প ও নতুন ব্যবসায়ের হার ২০১৬ সালে প্রদেশের জিডিপি'র ২০.৭ থেকে গত বছর ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন ও পুরাতন চালিকাশক্তির রূপান্তর সার্বিকভাবে উন্নত হচ্ছে।"
শানতুং প্রদেশে প্রায় ১.৬ লাখ বর্গকিলোমিটারের সমুদ্র রয়েছে। বর্তমান শানতুং প্রদেশের সমুদ্রশিল্পে উত্পাদনের পরিমাণ সমগ্র প্রদেশের জিডিপি'র ২০ শতাংশ এবং সমগ্র চীনের সমুদ্র-উত্পাদনের মূল্যের ২০ শতাংশ। শানতুং প্রদেশের গভর্নর লং চেং বলেন, শানতুং প্রদেশ অব্যাহতভাবে আঞ্চলিক সুবিধা উন্নয়ন করবে এবং বহু ব্যবস্থা নিয়ে পরিবহনের সংযুক্তি ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করবে। তিনি আরো বলেন, "আমরা পূর্ব এশিয়ার বন্দর ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মাধ্যমে আমরা জিয়াওদং উপদ্বীপকে পরিবহনকেন্দ্র থেকে সমগ্র পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে পরিণত করেছি। এতে নৌপথ, রেলপথ ও বিমানপথ অন্তর্ভুক্ত আছে। যেমন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের এলাকার মধ্য দিয়ে মধ্য-এশিয়া ও 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় পণ্য রফতানি করতে পারে। আগের চেয়ে সময়ও অনেক কম লাগে।"
শানতুং প্রদেশ 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লিউ চিয়া ই বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শানতুং 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নে অংশ নেয়। সংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলে স্থানীয় নাগরিকদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রদেশটির আছে। এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, "শানতুং প্রদেশের সরঞ্জাম উত্পাদন-শিল্প শক্তিশালী। আমরা এখন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলে ধারাবাহিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি বা করব। নতুন জ্বালানিসম্পদ, নতুন উপাদান, পরিবহন, অবকাঠামো ও দ্রুতগতির রেলপথ খাতে আমরা কাজ করছি।"
শানতুং প্রদেশ দৃঢ়ভাবে 'সবুজ পাহাড় ও পরিস্কার পানি হল সোনা ও রূপার পাহাড়'-এ ধারণায় বিশ্বাস করে। সবুজ শানতুং গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ২০০৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সমগ্র প্রদেশে জ্বালানি খরচ কমেছে। অধিক দূষণের দিন ২০১৩ সালে যেখানে ছিল ৬০ দিন, সেখানে তা গত বছর ছিল ৯.৯ দিন।