চিং পো জাতির লোকসংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। তারা মূলত ইউননান প্রদেশের ত্য হং তাই এবং চিং পোং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ৫টি জেলায় বাস করে। ৯৫ শতাংশের বেশি চিং পো জাতির মানুষ ত্য হং অঞ্চলে বাস করে।
চিং পো জাতিঅধ্যুষিত পাহাড়ি এলাকার গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার এবং এখানে বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। গাছগাছড়া প্রচুর বলে এখানে পানিসম্পদ প্রচুর। এতে কৃষিশিল্পের জন্য ভাল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক তৃণভূমি, তাই পশুপালনও ভালভাবে চলছে এখানে।
চিং পো জাতি নিজস্ব ভাষা ও লিখিত অক্ষর আছে। তবে চিং পো জাতির ৫টি শাখা ৫টি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। চিং পো জাতির ৫টি শাখার নাম হচ্ছে: চিং পো, জাই ওয়া, ল্য ছি, লাং এ্য, এবং বো লা। এ ৫টি নাম যেমন তাদের নাম তেমন তাদের ভাষার নাম। দৈনন্দিন জীবনে তারা নিজেদের আঞ্চলিক ভাষা বলে এবং কেউ কেউ অন্য শাখার ভাষাও বলতে পারেন। চিং পো জাতির লিখিত ভাষা দুটি: চিং পো ভাষা ও জাই ওয়া ভাষা। দুটি ভাষার পিনইন-ই ল্যাটিন বর্ণমালাভিত্তিক।
চিং পো জাতি মূলত কৃষিকাজ করে। চাল, ভুট্টা, গম উত্পাদন করে তারা। ত্য হংতে বসতি স্থাপনের আগে, তারা ধান ক্ষেতে চাষ করতে জানতো না। ত্য হংতে আসার পর, তারা তাই জাতি ও ত্য আং জাতির কাছ থেকে ধানচাষ করতে শিখেছে।
পাহাড়ি অঞ্চলের শুষ্ক জমিতে তারা চাষ করে; আবার জমিতেও ধান চাষ করে। গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে আখ তাদের প্রধান অর্থকরী ফসল এবং গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উত্সে পরিণত হয়।
৪০-৬০টি পরিবার নিয়ে গঠিত হয় একটি চিং পো জাতির গ্রাম। পাহাড়ের ভূখণ্ড অনুযায়ী গ্রাম নির্মাণ করা হয়। গ্রাম সাধারণত উপত্যকায় গড়ে ওঠে। পাহাড় থাকে পেছনে। গ্রামে ছোট বন থাকে এবং এর গাছ কাটা নিষিদ্ধ।
চিং পো জাতির মানুষ ভাত খায় এবং বাঁশ-ভাত ও চিকেন জাউ তাদের প্রিয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার। তারা ঝাল খাবার খেতে পছন্দ করে।
চিং পো জাতির পুরুষ সাদা ও কালো রঙের পোশাক পরেন। ভিন্ন শাখার প্রবীণ পুরুষের পোশাক প্রায় একই। এর মধ্যে চিং পো শাখার পুরুষ সাদা শার্ট, কালো কোট এবং প্যান্ট পরেন এবং মাথায় লাল ও নীল রঙের স্কার্ফ পরেন। অন্য শাখার পুরুষরা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরেন এবং মাথায় সাদা রঙ্গের স্কার্ফ পরেন।
নু চিয়াং লি সু রায়ত্তশাসিত রাজ্যের লু সুই জেলার চিং পো জাতির পোশাকে বৈশিষ্ট্য লি সু জাতির প্রভাব স্পষ্ট। তা ত্য হং এলাকার চিন পো জাতির তুলনায় বেশ ভিন্ন।
চিং পো জাতির মানুষ অতিপ্রাকৃতিক ধর্ম বিশ্বাস করে। তারা বিশ্বাস করে, মানুষ ও পৃথিবীর সবকিছুন দ্বৈত প্রকৃতি আছে। তাদের মতে মানুষ, পশুপাখি, উদ্ভিদ, সূর্য, চাঁদ, পাহাড়, বাতাস, জমিসহ সবকিছুর নিজস্ব আত্মা আছে।
মু তাই তাদের ধর্মের বড় এক দেবতা। এই দেবতা সুখ ও সম্পদের দেবতা। মু তাইর পূজা তাদের বৃহত্তম একটি ধর্মীয় উত্সব। তবে এখন এটা শুধু বড় আকারের নাচ ও গানের অনুষ্ঠান হিসেবেই টিকে আছে। ১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাসে মু তাই পূজা একটি জাতীয় ঐতিহ্যিক উত্সব হিসেবে নির্ধারণ করা হয় এবং চান্দ্রবর্ষের প্রথম মাসে সেটি অনুষ্ঠিত হয়। উত্সব চলাকালে গান ও নাচের পাশাপাশি মেলা ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চলে। এ উত্সব এখন চিং পো জাতির জাতীয় ঐক্য জোরদার, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং জাতীয় সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ এক প্লাটফরমে পরিণত হয়েছে। (শিশির/আলিম/মুক্তা)