সংবাদ পর্যালোচনা প্রসঙ্গ: চীন-মার্কিন বিশেষজ্ঞদের অভিন্ন মত- সহযোগিতার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী সবাই উপকৃত হবে
  2019-07-12 14:37:43  cri

গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেইজিংয়ে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে দিক-নির্দেশনাসংশ্লিষ্ট সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে চীন ও মার্কিন বিশেষজ্ঞরা 'এক অঞ্চল, এক পথ'সংক্রান্ত ফলাফলের আলোচনা করেন এবং ভবিষ্যত্ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেন।

গত জুন মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক 'এক অঞ্চল, এক পথ' বিশ্ব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকার উচ্চ প্রশংসা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য ৬.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৯.৭ শতাংশ বেড়েছে এবং বিশ্বের আয় ২.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ম্যাডাম নাইমা গ্রিন মনে করেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' শুধু চীনের জন্যই নয়, অংশগ্রহণকারী সব দেশের জন্য কল্যাণকর।

তিনি বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ'-এর অনেক প্রকল্প ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্প স্থানীয় কমিউনিটির ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। কারণ, এ উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে উপকারিতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দেশ ও জনগণের কল্যাণ করা। যে সব দেশের অবকাঠামো নির্মাণ বা উন্নয়ন জরুরি, এ উদ্যোগ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া সোসায়েটি পলিসি ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কূটনীতিবিষয়ক ভাইস চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল রাসেল এর আগে মার্কিন সরকারের পূর্ব-এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরবিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, অনেক মার্কিন কোম্পানি 'এক অঞ্চল, এক পথ' নির্মাণে অংশগ্রহণ করতে চায়। যেমন, ঝুঁকি মোকাবিলা ও প্রকল্প পরিকল্পনায় অভিজ্ঞ নির্মাণ কোম্পানি, লজিস্টিকস কোম্পানি, পরিষেবা কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যাংক।

তিনি বলেন, আমি মনে করি মার্কিন কোম্পানিগুলো উত্পাদন, পরিষেবা ও অর্থ-সংগ্রহ ক্ষেত্রে 'এক অঞ্চল, এক পথ' সম্পর্কে খুব আগ্রহী। এখানে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এসব আগ্রহ বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। তাদের অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে কি? তাদের সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়া এবং এতে অংশগ্রহণের সুযোগ আছে কি? আমি মনে করি, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাজারে প্রবেশ করার জন্য আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থা কার্যকর করা দরকার। ইতিহাস থেকে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে মার্কিন কোম্পানিগুলো আগে পদক্ষেপ নিয়েছে, তারপর মার্কিন সরকার এগিয়ে এসেছে।

'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ উত্থাপনের ৬ বছরে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গত বছরে চীনা কোম্পানির 'এক অঞ্চল, এক পথ' সংশ্লিষ্ট দেশে সরাসরি বিনিয়োগ ১৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যা তার আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। চীন-ইউরোপ রেলপথে ১২ হাজার রেলগাড়ি চলাচল করেছে এবং পরিবহনকৃত পণ্যের মোট মূল্য ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জার্মানিতে চীন-ইউরোপ রেলগাড়ি লজিস্টিকসের ক্ষেত্রে স্থানীয় ৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কেনিয়ায় বন্দরশহর মোম্বাসা থেকে রাজধানী নাইরোবি যাওয়ার রেলপথ তৈরি হয়েছে। যা স্থানীয় ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং ১.৫ শতাংশ আর্থিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

চীনের রেনমিন ইউনিভার্সিটির ছুংইয়াং গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্টের সহকারী চিয়া চিং বলেন, বিশ্ব অবকাঠামো খাতে যোগাযোগ বিভিন্ন দেশের সংযুক্ত হওয়ার পথ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে চীন সারা বিশ্বে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। যা বিশ্বের একই ধরনের ঋণের মোট পরিমাণের তিন ভাগের দুই ভাগ।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারী চীন ও মার্কিন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রকল্পের ঝুঁকি মূল্যায়ন ও চিহ্নিত করা এবং স্বচ্ছতা ও সার্বিক আগাম বিশ্লেষণ খুব জরুরি। এর মাধ্যমে স্থানীয় মানুষ এসব প্রকল্পে আরও সহজে অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং তা অর্থ সংগ্রহে সহায়ক হবে।

(স্বর্ণা/তৌহিদ/শিখা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040