পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই সিপিসিসদস্যের গল্প
  2019-07-10 09:43:24  cri

 

জনপ্রিয় সরকারি কর্মকর্তা ইয়াং ইয়ু বিন

জনপ্রিয় সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে 'নবম জাতীয় পুরস্কার' পেয়েছেন ইয়াং ইয়ু বিন। তিনি চীনের চ্য চিয়াং প্রদেশের চৌ শান শহরের হুয়া নিয়াও গ্রামের সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক। তার নেতৃত্বে, অল্প কয়েক বছরে, পশ্চাত্পদ হুয়া নিয়াও এখন বিখ্যাত একটি সুন্দর গ্রামে পরিণত হয়েছে।

চৌ শান দ্বীপপুঞ্জে ছোট-বড় ১৪০০টির বেশি দ্বীপ আছে। চৌ শান দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে উত্তর দিকে অবস্থিত হুয়া নিয়াও দ্বীপ এবং মাত্র তিন বছর আগে এ দ্বীপ ছিল অনুনন্ত ও পশ্চাত্পদ। পরে ইয়াং ইয়ু বিনের নেতৃত্বে হুয়া নিয়াও দ্বীপের টেকসই উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত একটি পথ খুঁজে পাওয়া যায়। ৪৯ বছর বয়সী ইয়াং ইয়ু বিন যখন হুয়া নিয়াও দ্বীপের কথা উল্লেখ করেন তখন তাঁর চোখমুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, হুয়া নিয়াও দ্বীপের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে: দূববর্তী, ছোট ও সুন্দর। দূরবর্তী মানে মূল ভূভাগের বাইরে, তুং হাই সাগরের ভাসমান দ্বীপ এটি। ছোট মানে এর আয়তন কম। হুয়া নিয়াও দ্বীপের আয়তন মাত্র ৩.২৮ বর্গকিলোমিটার; সিহু হ্রদের অর্ধেকের সমান। তবে হুয়া নিয়াও দ্বীপ সুন্দর একটি জায়গা। আকাশ থেকে দেখলে হুয়া নিয়াও দ্বীপকে একটি উড়ন্ত পাখির মতো মনে হয়। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশও সুন্দর। দ্বীপে গাছগাছড়া প্রচুর। হুয়া নিয়াও দ্বীপের মানুষের মনও সুন্দর। সবাই সাহসী, সরল ও পরিশ্রমী। তাদের মন যেন সাগরের মতো প্রশস্ত।

তবে হুয়া নিয়াও দ্বীপে তাজা পানির সংকট ছিল। পরিবহনব্যবস্থাও ভালো ছিল না। আবর্জনাও দ্বীপের একটি বড় সমস্যা ছিল। তাই হুয়া নিয়াও দ্বীপকে একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করা সহজ ব্যাপার ছিল না। ইয়াং ইউয়ু বিনকে এর জন্য অনেক কাজ করতে হয়েছে। তিনি মনে করেন, নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও সুশৃঙ্খল উন্নয়ন চাইলে নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। তাঁর মতে: ১. উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় দ্বীপের মূল চেহারা নষ্ট করা যাবে না; ২. দ্বীপে পর্যটকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে; ছোট এ দ্বীপ অনেক বেশি পর্যটককে ধারণ করতে অক্ষম; ৩. উন্নত প্রযুক্তি দ্বীপে আনতে হবে; যেমন: সমুদ্রের পানি শোধন করে পানীয় জলের সমস্যার সমাধান করতে হবে; দ্বীপের বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান করতে হবে সৌরশক্তি দিয়ে; তুলনামূলকভাবে উন্নত নিম্ন তাপমাত্রার পাইলাইসিস প্রযুক্তি এবং রান্নাঘরের বর্জ্য কম্পোস্টিং প্রযুক্তির সাহায্যে আবর্জনা সমস্যার সমাধান করতে হবে; পাশাপাশি, দ্বীপের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় যেসব উপকরণ প্রয়োজন, তা স্থানীয় বা পরিবেশবান্ধব উপকরণ হতে হবে।

ইয়াং ইয়ু বিন স্বীকার করেন, দীর্ঘসময় দ্বীপে টিকে থাকা কঠিন এক ব্যাপার। পরিবার তার কাছে নেই। কখনও কখনও টাইফুনের আঘাত সহ্য করতে হয়। তবে সিপিসির একজন সদস্য হিসেবে ইয়াং ইয়ু বিন নিজের কাজ ভালভাবে করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি বলেন, "দ্বীপে অন্য কর্মীদের জন্য আরও ভাল ডরমিটরি নির্মাণ করছি আমরা, যাতে তাদের স্বজনরা দ্বীপে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারে। আমরা একটি দায়িত্বশীল ক্যাডারদল তৈরি করতে চাই।"

হুয়া নিয়াও দ্বিপ এখন বিখ্যাত একটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় মানুষ পারিবারিক হোটেলের ব্যবসা করে এবং তাদের আয় মাসিক ৩০০০ ইউয়ানের বেশি। কারো কারো বার্ষিক আয় ১০ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়-স্নাতক এখন ইউয়াং ইউয়ু বিনের গ্রাম পুনরুদ্ধার প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন।

চীনা কারিগর হুয়াং চিন চুয়ান

'জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পুরস্কার, ২০১৭' বিতরণ অনুষ্ঠানে একজন সাধারণ নারীকর্মী সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি জাতীয় গ্রিডের চে চিয়াং বিদ্যুৎ কোম্পানি 'ইলেকট্রিক পাওয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের' সিনিয়র টেকনিশিয়ান হুয়াং চিন চুয়ান। তিনি বিশ্বের প্রথম বৈদ্যুতিক মিটার স্বয়ংক্রিয় পরিমাপ অ্যাসেম্বলি লাইন তৈরি করেন এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ পরিমাপের ব্যবস্থা চালু করেন। তিনি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্বিতীয় পুরস্কার পান।

বিদ্যুৎ আমাদের জীবনে অপরিহার্য। আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করি এবং বিদ্যুৎ পরিমাপের জন্য বৈদ্যুতিক মিটারের ব্যবহারও আমরা জানি। মিটার দেখে বিদ্যুতের হিসাব করা হয়। কিন্তু এখন বিদ্যুতের পরিমাপে ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক বেশি কার্যকর ও স্মার্ট ব্যবস্থা।

১৯৮৪ সালে স্কুল থেকে স্নাতক হবার পর, হুয়াং চিন চুয়ান শাও সিং শহরের বিদ্যুৎ ব্যুরোতে কাজ শুরু করেন। হুয়া চিন চুয়ান বলেন, তারের সঙ্গে মিটার যুক্ত করার কাজটা তাকে বার বার করতে হতো। তাই তিনি একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা আবিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৭ সালে, তার নেতৃত্বে একটি দল এ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করে এবং ১০ বছরের মধ্যে তারা 'বৈদ্যুতিক মিটার স্বয়ংক্রিয় পরিমাপ ব্যবস্থা' আবিষ্কার করেন। এর আগে চীনে, এমনকি বিশ্বের কোথাও এমন ব্যবস্থা ছিল না।

স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর ফলে ৪৫ মিনিটের কাজ এখন শেষ হচ্ছে মাত্র ২ সেকেন্ডে। পরিমাপের কাজটিও হচ্ছে শতভাগ নিখুঁতভাবে। এখন এ ব্যবস্থা চীনের ২৮টি প্রদেশে কাজে লাগছে এবং পেটেন্ট লাইসেন্স পদ্ধতির আওতায় ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়াসহ ৯টি দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে।

হুয়াং চিন চুয়ান নিজকে একজন প্রযুক্তিকর্মী হিসেবে মনে করেন এবং এখন তিনি ও তার দল 'বৈদ্যুতিক মিটার স্বয়ংক্রিয় পরিমাপ'-কে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন করেছেন। তিনি আশা করেন, তাদের আবিষ্কৃত এ ফলাফল বিশ্বের সাধারণ মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।

হুয়াং চিন চুয়ান শ্রেষ্ঠ একজন প্রযুক্তিবিদ ও সিপিসির সদস্য। গেল ৩০ বছরে তিনি কারিগরি স্কুলের ছাত্রী থেকে একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদে পরিণত হন। তার গবেষণার ফলাফল গ্যাস-মিটার ও পানির মিটারে ব্যবহার করা হয়, যা পরিমাপযন্ত্রের মান উন্নয়নে বেশ অবদান রেখেছে। (শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040