না সি জাতির লোকসংখ্যা ৩ লাখ ৮০০০-এর বেশি। তাদের অধিকাংশ ইউননান প্রদেশের লি চিয়াং শহরে বাস করে। সিছুয়ান প্রদেশেও কিছু না সি জাতির মানুষের বাস।
ইউনান-সি ছুয়ান-তিব্বত সিমান্ত না সি জাতিঅধ্যুষিত এলাকা। এখানে বড় ও উঁচু পাহাড় বেশি। এখানকার অধিকাংশ পাহাড়ের উচ্চতা ৫ হাজার মিটারের বেশি। কোনো কোনো পাহাড়ের উচ্চতা ৬০০০ মিটার ছাড়িয়েছে। না সি জাতির মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ২৭০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে।
পশুপালন তাদের প্রধান শিল্প। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সব না সি পরিবার ছাগল পালন করে। লি চিয়াং ঘোড়া ইউনানের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক ধরনের ঘোড়া। এগুলো দেখতে ছোট, তবে শক্তিশালী। এসব ঘোড়া সহজে পাহাড়ি অঞ্চলে চলতে পারে। না সি জাতির মানুষ এ ঘোড়াও লালনপালন করে।
কোনো কোনো জায়গার না সি মানুষ নিজেদের ডাকতো না সি, না, নারু, না হান, লুলুসহ বিভিন্ন নামে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ না সি, নান হান এ নাম ব্যবহার করতো। ৬ ভাগের ৫ ভাগ মানুষ নিজেদের না সি বলে ডাকে বলে, ১৯৫৪ সালে জাতির নাম 'না সি' নির্ধারণ করা হয়। 'না' মানে বড়, মহান এবং 'সি' মানে মানুষ।
না সি ভাষা দু'রকমের: পশ্চিম আঞ্চলিক ভাষা ও পূর্ব আঞ্চলিক ভাষা। ১৯৫৬ সালের জুন মাসে পশ্চিম আঞ্চলিক ভাষার ভিত্তিতে তৈরি করা হয় ল্যাটিন বর্ণমালার না সি অক্ষর এবং ১৯৮১ সাল থেকে প্রাথমিক স্কুলে এ অক্ষর শেখানো শুরু হয়।
না সি জাতির মানুষের পূর্বপুরুষরা গুহায় বাস করতো। পরে যাযাবর হিসেবে তারা তাবুতে বাস করতো। এখন তারা কৃষিকাজ করে।
লি চিয়াং পুরাতন নগর না সি জাতির চমত্কার স্থাপত্যের প্রতীক। এ পুরাতন নগর ইউ লং তুষার পাহাড়ের নীচে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত একটি ভালভূমিতে এ নগর গড়ে উঠেছে। এটি বর্গাকৃতির। উত্তর দিকে হেই লং নদী পুরাতন নগরের পানির মূল উত্স এবং এর শাখা নগরের চারদিক দিয়ে প্রবাহিত। নগরে ছোট-বড় সেতু ৩৫৪টি। এখানকার রাস্তা এমনভাবে তৈরি যে, বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে থাকে না।
ইউননানের লি চিয়াংয়ের না সি জাতির পরিবার পিতৃতান্ত্রিক এবং সি ছুয়ান নিং লাং ও ইউং নিং অঞ্চলের না সি জাতির পরিবার মাতৃতান্ত্রিক।
না সি জাতি বহু ধর্মে বিশ্বাস করে। কেউ কেউ স্থানীয় ধর্ম 'তুংবা' বিশ্বাস করে এবং কেউ কেউ বৌদ্ধ ও তাওবাদে বিশ্বাসী। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ তুংবা ধর্ম বিশ্বাস করে।
না সি জাতির উত্সব অনেক। এর মধ্যে আকাশ পূজা সবচেয়ে বড়। এটা তুংবা ধর্মের একটি বড় অনুষ্ঠান।
পাং পাং মেলা প্রতিবছর চান্দ্রপঞ্জিকার প্রথম মাসের ১৫তম দিনে লি চিয়াং পুরাতন নগরে আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে রাস্তায় রাখা হয় বাঁশ, কাঠ, খামার সরঞ্জাম এবং ফুল ও ফল গাছের চারা। এ উত্সব কৃষিকাজ শুরুর প্রতীক।
অন্য অনেক সংখ্যালঘু জাতির মতো না সি জাতির মানুষও 'মশাল উত্সব' উদযাপন করে। এ উত্সবের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। আগুনের পূজার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের বাঁচানো এ উত্সবের লক্ষ্য। (শিশির/আলিম/রুবি)