১. চীনে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৬০ লাখে। এই হিসাব গত জুনের শেষ নাগাদ পর্যন্ত। সম্প্রতি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশান ফর মার্কেট রেগুলেশন (এসএএমআর) এ তথ্য জানায়।
এসএএমআর-এর প্রধান সিয়াও ইয়াছিন জানান, চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশে নতুন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে বেড়েছে ১৯,৪০০টি করে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.১ শতাংশ বেশি।
২. চীনের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০১৮ সালের শেষদিকে চীনে কর্মসংস্থানের মোট সংখ্যা ছিল ৭৭ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির এই প্রবণতা চীনের অর্থনীতির অব্যাহত ও স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রতীক। দেশের কর্মসংস্থান-কাঠামোর উন্নতি ও কর্মসংস্থানের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চীনে সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ গঠনের মজবুত ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট তথ্যানুসারে, নয়াচীন প্রতিষ্ঠার সময় তথা ১৯৪৯ সালের শেষ দিকে, চীনের শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার ছিল ২৩.৬ শতাংশ। ২০১৮ সালের শেষে দিকে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার কমে দাঁড়ায় ৪.৯ শতাংশে। হুয়াসিয়া ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ওয়াং চুন বলেন, "৭০ বছর আগে চীনের জনসংখ্যা ছিল ৫০ কোটির মতো; এখন ১৪০ কোটি। জনসংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ১৪০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান শুধু চীনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য নয়, বরং বিশ্বের অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।"
এক হিসেব অনুসারে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, চীনের শহরাঞ্চলে বছরে গড়ে ১.৩ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৮ সালে ডিজিটাল অর্থনীতির খাতে কর্মসংস্থানের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯.১ কোটিতে, যা গোটা বছরে সৃষ্ট মোট কর্মসংস্থানের এক-চতুর্থাংশ।
নয়াচীন প্রতিষ্ঠান পর বিগত ৭০ বছরে, চীনের অর্থনীতির আকার অব্যাহতভাবে বেড়েছে। ২০১৮ সালে চীনের মাথাপিছু গড় জিএনপি ছিল ৯৭৩২ মার্কিন ডলার, যা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় জিএনপি'র চেয়ে বেশি।
৩. ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান সম্পাদক রবার্ট গ্রিফিথস সম্প্রতি লন্ডনে সিনহুয়া বার্তা সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক আধিপত্যবাদ দেশটির নিজের জন্য ক্ষতিকর। সমতার ভিত্তিতে আলোচনাই চীন-মার্কিন বাণিজ্যিক বিরোধ অবসানের একমাত্র উপায়।
চীনের একের পর এক পণ্যের ওপরে শুল্ক বাড়ানোর মার্কিন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক আধিপত্যবাদ যুক্তরাষ্ট্রের নিজের জন্য কল্যাণকর নয়। এই নীতি ব্রিটেনসহ আন্তর্জাতিক অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর।
রবার্ট গ্রিফিথস আশা করেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে। কারণ, বর্তমান অবস্থানে থাকলে চীনের সঙ্গে দেশটির সুষ্ঠু বাণিজ্যিক সম্পর্ক নষ্ট হবে এবং মার্কিনিরা অনেক বাণিজ্যের সুযোগ হারাবে।
গ্রিফিথস আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক আচরণ চীনের উন্নয়নকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
৪. চীন বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্ড মার্কেট। এক্ষেত্রে এক নম্বরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনা সরকারের সিকিউরিটিজ ডিপোসিটোরি ট্রাস্ট অ্যান্ড ক্লিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।
সর্বশেষ হিসেব অনুসারে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত চীনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে বন্ড ছিল ১.৬১০৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান আরএমবির। টানা ছয় মাস ধরে এই অংক বেড়েছে। পাশাপাশি, শাংহাই ক্লিয়ারিং হাউজের অধীন বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে বন্ড ছিল ২৬৮.৯৬ বিলিয়ন ইউয়ানের।
এদিকে চীনের বৈদেশিক বিনিময় বাণিজ্যকেন্দ্র ও ন্যাশনাল ইন্টারব্যাংক ফান্ডিং সেন্টারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৯ সালের মে মাসে মোট ১০৮টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে চীনের বাজারে প্রবেশ করে। এদের মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৫৮.৬ বিলিয়ন ইউয়ান।
৫. গত বছর চীনের গ্রামাঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাসকারীর সংখ্যা ছিল ৫৬ কোটি, যা ২০ বছর আগের চেয়ে ৩০ কোটি কম। সম্প্রতি জাতীয় পরিষদের তথ্যকার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গ্রামাঞ্চলে প্রশাসনসংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনের গ্রামসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড নেতৃত্ব গ্রুপের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সংস্কৃতিকর্মী, বিজ্ঞানী, শিল্পপতি ও স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রামাঞ্চলের সংস্কৃতি উন্নয়নে অবদান রাখতে উত্সাহ দেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি 'গ্রামাঞ্চলের প্রশাসনব্যবস্থা উন্নয়ন ও জোরদার করা সংক্রান্ত নির্দেশনা' প্রকাশিত হয়। এতে বর্তমান ও ভবিষ্যতে গ্রামাঞ্চলের প্রশাসনব্যবস্থা উন্নয়নসংক্রান্ত পরিকল্পনা পেশ করা হয়।
৬. কয়লা সরবরাহের জন্য চীনে নির্মিত হচ্ছে দীর্ঘতম রেলপথ। 'মেংহুয়া' নামক এই রেলপথের শিশিয়া অংশের নির্মাণকাজে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিও অর্জিত হয়েছে সম্প্রতি। ফলে, আগামী পয়লা অক্টোবর গোটা রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেলপথের শিশিয়া অংশের দৈর্ঘ্য ২.২ কিলোমিটার।
মেংহুয়া রেলপথ ইনার মঙ্গোলিয়া থেকে চিয়াংসি প্রদেশের চিআন শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। মোট দৈর্ঘ্য ১৮৩৭ কিলোমিটার। এই রেলপথে বছরে ২০ কোটি টন কয়লা সরবরাহ করা যাবে।
৭. প্রথম চীন-আফ্রিকা আর্থ-বাণিজ্যিক মেলার একটি ওয়েবসাইট সম্প্রতি চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়।
এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আফ্রিকা ও চীনের সরবরাহকারী, বিক্রেতা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা সরাসরি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। এই প্লাটফর্মে আফ্রিকার ক্রেতারা চীনা পণ্য কিনতে পারবেন এবং আফ্রিকান বিক্রেতারা নিজেদের পণ্য চীনাদের কাছে বিক্রয় করতে পারবেন। তা ছাড়া, দু'পক্ষের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতায় এই ওয়েবসাইট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
জানা গেছে, এ ওয়েবসাইট আমদানি বি২বি, রফতানি বি২বি, রফতানি বি২সি এবং আমদানি বি২সি—এই চারটি ভাগ নিয়ে গঠিত। আগামী পাঁচ বছরে এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ১০ কোটি রকমের পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় হবে। দু'পক্ষের মোট ৫০ কোটি ব্যবহারকারী ও ১০ লাখ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সেবা দেবে এই ওয়েবসাইট।
৮. ২০১৮ সালে আফ্রিকার দেশগুলোতে মিসরের রফতানি বেড়েছে। এসময় আগের বছরের চেয়ে ২৬.৯ শতাংশ রফতানি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারে। মিসরের সরকারি পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮ সালে মিসর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আমদানি করেছে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারে পণ্য, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫.২ শতাংশ বেশি।
সরকারি হিসেব অনুসারে, মিসরের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক ও রফতানিকারক দেশ হচ্ছে আলজেরিয়া। ২০১৮ সালে মিসর আলজেরিয়া থেকে আমদানি করে ৩৯ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। অন্যদিকে, একই বছরে মিসর আলজেরিয়ায় রফতানি করে ৯৭ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।
৯. বাংলাদেশের প্রধান আমদানিকারক দেশ চীন থেকে যেকোনো পণ্য দেশে এনে দিতে যাত্রা শুরু করলো ড্রপশিপিং কোম্পানি 'ডোরপিং ডটকম'। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরাতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক এই সেবা উদ্বোধন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজ উদ্দিন খান। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনের শীর্ষ মোবাইল সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সেনজেন ডিপেং টেকনোলোজি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াং গোছিও।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডোরপিং ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম. সজল সরকার বলেন, স্বল্প পুঁজিতে যারা চীন থেকে যেকোনো ধরনের পণ্য নিয়ে এসে ব্যবসা করতে চান বা যারা নিয়মিত চীন থেকে পণ্য নিয়ে আসছেন তাদের তুলনামূলক কম খরচে এয়ার কার্গো বা জাহাজে দ্রুত পণ্য বাংলাদেশে এনে দেবে ডোরপিং। বাংলাদেশ থেকে চীনেও একই পদ্ধতিতে পণ্য পাঠানোর কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে সজল সরকার বলেন, বাংলাদেশ থেকে চীনে প্রতি বছর ৬৬৩.৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়। অন্যদিকে চীন থেকে বাংলাদেশে প্রতি বছর আমদানি হয় ৯,৬৬২.৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাৎসরিক ট্রানজেকশনই বলে দেয় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ডোর টু ডোর বা ড্রপশিপিং ব্যবসা কতটা উর্বর।
পণ্য এনে দেওয়া ছাড়াও চীনা প্রোডাক্ট সোর্সিং, গ্রাহকের সুবিধার্থে পণ্যের স্যাম্পল গ্রহণ, কোয়ালিটি চেকিং, গুয়াংজু ও ঢাকায় ওয়্যারহাউজ সুবিধা প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
(আলিমুল হক)