গ্রীষ্মকালে বিশ্বের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হলো- অলিম্পিক গেমস। ১৮৯৬ সালে প্রথম অলিম্পিক গেমস আয়োজনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩১বার এটি আয়োজন করা হয়। বর্তমানে অলিম্পিক গেমস শুধু ক্রীড়া প্রতিযোগিতাই নয়, উদ্বোধনী ও সমাপ্তি অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন দেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও বিনিময়ের ভালো প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি অলিম্পিক গেমসে নিজস্ব স্লোগান, মাস্কট এবং টিম সং থাকে। বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা অলিম্পিক গেমসের কিছু জনপ্রিয় থিম সং শুনবো।
প্রায় ২০০০ বছর আগে প্রাচীন গ্রিসের অলিম্পিক এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমস ১৮৯৬ সালে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে অনুষ্ঠিত হয়। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্রিসের একটি প্রাচীন সংগীত সামারস এনথেম (Samaras' anthem) বাজানো হয়। আর ১৯৫৮ সালে এই গান আনুষ্ঠানিকভাবে অলিম্পিক সং হিসেবে নির্ধারিত হয়। গানের কথায় প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত কবি কস্টিস পালামাসের একটি কবিতার কথা বলা হয় । এতে পবিত্র অলিম্পিক চেতনা প্রকাশ করা হয়েছে। বন্ধুরা, চলুন গানটি শুনি।
১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল অলিম্পিক গেমসের থিম সং ছিল- হ্যান্ড ইন হ্যান্ড (Hand in Hand)। এটি প্রথম ব্যাপক জনপ্রিয় অলিম্পিক থিম সং। এই গান দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে তৈরি করে। এই গানের 'হাতে হাত রাখার' প্রতিপাদ্য গানটি তৈরির মাধ্যমেও প্রতিফলিত হয়। গানের কথায় শান্তি, সহযোগিতা, ঐক্য ও মানবজাতির সাদৃশ্যের চেতনা প্রকাশিত হয়েছে। আর গানের শেষ অংশে কোরীয় লোকসংগীতের উপাদান যোগ করা হয়। বন্ধুরা, এখন গানটি শুনুন।
এবার আমরা শুনবো ১৯৯২ সালে স্পেনের বার্সেলোনা অলিম্পিক গেমসের থিম সং 'চিরদিনের বন্ধু'। স্নায়ুযুদ্ধের জন্য অনেক দেশ পরস্পরকে বয়কট করার প্রেক্ষাপটে বার্সেলোনা অলিম্পিক গেমস আয়োজন করা হয়। এটি ছিল একটি বড় পুনর্মিলন। 'চিরদিনের বন্ধু' এই স্লোগান অলিম্পিক চেতনার মৈত্রী ও শান্তির প্রতিপাদ্য প্রকাশের পাশাপাশি বিশ্বের মানুষের ইচ্ছাও প্রতিফলিত হয়েছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বের ধারণা গানে বলা হয়েছে। এটি অলিম্পিক গেমসের তাত্পর্যও বটে।
২০০৮ সালে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ২৯তম অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। ৭ বছর ধরে আবেদন ও অপেক্ষার পর চীন অবশেষে অলিম্পিক গেমস আয়োজনের সুযোগ লাভ করে। অলিম্পিক গেমস প্রথমবারের মতো বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশে আয়োজনের জন্য, চীন 'নতুন বেইজিং, নতুন অলিম্পিকের' শ্লোগান প্রস্তাব করে। বেইজিং উন্মুক্ত মনোভাব নিয়ে সব অংশগ্রহণকারী ও দর্শককে স্বাগত জানায়। এমন ধারণায় তৈরি হয় বেইজিং অলিম্পিক গেমসের গান- 'বেইজিং, তোমাকে স্বাগতম'। বন্ধুরা, এখন এই সুন্দর গানটি শুনবো।
বেইজিং অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণকারী ও দর্শকের সংখ্যা ইতিহাসে ছিল অনেক বেশি। এত লোক একসঙ্গে বড় অনুষ্ঠানে একত্রিত হওয়া নতুন যুগে 'গ্লোবাল ভিলেজ' ধারণার প্রতিফলন। বেইজিং অলিম্পিক গেমসের থিম সং 'তুমি ও আমি' খুব নরম সুর ও সহজ কথায় 'গ্লোবাল ভিলেজ' ও টেকসই উন্নয়নের ধারণা প্রকাশ করি। বন্ধুরা, এখন এই গানটি শুনি।
বন্ধুরা, এবার আমরা ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক গেমসের একটি গান 'হেই জুড' (Hey Jude) শুনবো। গানটি হচ্ছে জনপ্রিয় ব্যান্ড 'দ্য বিটল্সের' (The Beatles) একটি ক্লাসিক গান। যদিও গানটি অলিম্পিক গেমসের জন্য রচিত নয়, তবুও গানটি বিশ্বের অনেক লোককে সংকটাবস্থা থেকে বের হতে উত্সাহিত করেছে। এটি লন্ডন অলিম্পিক গেমসের শ্লোগান 'এক প্রজন্ম উত্সাহের' সঙ্গে মানানসই। বন্ধুরা, এখন গানটি শুনি।
২০১৬ সালে অলিম্পিক গেমস প্রথমবারের মতো দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত হয়। রিও অলিম্পিক গেমসের থিম সংয়ের নাম 'দেবতা রিও আসছেন'।
বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে আমরা একসঙ্গে ব্রাজিলের বৈশিষ্ট্যময় সাম্বা-শৈলীর থিম সং শুনবো। আশা করি অলিম্পিক গেমসের গানগুলো শুনে আপনি কিছুটা উত্সাহিত হবেন।
(তুহিনা/তৌহিদ/ওয়াং হাইমান)