চলতি বছরের শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে জার্মান উপাদান গত বছরের চেয়ে আরো বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে। বিখ্যাত জার্মান প্রযোজক জোনাস উইদেম্যান এবার এ উত্সবে দু'টি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নিয়ে উপস্থিত হন। একটি হলো 'মেনি হ্যাপি রিটার্নস', যা এবারের উত্সবের 'গোল্ডেন গোবলেট অ্যাওয়ার্ড'-র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত হয়। আরেকটি হলো 'সিস্টেম ক্রাশার'।
উল্লেখ্য, উইদেম্যান জার্মানির এক পত্রিকার উদ্যোগে ২০১৯ সালে সবচেয়ে প্রত্যাশিত দশ জন প্রযোজকের অন্যতম একজন হিসেবে নির্বাচিত হন। সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, এবার শাংহাই চলচ্চিত্র উত্সবের মাধ্যমে নিজের শিল্পকর্ম চীনা দর্শকদের কাছে বয়ে আনতে পেরে তিনি খুব খুশি।
তিনি বলেন, 'চলতি বছর 'সিস্টেম ক্রাশার' চলচ্চিত্র বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং 'সিলভার বিয়ার অ্যাওয়ার্ড' অর্জন করে। 'মেনি হ্যাপি রিটার্নস' চলচ্চিত্রটি এর আগে শুধুমাত্র জার্মানিতে প্রদর্শিত হয়, আর অন্য কোনো দেশে প্রদর্শিত হয়নি। এবার শাংহাইয়ে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শন হলো আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার।
সাক্ষাত্কারে উইদেম্যান বলেন, 'মেনি হ্যাপি রিটার্নস' চলচ্চিত্রে সাদা-কালো রং দিয়ে নাটকীয় এবং মুগ্ধকর একটি গল্প তুলে ধরা হয়। তিনি মনে করেন, এটি হলো উপভোগযোগ্য, সুগভীর বিষয়সম্পন্ন এবং বোধসম্পন্ন চলচ্চিত্র। তার ভাবনায় ভালো একটি চলচ্চিত্রে সামাজিক অবস্থা আবার পুনরাবির্ভুত হওয়া উচিত্ নয়, বরং এতে আরো গভীর বিষয় থাকতে হবে।
'মেনি হ্যাপি রিটার্নস' এবং 'সিস্টেম ক্রাশার' চলচ্চিত্রের সহ-প্রযোজক ইভোন্নে উইলি এবং ফ্রাউকে কোলবমুল্লে সেইদিনের প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের কাছে কোলবমুল্লে বলেন, 'আমি দর্শকদের মূল্যায়ন জানতে খুব আগ্রহী। আমাদের চলচ্চিত্র ব্যক্তিরা আসলেই দর্শকদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকেন। জার্মানি এবং ইউরোপের দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমার বেশ ধারণা আছে। তাই চলচ্চিত্র দেখার পর চীনা দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাই আমি।'
'ক্লেও-ইফ আই কুড টার্ন ব্যাক টাইম' চলচ্চিত্রটি 'ফোকাস জার্মানি' ইউনিটের শুরুতে প্রদর্শিত হয়। এ চলচ্চিত্রের ছন্দ বেশ দ্রুত। এর বিষয়বস্তু মজাদার এবং কল্পনাময়। এতে বার্লিন শহরের সাধারণ একটি ঘটনা আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়। চলচ্চিত্র পর্যালোচকরা একে 'শহরের একটি রূপকথা' বলে অভিহিত করেন।
এ চলচ্চিত্রের প্রধান অভিনেত্রী মারিন লোহসে সেইদিনের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, যারা এ চলচ্চিত্র দেখতে সিনেমা হলে প্রবেশ করবেন, তারা অবশ্যই মজাদার গল্প এবং কল্পনাময় দৃশ্যবিন্যাসে আকৃষ্ট হয়ে যাবেন। তিনি বলেন, 'এতে এমন একটি গল্প বলা হয় যে, একজন মেয়ে সবসময়ই আশেপাশের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য দুঃখ বয়ে আনার কারণে অতীত সময়ে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। চলচ্চিত্রে সে বর্তমানে বাস করে না, বরং ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বাস করতে বাধ্য হয়। এই প্রক্রিয়ায় সে অনেক প্রয়াত বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে দেখা করে। আমি বিশ্বাস করি, এ চলচ্চিত্র দর্শকদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করবে। তাদের কাছে মনে হবে, তারা একটি হাল্কা ও কল্পনাময় একটি চলচ্চিত্র উপভোগ করছেন।'
জার্মান ফিল্মসের মহাপরিচালক সিমোনে বাউম্যান বলেন, ভবিষ্যতে শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সাক্ষাত্কারে চলচ্চিত্রের সহযোগিতার ক্ষেত্রে জার্মানি ও চীনের সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'জার্মান ফিল্মস বা জার্মান চলচ্চিত্র ব্যক্তিরা চীনের সঙ্গে সহযোগিতা চালাতে খুব আগ্রহী। আমি বর্তমানে চীনের প্রকাশনা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কিছু সহযোগিতা চালিয়েছি। ভবিষ্যতে সহযোগিতার মাত্রা বাড়বে বলে আমি আশা করি। তা ছাড়া, চীন ও জার্মানির সহযোগিতায় চলচ্চিত্র নির্মাণের চুক্তি এখন চলছে। চলতি বছরে এসব চুক্তি স্বাক্ষর করা যাবে বলে আমি আশা করি।'
এবার শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নিতে পেরে সাক্ষাত্কারে বেশ কয়েকজন জার্মান চলচ্চিত্র ব্যক্তি তাদের আনন্দের কথা শেয়ার করেন। তারা মনে করেন, চীনের চলচ্চিত্র বাজারের দিন দিন ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। ইউরোপীয় বাজারের তুলনায় চীনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও আছে। ভবিষ্যতে চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতার প্রত্যাশা করছেন তারা। (লিলি/টুটুল)