১. চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্প্রতি জাপানের ওসাকায় চীন-আফ্রিকা শীর্ষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের বেইজিং শীর্ষ সম্মেলন চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করে। চীন আন্তরিকতার সঙ্গে আফ্রিকাকে দেওয়া সকল প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আফ্রিকায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাড়াতে চীন ভূমিকা রাখতে চায়। তা ছাড়া, আফ্রিকা চাইলে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে আফ্রিকায় ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা চালাতেও ইচ্ছুক চীন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় আফ্রিকার শান্তিরক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করবে চীন।
২. গত বুধবার চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে অবাধ বাণিজ্য এলাকার সংস্কার-প্রক্রিয়া, সংস্কারের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক বহুমুখী পদক্ষেপ, এবং শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বৈদেশিক বাণিজ্যিক পদ্ধতি তৈরিসম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। বৈঠকে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে বলা হয়, চীন সরকারের সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী, অবাধ বাণিজ্য এলাকায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ আরও উন্নত করা হবে। সংস্কার, উন্মুক্তকরণ, ও গুণগত মানের উন্নয়নের চাহিদা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক নীতিমালার মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে, এক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবধান দূর করতে হবে। অবাধ বাণিজ্য এলাকার উন্মুক্তকরণে সমর্থন দেওয়া হবে, বিশেষ করে পুঁজি বিনিয়োগ অনুমোদন ও বাজার অনুমোদনের প্রশাসনিক ক্ষমতা পৌর সরকার বা প্রাদেশিক সরকারের হাতে দেওয়া হবে। সমান ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার-পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি, বিভিন্ন সংরক্ষণব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে, যাতে অবাধ বাণিজ্য এলাকার আশেপাশের শহর ও অঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটতে পারে।
বৈঠকে আরও বলা হয়, আন্তঃদেশীয় অনলাইন বাণিজ্যের উন্নয়ন আমদানি-রফতানির গুণগত মান উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তঃদেশীয় অনলাইন বাণিজ্যের দ্রুত উন্নয়ন চীনের অভ্যন্তরীণ শিল্পের উন্নয়নে উত্সাহ যুগিয়েছে। ভবিষ্যতে অনলাইন বাণিজ্যের জন্য পরিষেবা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা, মাল পরিবহনব্যবস্থা স্থাপন করা, এবং নকল ও নিম্নমানের পণ্যের প্রসার প্রতিরোধ করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন মার্কিন কৃষিমন্ত্রী সোনি পুরডু। সম্প্রতি সিএনএন'কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে মার্কিন কৃষিপণ্যের দাম কমে গেছে। অনেক কৃষক ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, মার্কিন কৃষি সমিতির প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, গত বছর বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর থেকে মার্কিন কৃষিশিল্পের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এখন অনেক কৃষক নিজেদের ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম। যদিও মার্কিন সরকার সম্প্রতি কৃষকদের ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তারপরও, তাদের হারিয়ে-যাওয়া-বাজার তারা ফেরত পাচ্ছেন না। তারা আশা করেন, ট্রাম্প প্রশাসন তাড়াতাড়ি বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাবে।
৪. 'চীনের উন্নয়ন, বিশ্বের সুযোগ' শীর্ষক আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সেমিনার সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞান একাডেমি, বিখ্যাত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, এবং উচ্চ পর্যায়ের বিজ্ঞান ও গবেষণা সংস্থার বিশেষজ্ঞরা সেমিনারে অংশ নেন। তাঁরা চীনা উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ও এর ফলে বিশ্বের জন্য সৃষ্ট সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
চীনা সমাজ ও বিজ্ঞান একাডেমির উপ-প্রধান কাও স্যিয়াং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, চীন মাত্র কয়েক দশকে উন্নত দেশগুলোর কয়েক শত বছরের অর্জনকে ছাড়িয়ে গেছে। এটা বিস্ময়কর। বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বেশ কয়েক বছর ধরেই চীনের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ। চীন বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি।
তিনি বলেন, বিশ্ব বহু-মেরুকরণ, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন, সামাজিক তথ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। এক্ষেত্রে উন্নতিও হচ্ছে দ্রুত। বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ক্রমশ বাড়ছে। এ অবস্থায়, চীনের উন্মুক্ত দরজা কখনও বন্ধ হবে না।
তিনি আরও বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ উত্থাপিত হওয়ার পর বিগত ৬ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অনেক বেড়েছে। ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই প্রস্তাব গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
থাইল্যান্ডের জাতীয় গবেষণা পরিষদের মহাসচিব সিরিরুর্গ সংসিভিলাই বলেন, বিগত কয়েক দশকে বেইজিংয়ের উন্নয়ন ও সাফল্য দেখলেই চীনের পরিবর্তন উপলব্ধি করা যায়। চীনের উন্নয়ন বিশ্বের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
৫. ব্রিটেনে চীনা ব্যবসায়ী সমিতি সম্প্রতি লন্ডনে 'গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উদযাপন ও দ্বিতীয় চীন-ব্রিটেন আর্থ-বাণিজ্যিক ফোরাম' আয়োজন করে। দু'দেশের সরকার, শিল্প ও বাণিজ্য, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলের প্রায় ২৫০ জন প্রতিনিধি ফোরামে অংশ নেন। ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য ছিল: 'উন্মুক্ত, সহযোগিতা ও অভিন্ন উপভোগ'।
ফোরামের দু'টি আলোচ্য বিষয় ছিল: 'চীন-ব্রিটেন আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন পর্যালোচনা ও সহযোগিতার নতুন সুযোগ' এবং "চীনের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের নতুন ব্যবস্থা ও 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় চীন-ব্রিটেন সহযোগিতা"।
ব্রিটেনে চীনা রাষ্ট্রদূত লি স্যিয়াও মিং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, চীন-ব্রিটেন আর্থ-বাণিজ্যিক ফোরাম হল দু'দেশের শিল্প ও বাণিজ্য মহলের চিন্তাভাবনা বিনিময়, যোগাযোগ, সহযোগিতা জোরদার ও উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্রিটেনে অব্যাহতভাবে উন্নত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনে চীনা ব্যবসায়ী সমিতি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
৬. সম্প্রতি একটি চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান উগান্ডায় কয়েকটি শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করে। সেগুলোতে স্থানীয়দের জন্য হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। চীন-উগান্ডা আন্তর্জাতিক উত্পাদন শিল্পপার্ক সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।
চীনের কুয়াংচৌ তুংসুং জ্বালানিশক্তি গ্রুপ ৬২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে এই পার্ক নির্মাণ করে। এটা বর্তমান চীনের কোনো বেসরকারি সংস্থার বিদেশে বিনিয়োগকৃত সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
২০১৮ সালের অক্টোবরে শিল্পপার্কটি চালু হয়। কুয়াংচৌ তুংসুং গ্রুপ এরই মধ্যে উগান্ডার ৫২টি ফার্মের সঙ্গে সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তা ছাড়া, শিল্পপার্কে ইট কারখানা, ইস্পাত কারখানা ইত্যাদি বিভিন্ন কারখানাও নির্মিত হচ্ছে। এ শিল্পপার্ক স্থানীয় মানুষের জন্য ৩ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ৬০০ জন কর্মী পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সেখানে কাজও শুরু করেছে।
৩০ বছর বয়স্ক নাকুলা লিনিন্ট বলেন, "শিল্পপার্ক উগান্ডার উন্নয়নের জন্য অনুকূল। আমাদের উত্পাদিত পণ্যদ্রব্য উগান্ডার সবচেয়ে ভাল জিনিস। আমাদের ইট, রাসায়নিক সার উগান্ডায় খুব প্রয়োজনীয় জিনিস। আমি খুব গর্বিত। এ শিল্পপার্ক স্থানীয়দের জন্য বহু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।"
৭. চলতি বছরের মে মাসে পণ্য ও সেবা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি আগের মাসের তুলনায় ৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫৫০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
মন্ত্রণালয় জানায়, মে মাসে মার্কিন পণ্য ও সেবা রফতানির পরিমাণ আগের মাসের তুলনায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং আমদানি ৩.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মে মাসে পণ্যবাণিজ্যে ঘাটতি ৪৪০ কোটি ডলার বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬১০ কোটি ডলারে এবং সেবাবাণিজ্যে উদ্ধৃত্ত দাঁড়ায় ২০৬০ কোটি ডলারে ।
৮. ইউরোপীয় কমিশনকে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের সদস্য-ফি বাবদ সাড়ে পাঁচ কোটি ইউরো পরিশোধ করবে না রাশিয়া। কারণ, ওই দুই বছর দেশটিকে ইউরোপীয় কমিশনের সব সংস্থায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। রুশ সংসদের উচ্চকক্ষের আন্তর্জাতিক কমিটির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান সম্প্রতি এ তথ্য জানান।
৯. ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩৬১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ, যা ২০১৭ সালের চেয়ে ৬৭.৯৪ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি আঙ্কটাড (ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগে মন্দাভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। ২০১৭ সালের চেয়ে গত বছর বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৩ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ওই প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিনিয়োগ আসার শীর্ষে রয়েছে বিদ্যুত খাত। এ ছাড়া, খাদ্য, টেক্সটাইল, ব্যাংকিং, টেলিযোগাযোগ, চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী, বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও অন্যান্য খাত রয়েছে এ তালিকায়। আর বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চীন। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, হংকং ও ভারত।
(আলিমুল হক)