প্রসঙ্গ: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বৈঠক
  2019-07-03 15:39:57  cri

চীনের প্রেসিডেন্ট গতকাল (মঙ্গলবার) বেইজিংয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তায়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দু'নেতা জোর দিয়ে বলেন, চীন ও তুরস্কের উচিত পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা বাড়ানো এবং দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতার সম্পর্ককে গভীরতর করা।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'র আমন্ত্রণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গতকাল মঙ্গলবার চীন সফরে আসেন। দু'নেতা জুন মাসে এশিয়া মিথস্ক্রিয়া ও আস্থা পরিমাপ সম্মেলনের পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনকালে বৈঠক করেছিলেন। এরপর জি-টোয়েন্টির ওসাকা শীর্ষ সম্মেলনেও দু'নেতা অংশগ্রহণ করেন। সেখানেও তাদের দেখা হয়।

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ের গণমহাভবনের পূর্ব গেটে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে স্বাগত জানান। এরপর এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন,

"চীন ও তুরস্ক দু'টি নবোদিত বাজারদেশ এবং উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের উচিত পারস্পরিক কৌশলগত আস্থা বাড়ানো, কৌশলগত সমন্বয় জোরদার করা, জাতিসংঘকেন্দ্রিক ও আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করা, বহুপক্ষবাদ ও আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষা করা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকেন্দ্রিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষা করা, এবং দু'দেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিন্ন কল্যাণে কাজ করা।"

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, দু'দেশের উচিত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সন্ত্রাসবাদ দমণবিষয়ক নিরাপত্তা সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জোর দিয়ে বলেন, তুরস্কে চীনের বিরুদ্ধে কোনো শক্তির বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমকে অনুমোদন দেবে না তার দেশ। সি চিন পিং তুরস্কের এই অবস্থানের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, তুরস্কের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনবিষয়ক সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক চীন। তিনি আরও বলেন, দু'দেশের উচিত কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার করা এবং কার্যকর সহযোগিতা বাড়ানো। তুরস্ক হল 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তুরস্কের সঙ্গে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করতে এবং ইন্টারমিডিয়েট করিডোর-এর মাধ্যমে নিজেকে সংযুক্ত করতে ইচ্ছুক চীন। পাশাপাশি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানিসম্পদ, অবকাঠামো ব্যবস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে পারস্পরিক সহযোগিতাকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে চীন।

সি চিন পিং বলেন, "আমরা ছোট ও মাঝারি আকারের প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা চালিয়ে যাব, যাতে আরও শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও মানুষ চীন-তুরস্ক সহযোগিতার বাস্তব সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। আমাদেরকে অবশ্যই সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে হবে, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি করতে হবে, এবং চীন-তুরস্ক বন্ধুত্বের ভিত্তিতে উন্নত করতে হবে।"

প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, উভয় পক্ষের উচিত যৌথভাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার, সহযোগিতা, ও উইন-উইন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করা। আঞ্চলিক বিষয়গুলিতে যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রেখে যৌথভাবে প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করতে হবে এবং আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, এবং উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে।

এসময় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন

"মিলেনিয়াম সিল্ক রোডের মাধ্যমে সংযুক্ত তুরস্ক ও চীনের বন্ধুত্বের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আজকে সে সম্পর্ক আর‌ও শক্তিশালী হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, তুরস্ক ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরও উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। তুরস্ক দৃঢ়ভাবে 'এক-চীননীতি' মেনে চলে। আমার বর্তমান সফর এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন আন্তর্জাতিক শান্তি ও উন্নয়নের পথে চ্যালেঞ্জ ক্রমশ বাড়ছে। চীন-তুরস্ক সম্পর্কের উন্নয়ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।"

এরদোয়ান আরও বলেন, এটি একটি সত্য যে, চীনের সিন চিয়াং স্বায়ত্বশাসিত এলাকার সকল জাতির মানুষ চীনের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুবিধা নিয়ে আনন্দের সাথে বাস করছে। তুরস্ক দৃঢ়ভাবে চরমপন্থার বিরোধিতা করে। চীনের সঙ্গে পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা উন্নয়ন ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক তুরস্ক। তুরস্ক ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

তিনি আশা করেন, তাঁর দেশের সঙ্গে চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' কাঠামোতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থ, জ্বালানিসম্পদ, গাড়ি উত্পাদন, অবকাঠামো, পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল যোগাযোগ, স্মার্ট শহরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করবে এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পারস্পরিক আদান-প্রদান বাড়াবে। (জিনিয়া/আলিম/আকাশ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040