চিয়াং সির কান চৌ শহরের ইউ তু জেলা ও রেড আর্মি
  2019-06-26 09:28:27  cri

চীনের চিয়াং সি প্রদেশের কান চৌ শহরের ইউ তু জেলা। এই জেলা চীনা রেড আর্মির লং মার্চের সূচনাস্থল। ৮৫ বছর আগে, ১৯৩৪ সালের ১৭-২১ অক্টোবর, রেড আর্মির ৮৬ হাজার সৈন্য স্থানীয়  মানুষের সাহায্যে  ইউ তু নদী অতিক্রম করে শুরু করেন বিশ্ববিখ্যাত ২৫ হাজার  মাইলের লং মার্চ। ৮৫ বছর চলে গেছে। এ সূচনাস্থলে এখনও শুনতে পাওয়া যায় রেড আর্মিসম্পর্কিত নানা গল্প। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ইউ তু জেলায় রেড আর্মির গল্প শোনাব।
 
ইউ তু জেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ইউ তু নদী। ৮৫ বছর আগে, রেড মার্কির প্রথম দল এখানে আসে পর্যবেক্ষণ করতে। তখনকার নদীর প্রস্থ প্রায় ৬০০ মিটার এবং গভীরতা ১-৩ মিটার। প্রবাহিত পানির গতি প্রতি সেকেন্ডে ১.৩ মিটার।
রেড আর্মি  লং মার্চ সূচনাস্থল স্মরণ যাদুঘরে রাখা আছে নদী অতিক্রমের একটি পরিকল্পনাপত্র। এখানে লেখা আছে নদী অতিক্রম করার আগে রেড আর্মি কী কী প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এক দল পর্যবেক্ষক সৈনিক নদীর স্রোতের গতি প্রথমে পরীক্ষা করে। তারপর উপযুক্ত একটি স্থান বাছাই করে। এ স্থান দিয়ে গোটা বাহিনী নদী অতিক্রম করে।
ইউ তু জেলার পূর্ব দিকে নদীতে ভাসমান আছে কিছু পন্টুন, যা ইতিহাসের প্রতীক। ১৯৩৪ সালের ১৭ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত, ৮৬ হাজার রেড আর্মির সৈনিক এখান থেকে ইউ তু নদী অতিক্রম করে। এ জায়গা থেকে দু'কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি হাক্কা পুরাতন বাড়ি। লিউ কুয়াং ভেই এ বাড়ির মালিক। তিনি জানান, ছোট বেলা থেকে বাবার কাছ থেকে দাদার বাবা লিউ চান থাংয়ের গল্প বহুবার শুনেছেন। ১৯৩৪ সালের ১৭ অক্টোবর তার বাবার দাদা রেড আর্মিকে পন্টুন তৈরিতে সাহায্য করতে নিজের বাড়ির ২০টি দরজা দান করেন। পরে এ দরজা আর ফিরিয়ে নেননি তিনি। এসব দরজা নদীতে পন্টুন আকারে এখনও ভাসছে। এ দরজাগুলো রেড আর্মির লাং মার্চের স্মৃতি।  তখন রেড আর্মিকে সাহায্য করতে স্থানীয় মানুষ সবকিছু দান করে। দরজাসহ বাড়িতে সব কাঠ বের করেন তারা। এমনকি, কেউ কেউ শবাধার পর্যন্ত দান করেন। এ প্রসঙ্গে রেড মার্কিন লং মার্চ সূচনাস্থল স্মরণ যাদুঘরের গাইড সিয়াও থিং থিং বলেন, তখন চেন নামক এক ব্যক্তি নিজের শবাধারের জন্য রাখা কাঠ প্রদান করতে চাইলে সৈনিকরা তা গ্রহণ করেননি। তখন ওই ব্যক্তি সৈনিকদের বলেন: "আপনারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করছেন। আর আমি তো শুধু কয়েকটি কাঠ দিচ্ছি! এ কিছুই না।" অন্য একজন কৃষক নিজের কুমড়ার শেড সরিয়ে নেন এবং সব কাঠ দান করেন।
এখন শান্ত এ ইউ তু নদী ৮৫ বছর আগে অশান্ত ছিল। ওই রাতে রেড আর্মির সৈনিকদের বিদায় দিতে লোকন মশাল নিয়ে আসেন নদীর তীরে। এর আগে, পন্টুন নির্মাণ ছিল কঠিন একটি কাজ। তখনকার কুওমিনতাং পার্টি প্রতিদিন পরিদর্শন বিমান পাঠিয়ে এতদাঞ্চল পরিদর্শন করতো। তাই শুধু রাতে পন্টুন নির্মাণ করা হতো। নদী অতিক্রমের ৮টি স্থান বাছাই করা হয় এবং এর মধ্যে ৫টি পন্টুন দরকার। ইউ তু নদীর প্রস্থ ৬০০মিটার। কুওমিনতাংয়ের বিমানের নজর এড়ানোর জন্য সকালে এ সব পন্টুন সরিয়ে নেওয়া হতো। রেড আর্মির লং মার্চ সূচনাস্থল স্মরণ যাদুঘরের উপপ্রধান চাং সিয়াও পিং বলেন, তখন প্রতিদিন বিকেল ৫টা শুরু হতো নির্মাণকাজ এবং রাতে রেড আর্মির সৈনিকরা দলে দলে নদী অতিক্রম করতো। পরের দিন সকালে এ পন্টুন সরিয়ে নেওয়া হতো এবং কাঠগুলো পাশের বনে লুকিয়ে রাখা হতো। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্মাণ ও সরিয়ে নেয়ার এ প্রক্রিয়া ১৫ বারের মতো চলেছে।
 ইউ তু নদীর পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলেন ৭০ বছর বয়সী লি মিং রং। তিনি তার বাবার গল্প বলেন। পন্টুন ব্যবহারের পাশাপাশি, তার বাবা ও অন্য ৮০০ জন জেলে প্রতিদিন রাতে নৌকা দিয়ে রেড  আর্মির সৈনিকদে অন্য তীরে পৌঁছে দিতেন। তিনি বলেন, তখন তার দাদা ও বাবার ২০টির বেশি নৌকা ছিল। কয়েকজন রেড আর্মির সৈনিক তাদের কাছে এসে নিজেদের পরিচয় দেয় এবং তাদের সাহায্য চায়। তার বাবা ও দাদা রাজি হন এবং দু'দিনের মধ্যে রাতের সময়ে ৬ হাজার সৈনিককে নদী অতিক্রমে সাহায্য করেন।
খাবার ও কাঠ দান ছাড়া, ইউ তু জেলার ১৬ হাজার মানুষ সক্রিয়ভাবে রেড আর্মিতে যোগ দেন এবং তাদের মধ্যে অনেকে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি।  লিন লি পিং একজন রেড আর্মি সৈনিকের বংশধর। তার দাদা তখনকার রেড আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং আর ফিরে আসেনি।
ইউ তু জনগণ রেড আর্মিকে সাহায্য করেছে, কারণ তাদের মতে রেড আর্মি জনগণের আর্মি। কমিউনিষ্ট পার্টি জনগণের জন্য শুরু করে বিপ্লব এবং তারা জনগণের বাহিনী।
৮৫ বছর পরে, ইউ তু জেলার চেহারা পুরোপুরি বদলে গেছে। নদীর উপর বেশ কয়েকটি বড় ও আধুনিক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষ আর নৌকা দিয়ে নদী অতিক্রম করে না। (শিশির/আলিম/রুবি)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040