১. বিগত ১৮ বছরে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা আর্থ-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যে-সাফল্য অর্জন করেছে, তা উল্লেখযোগ্য। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং সম্প্রতি বেইজিংয়ে নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন।
মুখপাত্র বলেন, পরিসংখ্যান অনুসারে গত বছর চীন শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে ২৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৭.২ শতাংশ বেশি।
তিনি আরও বলেন, গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্যদেশগুলোতে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এ ছাড়া, শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিবহন সুবিধা চুক্তি কার্যকর হয়েছে; চীন-কিরগিজস্তান-ইউক্রেন সড়ক চালু হয়েছে; চীন-মধ্য এশিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন, চীন-কাজাখস্তান তেলের লাইন, ও চীন-রাশিয়া তেল পাইপলাইন চালু হয়েছে।
২. 'দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য মেলা, ২০১৯' সম্প্রতি চীনের ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিংয়ে শুরু হয়।
মিয়ানমারের বাণিজ্যমন্ত্রী উ থান্ট মিন্ট, কম্পুচিয়ার বাণিজ্যসচিব ছুওন দারা, এবং ভিয়েতনাম, লাওস, মালয়েশিয়া, থাইল্যাণ্ড, মিয়ানমার ও ফিলিপিন্সসহ বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এবারের মেলায় ১৭টি প্রদর্শনী হল ও ৭৫০০টি বুথ রয়েছে। ৭৪টি দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ২০টি দেশের প্রদেশ, শহর ও জেলার ৩৩৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিচ্ছে। মেলা চলাকালে 'তৃতীয় চীন-দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য ফোরাম', 'সপ্তম চীন-দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার থিঙ্ক ট্যাংক ফোরাম', 'দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার শিক্ষা ফোরাম' এবং 'দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিল্প সপ্তাহ' ইত্যাদি শাখা-কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
৩. সম্প্রতি 'সাফা সুনাওলো নেপাল'-এর মহাসচিব রাকেশ হামাল বলেছেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ নেপালের জন্যও উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এই যুদ্ধ শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না, নেপালসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বা পড়ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য এই বিরোধ একটি বিপর্যয়।
হামাল বলেন, চীন সবমসয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কনভেনশন মেনে চলে এবং নিজের অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একতরফাবাদ নীতি অনুসরণ করে শুধু নিজের স্বার্থে। আর চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিরই ফল।
তিনি বলেন, নেপালের মতো দুর্বল অর্থনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। এখনও চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের কুফল নেপালের ওপর পড়েনি; তবে ভবিষ্যতে নেপালের অর্থনীতির ওপরও এই যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
৪. ২০১৮ সালে বিশ্বের জ্বালানি খাতে মোট পুঁজি বিনিয়োগ হয় ১.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। আর এই খাতে একক দেশ হিসেবে চীনের বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি ছিল। ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার সদর দফতর থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত 'বিশ্ব জ্বালানি পুঁজি বিনিয়োগ, ২০১৯' শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বের জ্বালানি খাতে চীনের পুঁজি বিনিয়োগের মোট পরিমাণ ছিল ৩৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই বছর যুক্তরাষ্ট্র এই খাতে বিনিয়োগ করে ৩৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৭ সালের বিনিয়োগের চেয়ে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার বেশি।
৫. 'প্রতিবন্ধীদের অধিকার সনদ' স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর দ্বাদশ অধিবেশন জাতিসংঘ সদরদফতরে শুরু হয় ১১ জুন; চলে ১৩ জুন পর্যন্ত। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে প্রতিবন্ধীদের কীভাবে আরও সাহায্য করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। ১১ জুন 'দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের দারিদ্র্যবিমোচন' শীর্ষক সম্মেলনে জাতিসংঘের 'এজেন্ডা ২০৩০' শীর্ষক টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা হয়। ব্রিটেন, ইতালি, গ্রিস, কেনিয়া, ভারতসহ ৫০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন এনজিওর শতাধিক প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘে নিযু্ক্ত চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি মা চাও সু সম্মেলনে বলেন, জাতিসংঘের 'এজেন্ডা ২০৩০' শীর্ষক টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যবিমোচন। আর প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করে তাদেরকে দারিদ্র্যমুক্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যু। সব পক্ষের উচিত এ লক্ষ্য বাস্তাবায়নের জন্য চেষ্টা করা।
তিনি সম্মেলনে দারিদ্র্যবিমোচন, বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে চীনের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ও সেসবের সুফল সবার সামনে তুলে ধরেন। তিনি জানান, চীনে ৮.৫ কোটি প্রতিবন্ধী আছে। অন্যভাবে বললে, একক দেশ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী আছে চীনে। প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে চীন সরকার সর্বোচ্চ মাত্রায় সতর্ক। তাদের ভালোমন্দের ওপর খুব গুরুত্ব দেয় চীন। দেশের দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচির অন্যতম অংশ হিসেবে 'প্রতিবন্ধীদের দারিদ্র্যমুক্তি'কে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের সমস্যা সমাধানে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা, যেমন: দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সারা দেশব্যাপী। ২০১৬ সাল থেকে ২ কোটির বেশি প্রতিবন্ধীকে ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের প্রচেষ্টায় ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীনের দরিদ্র প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৬০ লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখে।
তিনি আরও জানান, দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের দারিদ্র্যমুক্ত করা চীনের দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণনীতি গ্রহণের পর বিগত ৪০ বছরে, চীনের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৭৭ কোটি থেকে কমে বর্তমানে এক কোটি ৬৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। ফলে বৈশ্বিক দারিদ্র্যবিমোচন খাতে চীনের অবদান ৪০ শতাংশেরও বেশি। চীনে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ কায়েমের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে গ্রাম থেকে দারিদ্র্য চিরতরে নির্মূল হবে। আর সেটি হবে দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
৬. চীন ২০১৮ সালে ১২ লাখ ইলেক্ট্রিক গাড়ি বিক্রি করেছে, যা বিশ্বের মোটি বিক্রিত ইলেক্ট্রিক গাড়ির ৫৬ শতাংশ। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)-র কর্মকর্তা নিল আটকিনসন সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পরিবেশদূষণ কমিয়ে আনতে চীন সাম্প্রতিক কালে নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ির ওপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষেত্রে চীন যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। বর্তমানে চীনে প্রায় ৫ লাখ বিদ্যুতচালিত বাস আছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুতচালিত বাসের সংখ্যা কয়েক শত মাত্র।
৭. এদিকে, চিলির পরিবহনমন্ত্রী গ্লোরিয়া হাট বলেছেন, চীনের বিদ্যুতচালিত গাড়ি ব্যবহারের খরচ কম এবং এগুলো সান্তিয়াগোতে ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করছে। তিনি বলেন, ডিজেলচালিত গাড়ির চেয়ে এসব গাড়ির খরচ ৭৬ শতাংশ কম।
তিনি জানান, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সান্তিয়াগোতে চীন থেকে ২০৩টি বিদ্যুতচালিত বাস এসেছে এবং ইতোমধ্যেই গাড়িগুলো ২৭ লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। শিগগিরি আরও বাস আমদানি করা হবে এবং সান্তিয়াগোর রাস্তায় মোট ৪১১টি বিদ্যুতচালিত চীনা বাস চলাচল করবে।
৮. মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশি মুদ্রার মজুত বেড়েছে। মে মাসে দেশটির বিদেশি মুদ্রার মজুত ২৪১ কোটি মার্কিন ডলার বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫৬১ কোটি মার্কিন ডলারে। ব্যাংক অব কোরিয়া সম্প্রতি এ তথ্য জানায়
৯. বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে পাঁচ বছর মুনাফা দেখানোর পর এবছর ফের লোকসানে চলে এসেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, এপ্রিল পর্যন্ত চলতি অর্থবছর নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকায় এবং আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নিট লোকসান ৫ হাজার ৬৭০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলো নিট ২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল। তবে পরবর্তী পাঁচ বছরে সম্মিলিতভাবে মুনাফা অর্জন করে সংস্থাগুলো। এর মধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকায় পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বড় অংকের মুনাফা করে। তা ছাড়া টেলিকমিউনিকেশন খাতেও বড় মুনাফা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ৪৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একটি প্রতিষ্ঠান 'লাভ-ক্ষতি সমান সমান' এবং ১৩টি প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে। ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মোট লোকসানের পরিমাণ ১১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের লোকসান ৯৩১০ কোটি টাকা, যা ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মোট লোকসানের প্রায় ৮১.৭০ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, বিটিআরসি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, রাজউক, পল্লী বিদ্যুত্সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান লাভজনক হওয়ায়, সার্বিকভাবে নিট লোকসান কম হয়েছে। অবশ্য লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট লাভ আগের চেয়ে কমেছে।
(আলিমুল হক)