৫ জুন পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে বাংলাদেশের মানুষ। পারিবারিক বন্ধন এবং সামাজিক সম্প্রীতি দৃঢ় করার এক অনন্য উপলক্ষ্য ঈদ। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চল থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান লাখ লাখ মানুষ। তবে প্রতিবছর ঈদে সবার ভাবনার বিষয় যাত্রাপথে দুঃসহ ভোগান্তি। কি ট্রেন, কি বাস, কি লঞ্চ- বিগত বছরগুলোতে অশেষ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ঘরমুখো মানুষজনকে। তবে এবারের সার্বিক পরিস্থিতি ছিল অনেকটাই ভিন্ন। সরকারে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় এবার ঈদযাত্রা ও ঈদ ছুটি শেষে রাজধানীতে ফেরা ছিল অনেকটাই স্বস্তিদায়ক।
মাঝখানে একদিন কর্মদিবস বাদ দিলে এবার ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটি ছিল। দীর্ঘ সময় পাওয়ায় অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে দেশের বাড়ি গেছেন রাজধানীবাসী। তবে ট্রেনের টিকিট পেতে বরাবরের মতোই যুদ্ধ করতে হয়েছে যাত্রীদের। আর ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের মানুষ ভুগেছেন শিডিউল বিপর্যয়ে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন শিডিউল বিপর্যয়ের জন্য যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাইলেও তা অব্যাহ ছিল ঈদ পর্যন্ত। তবে, উত্তরবঙ্গের তিনটি ট্রেন ছাড়া বাকি প্রায় অর্ধশত ট্রেন খানিকটা বিলম্ব হলেও মোটামুটি সময় মতো চলাচল করেছে। ঈদে রাজধানীমুখী ফিরতি যাত্রায় ততটা ভোগান্তি ছিল না। কিছু কিছু ট্রেনে দু-এক ঘন্টা করে বিলম্ব হয়েছে। তারপরেও যাত্রীরা খুশি প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করে কম ভোগান্তিতে কর্মস্থলে ফিরতে পেরে।
অন্য বছরগুলোতে সড়ক পথে ঈদযাত্রা ঘরমুখো মানুষের জন্য একরকম দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে। প্রথমে কাঙ্খিত দিনের টিকিট না পাওয়া ও বাড়তি ভাড়ার বিড়ম্বনা। আর বিলম্ব যাত্রার পর ঘন্টার পর ঘন্টা মহাসড়কে যানজট ও ফেরিপারারে আটকে থাকাটা একরকম নিয়মে পরিণত হয়েছিল। এবারও বাড়তি ভাড়া আর বিলম্বের অভিযোগ ছিল বাসযাত্রায়, তবে যাত্রাপথের দৃশ্যপট অনেকটাই বদলেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কয়েকটি মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা; মেঘনা-গোমতি নতুন সেতু চালু; ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাক-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অনকগুলো আন্ডারপাস, ওভারপাস চালু- সব মিলিয়ে এবার ঈদযাত্রা ছিল অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। কোনো কোনো মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি হলেও যানজট ছিল না। তবে ঈদের ঠিক আগের দিন মহাসড়ক এবং ফেরিঘাটে যানজট এবং বিলম্বের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য বৃষ্টির বাগড়াও এতে কিছুটা ভূমিকা রেখেছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, এবার বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা হয়েছে। সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে তার সুফল এবার দেশবাসী পেয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। তবে, সরকারের তরফে অনেক সতর্কতার পরও ঈদের সময়কালে মহাসড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণ। অন্য বছরগুলোর তুলনায় তা তুলনামূলক কম হলেও এমন মৃত্যু কাঙ্খিত নয়।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী স্বীকার করেছেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো করা গেলেও সড়কে এখনো শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। সামনের দিনগুলোতে গোটা পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা চ্যালেঞ্জ বলে স্বীকার করেন ওবায়দুল কাদের।
এদিকে, লঞ্চযাত্রায়ও এবার কর্তৃপক্ষ বরাবরের মতো উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, অতিরিক্ত যাত্রীবহন আর বাড়তি ভাড়ার কিছু অভিযোগ বরাবরের মতোই ছিল। বৈরি আবহাওয়ায় দু'একবার ঢাকা থেকে নৌযাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলেও ঈদযাত্রায় খুব বেশি বিঘ্ন ঘটাতে পারেনি তা। নৌ পরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী স্বীকার করেছেন তারা শতভাগ সফল না হলেও এবার নৌপথে ঈদযাত্রা অন্যান্য বারের চেয়ে স্বস্তিদায়ক ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, তার সরকার সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফল দেশের মানুষ পেতে শুরু করেছে।
ট্রেন, বাস, লঞ্চ তিনটি ক্ষেত্রেই কিছুটা সমস্যা থাকলেও অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ঈদযাত্রা ও ফিরতি যাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে এটা স্বীকার করতেই হবে। এ জন্য সরকার ধন্যবাদ পেতেই পারে। ভবিষ্যতেও এ ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা দেশবাসীর।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।