রোববারের আলাপন-190602

  2019-06-10 09:09:33  cri

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি শিয়েনান আকাশ।

বন্ধুরা, ১ জুন হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। আমরা বিশ্বের সব শিশুদের সুস্থ, সুন্দর এবং সুখী জীবন কামনা করছি। চীনা ভাষায় আমরা শিশুদেরকে মাঝে মাঝে ডাকি, "xiao pengyou" অর্থাত্, ছোট বন্ধু । আমরা কামনা করি সব 'xiao pengyou' প্রতিদিন সুস্থ, সুন্দরভাবে অগ্রগতি অর্জন করবে এবং মনের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাবে।

বন্ধুরা, চীনে এদিন দেশব্যাপী এ দিবস উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে কি এদিন এ দিবসটি উদযাপন করা হয় নাকি টুটুল ভাই?

টুটুল:....আকাশ ভাই, এ দিবসটি আসলে কিভাবে শুরু হয়?

আকাশ: বন্ধুরা, আন্তর্জাতিক শিশু দিবস প্রতি বছরের ১ জুন পালন করা হয়। তা পালন করা হয় মূলত ১৯৪২ সালে লিডিস গণহত্যাকে স্মরণ ও শোক প্রকাশ করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে নিহত শিশুদের স্মরণ, শিশুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিরোধিতা ও শিশুর অধিকার রক্ষা করার জন্য।

টুটুল: বন্ধুরা, লিডিস গণহত্যা ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। ১৯৪২ সালের ১০ জুন, চেক প্রজাতন্ত্রে গেরিলারা হিটলারের কমান্ডিং অফিসার হেনরিখ হিমলারকে হত্যা করে। তারপর গ্রামটির অধিবাসীরা গেরিলাদের সাহায্য করে। এরপর জার্মান নাৎসি বাহিনী প্রতিশোধ নেয়। তারা লিডিস গ্রামের সব বাড়িতে আগুন দেয়। তারা গ্রামের ১৭৩ জন পুরুষকে হত্যা করে। এছাড়া, নারীদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। জার্মান সেনারা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ৪৪জন শিশুকে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগে হত্যা করে। এই হামলায় জার্মান নাত্সি বাহিনীর হাতে ৩৪০ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় পুরো চেক প্রজাতন্ত্র জার্মানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারপর থেকে এই ঘটনা স্মরণে আন্তর্জাতিক শিশু দিবস পালন করা হয়।

আকাশ: আসলে এ অনুষ্ঠানের আগে আমিও আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের আসল ঘটনা জানতাম না। এই ঘটনা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, শিশুদেরকে ও বিশ্বকে আরো ভালোবাসা দিতে হবে। একমাত্র ভালোবাসাই পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে, তাইনা?

টুটুল:...

সংগীত

আকাশ: বন্ধুরা, আমি গত মে মাসে চীনের তিব্বতে গিয়েছিলাম। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আমার লেখার মাধ্যমে একসাথে তিব্বতের কাং থুও ছোট শহরের নং-১ প্রাথমিক স্কুল ঘুরে দেখবো, কেমন?

টুটুল:........ বন্ধুরা, আপনারা এই শব্দের মাধ্যমে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের তিব্বতি ভাষার ক্লাসের শব্দ শুনছেন। তিব্বতের কাং থুও ছোট শহরের নং-১ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ করা হয় ২০১৭ সালে। এতে মোট ৮টি ক্লাস আছে, শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যা ২৭৩ জন, শিক্ষক ১৫জন।

স্কুলের প্রিন্সিপাল চেন চাং চুন সাংবাদিককে বলেন, চীন সরকার তিব্বতের শিক্ষার উপর ভীষণ গুরুত্ব দেয় । তিনি বলেন, দেশের চিয়াংসু প্রদেশ আমাদের নতুন স্কুল নির্মাণে সহায়তা প্রদান করেছে। এতে মোট ২ কোটি ৭৮ লাখ ইউয়ান সহায়তা দিয়েছে প্রদেশটি।

তিনি আরো জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের ছেলেমেয়েদের জন্য দেশ বিশেষ করে 'সান পাও' নীতি পালন করে। অর্থাত্, 'খাওয়া, বাসস্থান এবং লেখাপড়া-সংক্রান্ত ফি' সব দেশ গ্রহণ করবে। জনাব চেন বলেন, খাওয়া, বাসস্থান এবং লেখাপড়ায় কৃষক ও পশুপালকদের ছেলেমেয়েদের কোনো খরচ করতে হবে না। এ ছাড়া, তাদের ছেলেমেয়ের পোশাক এবং জুতাও স্কুল দেবে।"

প্রিন্সিপাল চেন সাংবাদিককে নিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্যান্টিনে যান। সেখানে চেন সাহেব বলেন, এখানে নাস্তায়, মাখন চা, দুধ চা এবং চা পাওয়া যায়। প্রধান খাদ্যের মধ্যে mantou, miankuai ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। অনেক রকম খাবার আছে। লাঞ্চে প্রত্যেক শিক্ষার্থী দু'টি মাংসের ডিস, একটি সবজির ডিস, একটি সুপ খেতে পারে। তাছাড়া রাতের খাবারে প্রত্যেক একটি মাংসের ডিস, একটি সবজির ডিস এবং একটি সুপ খেতে পারে।"

স্কুলের সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষক জানান, এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের ইচ্ছামতো খেতে পারে। তিনি বলেন, যদি খাবার শেষ হয়ে যায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা আবার নিতে পারে। তারা এখানে পেট ভরে খেতে পারে।

তিনি আরো জানান, স্কুলে খাবারের নমুনা সংরক্ষণের নীতি আছে। যাতে প্রতিবার শিক্ষার্থীদের খাবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। তিনি বলেন, চেকিং করার জন্য প্রতিটি খাবারের নমুনা তিনদিন রাখা হয়।

স্কুলে 'সান পাও' নীতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য 'পুষ্টি উন্নতকরণ প্রোগ্রাম'ও আছে। তিনি বলেন, 'প্রতিদিন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ৪ ইউয়ান 'পুষ্টি উন্নতকরণ প্রোগ্রাম' আছে। প্রতিদিন সকালে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি ডিম নিশ্চিত করতে হবে, বিকালে লাঞ্চের পরে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য দুধ এবং ফল নিশ্চিত করতে হবে। ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কলা, নাশপাতি, কমলা ইত্যাদি।

প্রিন্সিপাল চেন জানান, কাং থুও ছোট শহরে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হার ৯৯.৮ শতাংশ। গরিব ছেলেমেয়ের তারা বিশেষভাবে সহায়তা করে। "আমরা শিক্ষকরা গরিব ছেলেমেয়েদের বাসায় যাই, তাদের পরিস্থিতি ও পরিবারের সমস্যা জানি এবং তাদেরকে আমরা সাহায্য করি। এছাড়া আমরা ক্লাস শেষে তাদের জন্য বিশেষ টিউটরশিপ প্রদান করি। আমরা চেষ্টা করি যেন গরিব ছেলেমেয়েরা শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্যতা দূর করতে পারে"।

তিনি জানান, স্কুলে এখন চীনা ভাষা, তিব্বতি ভাষা, ইংরেজি ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, আইন, সঙ্গীত, শারীরিক শিক্ষা ইত্যাদি ক্লাস আছে। স্কুলের শিক্ষকদের সক্ষমতা উন্নয়নের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা আছে। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে স্কুলে সেমিনার আয়োজন করা হয়। এতে শেখানোর দক্ষতা এবং কনটেন্টস নিয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা এবং মত বিনিময় করা হয়।

শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা (ডর্মিটরি) নিয়ে তিনি সাংবাদিককে বলেন, একটি রুমে ৮টি বেড আছে। এখানে সুন্দরভাবে বসবাস করার সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। শিক্ষক এখানকার শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি ও মনের অবস্থা নিয়ে মাঝেমাঝে তাদের সাথে মত-বিনিময় করেন ও তাদেরকে সাহায্য করেন।

আকাশ: স্কুলটি সফরের পরে, আমার মনে অনেক অনুভূতি তৈরি হয়েছে। আমি আশা করি এবং কামনা করি, আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে সুন্দর সময় কাটাতে পারবে এবং প্রতিদিন মনের স্বপ্নের দিকে চেষ্টা চালিয়ে অগ্রগতি অর্জন করবে। টুটুল ভাই, তুমি কি বলো?

টুটুল:....

টুটুল: বন্ধুরা, আজকের মূল অনুষ্ঠান শেষে আমরা বিশ্বের সব শিশুদের একটি গান উপহার দিতে চাই। তা চীনের রকব্যান্ড মে-ডে'র একটি গান। গানের নাম হচ্ছে 'ই ইয়া ইয়া' । আবারো আমরা সকল শিশুর সুস্থ, সুন্দর ও সুখী জীবন কামনা করছি।

আকাশ:

ই ইয়া ইয়া, ই ইয়া ইয়া,

বেবি বলছে, ই ইয়া ইয়া,

তুমি চিন্তা করবে না, তুমি তাড়াতাড়ি বড় হবে,

তাড়াতাড়ি তুমি আম্মুকে ডাকতে পারবে।

খুব তাড়াতাড়ি তোমার এক বছর বয়স হয়ে গেছে।

তুমি এখনও গিটার বাজাতে পারো না।

আমার বিশ্বাস, এক দিন তুমি উচ্চস্বরে গাইবে,

"বাবা, তুমি অতি মহৎ!"

তোমার হাসি হলো জাদু ,

তোমার অশ্রু আমার ভয়,

তুমি কষ্ট পেতে পারো, তুমি অসুখী হতে পারো,

কিন্তু আমি এখানে তোমার পাশে,

ভয় করবে না,

ই ইয়া ইয়া, ই ইয়া ইয়া,

বেবি বলছে, ই ইয়া ইয়া,

তুমি তাড়াতাড় বড় হবে, এটাও আমার ভয়,

তুমি তাড়াতাড়ি বাবাকে খুঁজবে না।

তুমি তোমার প্রেমিকার প্রেমে পড়বে

তুমি মজার করবে, তুমি হারাবে

ভবিষ্যতের রাস্তা, দূরে এবং লম্বা

হৃদয় ভঙ্গকর জিনিসকে দূরে যেতে দাও

ভবিষ্যতের রাস্তা, দূরে এবং লম্বা

কিন্তু আমি এখানে তোমার পাশে,

ভয় করবে না।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040