চীন-রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য, 'চীন ও রাশিয়া: নতুন যুগে সহযোগিতা' পঞ্চম চীন-রাশিয়া থিংক ট্যাঙ্ক উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম ২৯, ৩০ মে মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রুশ উপমন্ত্রী ম্যাক্সিম আকিমভ বলেন, ফোরামটি সেন্ট পিটার্সবুর্গে ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক ফোরামের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত হলো। চীন সবসময় ফোরামটিকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। চীনের সঙ্গে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কের জোরদার উন্নয়ন করা রাশিয়ার কূটনীতির প্রধান দিক। চীন-রাশিয়া সুপ্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও আঞ্চলিক উন্নয়ন রক্ষায় উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী ন্যায্য, ব্যাপক ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি ভালো ভিত্তি তৈরি করেছে।
উপমন্ত্রী ম্যাক্সিম আকিমভ বলেন, রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। বর্তমানে, চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ রাশিয়ার মোট বিদেশি বাণিজ্যের ১৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ঐতিহাসিক রেকর্ড তৈরি করে। এ পরিমাণ ১০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। পরবর্তী পাঁচ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে প্রতি বছর ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। তা ছাড়া, রাশিয়া ও চীন জ্বালানি সম্পদ, বিনিয়োগ, আঞ্চলিক সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং প্রধানমন্ত্রীদের নিয়মিত বৈঠকের ব্যাপারে পাঁচটি আন্তঃসরকার সহযোগিতা কমিটি গঠন করেছে। এ ধরনের সমৃদ্ধ আন্তঃসরকার সহযোগিতা ব্যবস্থা বিশ্বে খুব বিরল। রুশ ও চীনা প্রধানমন্ত্রীর নিয়মিত বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে ম্যাক্সিম আকিমভ বলেন, ভবিষ্যতে, রাশিয়া-চীন সহযোগিতা ধীরে ধীরে গোটা অঞ্চলের জ্বালানি বাণিজ্যের ক্ষেত্র থেকে বিকশিত হবে। দুই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে সহযোগিতার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন উপমন্ত্রী।
আকিমভ আরও বলেন, ভবিষ্যতে আর্কটিক জলপথ নির্মাণ চীন ও রাশিয়ার মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এ বছরের মে মাসে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন "আর্কটিক ফোরামের" বলেন, "আর্কটিক চ্যানেলের জন্য বার্ষিক নিরবচ্ছিন্ন অপারেশন পরিকল্পনা" রাশিয়ায় বাস্তবায়ন হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়ার আর্কটিক জলপথে নৌপরিবহন নিশ্চিতকরণ, স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ও পজিশনিং সিস্টেম উন্নত করা, উচ্চ স্তরের বরফ ভাঙা ব্যবস্থা স্থাপন করা এবং চ্যানেলের সঙ্গে বন্দর সুবিধা উন্নত করার কাজ করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় চীন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া আর্কটিক জলপথ এবং চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। উত্তর-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইউরোপকে যুক্ত করে একটি নতুন বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক রুট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ রুটটি চালু হলে কেবলমাত্র পরিবহন শিল্পই নয়, তা ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে দ্রুত যাতায়াতের সমুদ্রপথও উন্মুক্ত করবে।
এ বছর চীন ও রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। দু'টি দেশ একটি কঠিন ইতিহাস পার করে সহযোগিতার সম্পর্ক উন্নত করেছে এবং এ সম্পর্ক একটি অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
(জিনিয়া/তৌহিদ/লিলি)