চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে: চীন ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ
  2019-05-29 15:50:26  cri
গ্লোবাল থিংক ট্যাংক (সিসিজি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিন্তা ভাবনা প্রকল্প (টিটিসিএসপি)-এর উদ্যোগে 'চতুর্থ চীন গ্লোবাল থিংক ট্যাংক উদ্ভাবন বার্ষিক সম্মেলন' গতকাল (মঙ্গলবার) বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বায়নের এ যুগে থিংক ট্যাংকের আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অতিথিরা বাণিজ্যযুদ্ধ বৃদ্ধিতে মার্কিন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেন। তারা বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ বিজয়ী হয় না এবং যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাতো ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার এ প্রেবলে বলেন, গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া জনগণকে মুক্ত বাণিজ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করেছে। অবাধ বাণিজ্য হ্রাস করার যে কোনে প্রচেষ্টা ক্ষতিকর এবং শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা। তিনি মার্কিন সরকারের জিরো-সাম গেমের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন,

"আমি মনে করি ট্রাম্প প্রশাসন একটি জিরো-সাম গেম খেলছে। একবার একটি দল বিজয়ী হলে, অন্য দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই প্রেক্ষাপটে, গত তিন দশকে তারা চীনের (অর্থনৈতিক সমাজ) উত্থান দেখেছেন; যখন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন কিছুটা স্থগিত ছিল।"

আন্তর্জাতিক-বিষয়ক রয়্যাল ইনস্টিটিউটের এশিয়ান প্রোগ্রামের সিনিয়র গবেষক টিম সামারস মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ বাড়িয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিতে সম্পূর্ণরূপে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং বহুজাতিক কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনায় বাধা দিয়েছে। তিনি বলেন,

"আমি মনে করি ট্রাম্প সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি'র প্রবৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দেবে। এটি একটি স্বল্পমেয়াদী প্রভাব। এ ছাড়া, এটি ব্যবসায়িক সমাজের আচরণে পরিবর্তন ঘটাবে, তাদের উৎপাদন ও অপারেশ বিন্যাস কাঠামো পরিবর্তন করবে এবং গত ৪০ বছর ধরে গঠিত বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন ও উদ্ভাবনী নেটওয়ার্কের ভবিষ্যত ঝুঁকির মুখে ফেলবে।"

চীনের বিশেষজ্ঞরাও চীন-মার্কিন বাণিজ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করেছেন। বৈদেশিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য কলেজের অধ্যাপক এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ওয়াং চিয়েন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ বৃদ্ধি করে বিশ্বায়ন প্রবণতা থামিয়ে রাখতে পারবে না।

তিনি বলেন,

"ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে, অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে, আসলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে নির্ভরশীলতার মান আরও উন্নত হয়েছে। অন্যকথায়, আমাদের পৃথিবী 'ছোট' হচ্ছে। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণভাবে থামবে না এবং চীন-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক বা শিল্প ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বন্ধ করা অসম্ভব। কারণ তথ্য প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, বাজার পরিবেশ অনেক বছর আগে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হয়েছে; বিশ্ব অনেক ছোট হয়ে গেছে। সবাই একে-অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সহযোগিতা এবং একটি উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরির কথা বিবেচনা করছে। এ ধরনের চিন্তা একটি ঐকমত্য— যা বড় পরিবেশে গড়ে ওঠে।"

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতি কেন্দ্রের পরিচালক ওয়াং ইয়ং বলেন, মার্কিন সরকার বাণিজ্যযুদ্ধ বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত ক্ষতি মার্কিন কোম্পানিরই হবে। তিনি বলেন,

"মার্কিন সরকার বর্তমান নীতিতে অটল থাকলে, দেশটির কোম্পানিগুলো চীনা বাজার হারাতে পারে। কারণ বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবন থামিয়ে রাখা যাবে না এবং মাঝারি বা দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে আমেরিকান কোম্পানির বৃহত্তম ক্ষতি হবে।"

(জিনিয়া/তৌহিদ/লিলি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040