লিসু জাতি
  2019-05-29 10:00:12  cri

লিসু জাতির লোকসংখ্যা ৬.৩ লাখের একটু বেশি। তারা মূলত ইউননান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের নু চিয়াং লিসু স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের ৪টি জেলা এবং তিছিং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের ওয়ে সি লিসু স্বায়ত্তশাসিত জেলায় বাস করেন। বাকিরা ইউননান প্রদেশের লি চিয়াং, ত্যহং, ছুই সিং, পাও সান, তালি শহর এবং সিছুয়ান প্রদেশের লিয়াং শান 'ই জাতির স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য ' ও পান সি হুয়া শহরে বাস করে। তারা হান, পাই, ই ও নাসিসহ নানা জাতির সঙ্গে মিলেমিশে বাস করে।

লিসু জাতির নাম গত ১০০০ বছরের মধ্যে পরিবর্তন হয়নি। জাতির উত্স দিক থেকে দেখলে, এদের ই ও নাসি জাতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মিং রাজবংশ আমল পর্যন্ত ই জাতির একটি শাখা হিসেবে মনে করা হতো লিসু জাতিকে।

লিসু জাতিঅধ্যুষিত এলাকায় উঁচু পাহাড় প্রচুর এবং শতাধিক নীদ এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। দক্ষিণ থেকে উত্তরে বিশ্ববিখ্যাত একটি আলপাইন উপত্যকা তৈরি হয়েছে এখানে। উপত্যকা থেকে পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত ব্যবধান ৩ হাজার মিটার এবং আবহাওয়ার পার্থক্য বেশি। পাহাড়ের নীচ থেকে উপর পর্যন্ত যথাক্রমে গ্রীষ্মমন্ডল, নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল ও হিমমন্ডল আবহাওয়া বিরাজমান। এক পাহাড়ে দেখা যায় ৪টি ঋতু এবং কাছাকাছি দুটি পাহাড়ের আবহাওয়া ভিন্ন। বিশেষ এমন পরিবেশের কারণে এখানে দক্ষিণ ও উত্তর চীনের নানান জন্তু ও উদ্ভিদ পাওয়া যায়। তা ছাড়া, এখানে পানিসম্পদ প্রচুর। ইউননান প্রদেশের ১১.৬ শতাংশ জলশক্তি এখানে সংরক্ষণ আছে। প্রাকৃতিক দৃশ্য সুন্দর এবং পর্যটনসম্পদ প্রচুরা।

লিসু ভাষার দুটি আঞ্চলিক ভাষা আছে। একটি হল নু চিয়াং ভাষা ,আরেকটি হল লু ছুয়ান ভাষা। নু চিয়াং ভাষার দুটি শাখাও আছে। বিভিন্ন ভাষার মধ্যে পার্থক্য বেশি না। আগে লুসি জাতির লিখিত ভাষা ছিল না। ২০ শতাব্দীর শুরুতে, ওয়াং পো রেন নামক একজন লিসু জাতির ছেলে ১০৩০টি চিত্রবর্ণ তৈরি করেন এবং এটা লিসু জাতির প্রথম লিখিত অক্ষর। ২০ শতাব্দির ২০ দশকে একজন বৃটিশ ধর্মপ্রচারক ও পা লুন জাতির যুবক পা তং ইংরেজি অক্ষরের ভিত্তিতে দ্বিতীয় লিসু অক্ষর সৃষ্টি করেন। এটাকে বলা হয় পুরাতন লিসু ভাষা এবং এখনও ব্যবহৃত হয়। গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে হান ভাষার পিনইনের ভিত্তিতে নতুন লিসু ভাষা সৃষ্টি করা হয়। এখন পুরাতন ও নতুন দুটি লিখিত ভাষাই ব্যবহার করে লিসু জাতির মানুষ।

লিসু জাতি ও ই জাতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের কিংবদন্তি তা ই জাতি, নাসি জাতি ও হানি জাতির কিংবদন্তির মধ্যে মিল আছে। প্রাচীনকালে তারা একই জাতি ছিল। পরে ধাপে ধাপে বিভিন্ন উপজাতিতে পরিণত হয় এবং অবশেষে স্বাধীন একটি জাতি হয়।

লিসু জাতির মানুষ নাসি, ই, হানি ও লাকু জাতির মানুষের চেহারার মধ্যে মিল আছে। তারা সব মালভূমির মানুষ। লম্বা, উঁচু নাক, পাতলা ঠোঁট। নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর শুরুর দিকে নু চিয়াং এলাকার লিসু জাতির মানুষ বংশানুক্রমিক সিস্টেম পালন করে এবং টোটেম পূজা করে। বংশানুক্রমিক সিস্টেম মানে এ মানুষের মধ্যে রক্ত সম্পর্ক রয়েছে এবং পারিবারিক নাম একই। প্রতিটি গোত্রের নিজস্ব টোটেম আছে। তাদের বিয়ার, বাঘ, বানর, সাপ, পাখি, মাছ ও বাঁশ, আগুনসহ ২০ ধরনের টোটেম আছে এবং কোন কোন গোত্রের নামও পশুপাখি বা উদ্ভিদের নামে। যেমন তাদের 'মাছ' নামের পরিবারগুলো ভালভাবে মাছ ধরতে পারে।

লিসু জাতির মানুষ বিশ্বাস করে যে, পাহাড়, নদী, চাঁদ ও তারকা, পশুপাখি ও উদ্ভিদ দেবতা বা ভূতের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তারা আদিম ধর্ম বিশ্বাস করে। ২০ শতাব্দীর শুরুতে, খ্রিস্টান এবং ক্যাথলিকবাদ লিসুঅধ্যুষিত এলাকায় প্রবেশ করে এবং ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। তাই এখন নু চিয়াং এলাকার লিসু জাতির মানুষের বেশিরভাগ খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাস করেন। (শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040