ঠাণ্ডা জলের মাছচাষী চিয়াং খাই চুন
  2019-05-29 09:58:14  cri

ছংছিং শহরের উত্তর দিকে পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত খাই চৌ এলাকার থান চিয়া জেলা। তাজা বাতাস ও পরিষ্কার পানি এখানকার বৈশিষ্ট্য। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ অনন্য। পাহাড় থেকে প্রবাহিত পানির ধারা পাহাড়ের নীচে বড় একটি হ্রদের মতো সৃষ্টি করেছে। এই জলাধারে আবার কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে অনেকগুলো পুকুর। এসব পুকুরে মাছ চাষ করা হয়।

৩০০ মু আয়তন বিশিষ্ট একটি বড় ও ঠাণ্ডা মাছ চাষের ঘাঁটি এটা। এর মালিক চিয়াং খাউ চিন ঘাঁটির আউটলেট পাইপ চেক করছেন। এ ঘাঁটির প্রত্যেকটি জলাধারের নিজ নিজ আলাদা পানির আউটলেট ও ইনলেট আছে। কাছে গিয়ে দেখা যাবে, বাইরে যে পানি বেরিয়ে যাচ্ছে, তাও খুবই পরিস্কার।

চিয়াং খাই চুন ছংছিংয়ের বিখ্যাত একজন মাছচাষী। তিনি ছংছিংয়ের বাইরে অনেক বছর ধরে কাজ করেছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি জন্মস্থানে ফিরে আসেন। তিনি জিপসাম-এর খনির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন। তিনি স্থানীয় মানুষদের মধ্যে যারা সবার আগে ধনী হয়ে ওঠেন—তাদের মধ্যে একজন। তার কোন চিন্তা ছিল না। তিনি চাইলে আরামের জীবন যাপন করতে পারতেন। তবে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে চিয়াং খাই চুন নতুন ব্যবসার সুযোগ আবিষ্কার করেন। ১০ বছর আগে যখন তিনি পরিবহন শিল্পে জড়িত ছিলেন তখন তিনি প্রথমবারের মতো ঠান্ডা জলে মাছ চাষের কথা শুনেন এবং মনে করেন এ ব্যবসার সম্ভবনা বেশি। ২০১০ সালে চিয়াং খাই চুন একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ঠান্ডা জলে মাছের চাষ শুরু করেন। 'ঠান্ডা জলের মাছ' মাত্র ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচের তাপমাত্রার পানিতে বেঁচে থাকতে পারে। শুরুতে চিয়াং খাই চুন এন্ড্রিয়াস (Andrias) মাছ চাষ করেন। তবে এ মাছের বড় হবার চক্র দীর্ঘ বলে মুনাফা বেশি না। পরে তিনি রেনবো ট্রাউট চাষ শুরু করেন। এক কেজি রেনবো ট্রাউট মাছের দাম ৬০ ইউয়ানের বেশি এবং মুনাফার হার ৫০ শতাংশ। এক মু জলাশয়ে ১৫ হাজার কেজি রেনবো ট্রাউট চাষ হতে পারে এবং ১০০ মু জলাশয়ের মুনাফা হবে ৪ কোটি ইউয়ানের বেশি।

চিয়াং খাই চুন উত্পাদন বাড়াতে চাইলেন। এ জন্য তিনি উপযুক্ত জলাশয় খুঁজতে লাগলেন। তিনি শানসি, হুপেই, সিছুয়ানসহ প্রদেশের নানা জায়গায় গিয়ে ঠান্ডা জলের মাছ চাষের জন্য ভাল জায়গা খুঁজতে লাগলেন। জলের তাপমাত্রা ঠিক হতে হবে, কোন দূষণ হতে পারে না, বড় জায়গাও প্রয়োজন। একবার তিনি ছংছিং শহরের থান জিয়া জেলার হুসিয়ান ও লং সি—এই দুটি গ্রামে ভ্রমণ করেন এবং ওখানে উপযুক্ত জলাধার আবিষ্কার করেন। এখানে ভেজা পর্বত এলাকা, আবহাওয়া পরিষ্কার, জলের তাপমাত্রা সারা বছর ১৫-২০ সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। জলে খনিজ পদার্থও প্রচুর। তখন জলস্রোতটি ইউ আকারের ছিল। খুলে দিলে বড় বড় চাষের পুকুর তৈরি হতে পারে। তবে এসব চিয়াংয়ের নিজের ধারণা। তার আমন্ত্রণে জলবিশেষজ্ঞ কিছু গবেষণা ও পরীক্ষা করেন এবং তার এ পরিকল্পনা যুক্তিযুক্ত মনে করেন। সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর চিয়াং ৪ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করে ঠাণ্ডা জলের মাছ চাষ ঘাঁটি তৈরি করেন।

জলস্রোতকে উন্মুক্ত করা, পুকুর নির্মাণ এবং নদীর বাঁধ নির্মাণ—এই তিনটি কাজ এসসাথে শুরু হয়। ২০১৫ সালে ১০০টি পুকুর তৈরি করা হয়। তবে তখন নদীর বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়নি। চিয়াং অপেক্ষা করতে রাজি নন। তিনি মাছ চাষ শুরু করেন। তবে ওই বছরের গ্রীষ্মকালে একটি বন্যার কারণে তার ২ লাখ মাছ পানিতে ভেসে যায়। তার ৭০ লাখ ইউয়ান ক্ষতি হয়।

এ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝতে পারেন যে, হুড়াহুড়ি করে কাজ করলে সহজে ব্যর্থ হতে হয়। এবার তিনি বন্যানিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিলেন। ২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালের আবহাওয়া খুবই গরম এবং বৃষ্টি হয়নি। জলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তার সব মাছ আবার মারা যায়। তিনি আবিষ্কার করেন, জলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তিনি ৩০ লাখ ইউয়ান ব্যয় করে উজানে জল মজুত করতে বাঁধ নির্মাণ করেন এবং রেনবো ট্রাউটেরা পাশাপাশি অন্য এক ধরনের মাছও চাষ করেন। এ মাছ ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পানিতেও বেঁচে থাকতে পারে।

এক একটি সমস্যা সমাধান করে এখন চিয়াংয়ের ঠান্ডা জলের মাছের চাষ ঠিকমোত চলছে। তিনি বলেন, পরিষ্কার পানি ও সবুজ পাহাড় তার ব্যবসার সফল হবার চাপিকাঠি।

ভাল জলে চাষ করা মাছের গুণগত মানও ভাল এবং আরও উচ্চ দামে বিক্রি হতে পারে। ২০১৮ সালে মাছ চাষের উত্পাদনমূল্য ছিল ৩ কোটি ইউয়ান। আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী ২০২১ সালে উত্পাদনমূল্য হবে ২০ কোটি ইউয়ান।

চিয়াংয়ের ব্যবসার সাফল্য থেকে উপকৃত হয়েছেন স্থানীয় মানুষ। এখন তার ৪০ কর্মীর অধিকাংশ পাশের গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে কয়েকজন দরিদ্র পরিবার বা প্রতিবন্ধী মানুষ। ঘাঁটি সার্বিক চালু হবার পর ১০০টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ২০ বছর বয়সী সিয়াও চিয়াং ৫ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন। তিনি এ কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিককে জানান, এখানে কাজ করলে খাওয়া ও যাতায়াতের খরচ কোম্পানির এবং মাসিক বেতন ৪৫০০ ইউয়ান। এ বেতন এতদাঞ্চলে অনেক বেশি।

চিয়াং খাই চুনের মতো অনেক মানুষ এখন ছংছিং খাই চৌ এলাকায় নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। খাই চৌ এলাকার লোকসংখ্যা বেশি। ৫ লাখ ৫০ হাজার খাই চৌ মানুষ স্থানীয়ভাবে বাইরে কাজ করেন। খাই চৌ এলাকা উপ-প্রধান জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৮২ হাজার মানুষ খাই চৌ ফিরে নিজের ব্যবসা শুরু করেন এবং বিনিয়োগ পরিমাণ ৩০৯০ কোটি ইউয়ান। তারা খাই চৌ অর্থনীতি উন্নয়নে বেশ অবদান রাখছেন ।(শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040