বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি : প্রসঙ্গ চীন, ভারত ও পাকিস্তান
  2019-05-26 18:21:05  cri
বাংলাদেশের প্রতিবেশি ও বন্ধু দেশ চীন, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে গত সপ্তাহে কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। বিষয়গুলোতে দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি প্রকাশ পেয়েছে। কারো সঙ্গে বিরোধ নয়, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক-বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির এ মর্মবাণীও প্রতিফলিত হয়েছে তাতে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব বিষয়গুলোর দিকে।

চাইনিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন অব হংকংয়ের একটি প্রতিনিধিদল গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসে। প্রতিনিধিদলটি ২৩ মে বৈঠক করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে। বৈঠকে দুদেশের জন্য একটি অত্যন্ত ভালো খবর দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খবরটি হলো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ সুরক্ষায় চলতি বছরই চীনের সঙ্গে বিজনেস কাউন্সিল গঠন করবে বাংলাদেশ। এ কাউন্সিল গঠিত হলে দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো গতি সঞ্চার হবে এমনটা আশা করাই যায়।

চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের পিছনে যে চীনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে সে কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আশপাশের দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ভালো উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। চাইনিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন অব হংকংয়ের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহের কথা জানানো হয়।

হংকংয়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর এবং বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ এবং বাংলাদেশ-চীন বিজনেস কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ ঢাকা-পেইচিং গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই বহিঃপ্রকাশ।

বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বরাবরই ভালো। ভারতে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত নরেন্দ্র মোদির প্রথম মেয়াদ থেকেই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে উষ্ণতার ছোঁয়া লাগে। প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালের জুনে বাংলাদেশ সফর করেন নরেন্দ্র মোদি। তার ওই সফরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন ও উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ওই সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩৬টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও বহুপ্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি হয়নি। তবে, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের উষ্ণতা ক্ষুণ্ন হয়নি তাতে। ২৩ তারিখ ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। ওই দিন বিকালেই নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই নেতা দুই দেশের সম্পর্ককে ভবিষ্যতে আরো জোরদার করতে সম্মত হন।

পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। যেখানে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের সম্পর্ককে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে অঙ্গীকার করেছেন। একই সঙ্গে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, পরিবহন, জ্বালানি ও দুদেশের মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় করার কর্মসূচিগুলো এগিয়ে নিতেও একমত হন তারা। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে পূনরায় কাজ শুরু করতে বৈঠকের জন্য দ্রুত দিনক্ষণ নির্ধারণের বিষয়েও একমত হয়েছেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ২০২০ সালে এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশত বছর পূর্ণ করবে। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে আসছে বছরগুলো দুদেশের সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

চীন ও ভারতে সঙ্গে সুসম্পর্কের বিপরীতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে সবসময়ই একধরনের টানপোড়েন চলে আসছে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়ে অযাচিতভাবে নাক গলায় পাকিস্তান।

সবশেষ ইসলামাবাদের নিযুক্ত একজন বাংলাদেশি কূটনীতিকের ভিসা নবায়ন না করায় দুদেশের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় যে, ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রেস কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের ভিসা নবায়ন না করায় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছে সেখানকার বাংলাদেশ মিশন।

এ বিষয়ে ২১ মে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি জানান, সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত কারণে ব্যক্তিবিশেষের ভিসা দেয়া বন্ধ হতে পারে কিন্তু অন্য পাকিস্তানিদের ভিসা বন্ধ করেনি বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ইসলামাবাদ জোর করে ঝামেলা বাধাতে চাইছে। তারা বরং বাংলাদেশি কূটনীতিকের ভিসা নবায়ন করছে না এবং নাগরিকদের ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছে। দুদেশের মধ্যে কার্যকর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার স্বার্থে পাকিস্তান তার এই অনাকাঙ্খিত কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবে এমনই প্রত্যাশা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040