'উন্নত প্রযুক্তি চীনে আনতে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা হচ্ছে—এমন ধারণা ভিত্তিহীন'
  2019-05-24 15:39:34  cri

গেল বছর চীন-মার্কিন বাণিজ্য-সংঘাত শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বার বার এমন অভিযোগ করা হচ্ছে যে, বাণিজ্যের অন্তরালে চীন মার্কিন কোম্পানিগুলোকে উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আসতে বাধ্য করছে। এ প্রসঙ্গে চীনা বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতরা বলছেন, মার্কিন প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চীন সেদেশের কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করছে—এমন ধারণা ভিত্তিহীন। যুক্তরাষ্ট্র এ অজুহাতে চীনের উন্নয়ন-প্রক্রিয়াকে দমন করতে চায়। চীনের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ আইন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে এবং চীন সকল কোম্পানির মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করে থাকে।

বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় উন্নয়ন গবেষণালয়ের অবৈতনিক প্রধান লিন ই ফু বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো উন্নত প্রযুক্তি চীনের বাজারে আনছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্বাভাবিক নিয়মে। তিনি বলেন,

"মার্কিন কোম্পানিগুলো উন্নত প্রযুক্তি চীনে বিনিয়োগ করে। চীন এজন্য তাদের বাধ্য করেনি। মার্কিন কোম্পানিগুলো চীনে উত্পাদন করতে চায়, চীনা বাজারে প্রবেশ করতে চায়। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি ছাড়া, তাদের পণ্য প্রতিযোগিতামূলক হবে না। উদাহরণস্বরূপ, চীন বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি উত্পাদনকারী দেশ এবং বৃহত্তম গাড়ি-বাজারও বটে। মার্কিন কোম্পানি ছাড়া, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলোও চীনে গাড়ি উত্পাদন করে ও বিক্রয় করে। যদি মার্কিন গাড়ি-কোম্পানি চীনে তাদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার না-করে, তবে চীনারা তাদের গাড়ি কিনবে না। আমরা জানি, আমেরিকার জেনারেল ও ফোর্ড কোম্পানি এখন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনে বেশি গাড়ি উত্পাদন করছে। তাদের মুনাফার অধিকাংশই আসছে চীনা বাজার থেকে। তাই নিজেদের স্বার্থেই তাদেরকে সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে চীনে উত্পাদন করতে হচ্ছে। এটা 'বাধ্যতামূলক প্রযুক্তি স্থানান্তর' নয়।"

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকার জেনারেল কোম্পানি ২০১৭ সালে ৪০ লাখের বেশি গাড়ি বিক্রয় করে এবং চীন টানা ৬ বছর এ কোম্পানির বৃহত্তম বাজার। বিশেষজ্ঞ বলেন, "চীন সবসময় নিজেদের উদ্যোগে নবায়ন ও উদ্ভাবনের সামর্থ্যর ওপর গুরুত্ব দেয়। ২০০০ সাল থেকে, চীনের গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বার্ষিক গড়ে ২০ শতাংশ হারে বেড়েছে এবং ২০১৭ সালে এ খাতে বিনিয়োগ হয় ১.৭৬ ট্রিলিয়ান ইউয়ান, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। গবেষণাব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি চীন মেধাস্বত সংরক্ষণব্যবস্থাও জোরদার করে। ২০০১ সাল থেকে চীনের বৈদেশিক মেধাস্বত সংরক্ষণসংশ্লিষ্ট লেনদেন দ্রুত বাড়ছে। ২০০১ সাল থেকে চীনের বৈদেশিক মেধাস্বত সংরক্ষণসংশ্লিষ্ট লেনদেন বার্ষিক গড়ে ১৭ শতাংশ হারে বেড়েছে এবং এ খাতে মেধাস্বত্ব ফি বাবদ চীন ২০১৭ সালে ২৮৬০ কোটি ডলার ব্যয় করে। এদিকে, ২০১৭ সালে চীনের পেটেন্ট অধিকার আবেদন ১৩ লাখের বেশি ছিল। পেটেন্ট আবেদনের সংখ্যার দিক দিয়ে চীন বিগত ৭ বছর ধরে বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। এর মধ্যে আবেদকদের মধ্যে ১০ শতাংশ বিদেশি ব্যক্তি বা কোম্পানি। চীনে বিদেশিদের পেটেন্ট অধিকার আবেদন ২০০১ সালের চেয়ে ৩ গুণ বেশি হয়।"

চীনা সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি গবেষণালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গবেষণা অফিসের পরিচালক রেন তুং ইয়ান মনে করেন, প্রযুক্তি স্থানান্তরে চীন মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করছে—এমন অভিযোগ আসলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অর্থনৈতিক কৌশল। তিনি বলেন, "চীনের কোনো আইনের ধারা অনুসারেই মার্কিন কোম্পানিগুলো উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আসতে বাধ্য নয়। বরং চীনে বিনিয়োগকারী মার্কিন কোম্পানিগুলো অর্থনীতির রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কিছু চাপের সম্মুখীণ হচ্ছে। যেমন, আগে অনেক বিদেশি কোম্পানি চীনে বিনিয়োগ করলে শুল্ক বা জমি ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা ভোগ করতো। এখন তেমন সুবিধা কম। পাশাপাশি, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে, চীনের বিরুদ্ধে উক্ত অভিযোগ করা অর্থহীন।"

বস্তুত, চীন সরকার বরাবরই দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি বিনিময়কে উত্সাহ দিয়ে আসছে। পাশাপাশি, চীন সরকার আইন অনুযায়ী চীনে বিদেশি কোম্পানিগুলোর বৈধ মেধাস্বতও রক্ষা করে চলেছে। চীনা কোম্পানিগুলোর মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের জন্য বিদেশি সরকারগুলোর প্রতিও চীন সরকার বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছে। (শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040