১. চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় পরিষদের সভায়, ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো ও ব্যয় কমানো এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ধারা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। তিনি ইন্টারনেট খাতে নব্যতাপ্রবর্তনের ওপরও গুরুত্বাপরোপ করেন।
সভায় লি খ্য ছিয়াং বলেন, চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসভা ও 'সরকারি কার্যবিবরণী'র কার্যক্রম অনুযায়ী, ইন্টারনেট খাতে বিনিয়োগ ও ভোগ বাড়াতে হবে।
সভায় ইন্টারনেট খাতসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২. চীনা টেক জায়ান্ট হুয়াওয়েইর প্রতিষ্ঠাতা রেন চেং ফেই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা তাঁর কোম্পানির উচ্চ প্রযুক্তির ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তিনি সম্প্রতি চীনের শেন চেন শহরে কোম্পানির সদরদফতরে চীনা সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন।
রেন চেং ফেই বহু বছর ধরে তাঁর কোম্পানিকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "আমি মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ। ৩০ বছর ধরে তারা আমাদের বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় সঙ্গী হিসেবে পাশে থেকেছে। অধিকাংশ মার্কিন খুচরা যন্ত্রাংশ উত্পাদনকারী কোম্পানি আমাদেরকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে। বিশেষ করে, সংকটের সময় মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণ প্রশংসনীয়।"
তিনি আরও বলেন, "মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হুয়াওয়েই এবং এর অধীন কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু এতে হুয়াওয়েই কোম্পানির ওপর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এতে হয়তো আমাদের কিছু নিম্ন পর্যায়ের পণ্যের ওপর প্রভাব পড়বে; কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি, বিশেষ করে ফাইভ-জি'র ওপর নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তা ছাড়া, আগামী ২ বা ৩ বছরের মধ্যে অন্যান্য কোম্পানি আমাদের ধরেও ফেলতে পারবে না।"
৩. এদিকে, চীনের হুয়াওয়েই কোম্পানি সম্প্রতি ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে মেইট-২০এক্স নামক ফাইভ-জি সেলফোন দর্শকদের সামনে নিয়ে আসে। কোম্পানির সর্বশেষ মডেলের এই ফোনসেট জুন থেকে ব্রিটেনের বাজারে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, ব্রিটেনের টেলিযোগাযোগ অপরেটররা দেশের কিছু অঞ্চলে ৫জি নেটওয়ার্ক সেবা চালুর জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হুয়াওয়েই কোম্পানির পশ্চিম ইউরোপীয় অঞ্চলের ভোক্তাসেবাবিষয়ক মুখ্য বাজার কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু গারিহি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বিভিন্ন সরঞ্জাম, ইন্টারনেট এবং চিপসেটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ফাইভ-জি সেলফোন তৈরি করতে কোম্পানি বিপুল অর্থ, মেধা ও জনশক্তি ব্যয় করেছে। আশা করা যায়, নতুন স্মার্টফোন ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্রিটেনে ৫জি টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা কাজ ইউরোপের যে-কোনো দেশের তুলনায় দ্রুততর গতিতে সামনে এগুচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেশ কয়েকটি টেলিযোগাযোগ অপরেটার অদূর ভবিষ্যতে কয়েকটি শহরে পর্যায়ক্রমে ৫জি সেবা চালু করবে।
৪. চীনা রফতানিপণ্যের ওপর ক্রমবর্ধমান হারে শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তের পরেও, চীনে বিনিয়োগে বিদেশিদের আগ্রহে ভাটা পড়েনি। বরং চীনা বাজার নিয়ে তারা আশাবাদী। চীনও বরাবরই বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু খাং নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন।
লু খাং বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চীনসহ বিভিন্ন দেশের রফতানিপণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে, যা বৈশ্বিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে, চীনে বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়নি। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, চীনের অর্থনীতির ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা আছে।
৫. ভবিষ্যতে চীনের অর্থনীতিতে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকবে। বাণিজ্যে মার্কিন সংরক্ষণবাদের প্রভাবে চীনা অর্থনীতি খানিকটা চাপের মুখে পড়লেও, সার্বিকভাবে এই প্রভাব মোকাবিলায় বেইজিং সক্ষম। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ মন্তব্য করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের জিডিপি ৬.৪ শতাংশ বেড়েছে, যা পূর্বানুমানের চেয়ে ভালো। আর উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বর্তমানে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি। গত বছর চীনের অভ্যন্তরীণ ভোগ দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ৭৬.২ শতাংশ অবদান রেখেছে।
মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে চীনের আমদানি-রফতানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪.৩ শতাংশ বেশি ছিল। চীনের বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। চীন বাণিজ্যের বড় দেশ থেকে বাণিজ্যের শক্তিশালী দেশে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীনের উন্নয়ন থেকে লাভবান হতে চায়। দু'একটা দেশ চীনের সঙ্গে ব্যবসা করতে না-চাইলেও ক্ষতি নেই। কারণ, বহু দেশ চীনের সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে চায়।
৬. চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুসারে, এপ্রিল মাসে চীনের সেবাশিল্পের দ্রুত উন্নয়ন হয়। প্রবৃদ্ধির প্রবণতাও ছিল ইতিবাচক। শিল্পউত্পাদন ছিল স্থিতিশীল। এপ্রিল মাসে দেশের সেবাশিল্পে উত্পাদনের সূচক গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ৭.৪ শতাংশ বেশি ছিল এবং উচ্চ প্রযুক্তির যান্ত্রিক নির্মাণশিল্পে প্রবৃদ্ধির হার গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ১১.২ শতাংশ বেশি ছিল।
এ ছাড়া, এপ্রিল মাসে চীনের রফতানি ও আমদানির মোট পরিমাণ ২ ট্রিলিয়ন ৫০৭.৭ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি ছিল, যা আগের বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ৬.৫ শতাংশ বেশি।
৭. চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (চীনা গণব্যাংক)-এর উপ-গভর্নর ও জাতীয় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর মহাপরিচালক ফান কুং শেং বলেছেন, বিদেশি মুদ্রার বাজার ও রেনমিনপি'র বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে তাঁর দেশ সক্ষম।
সম্প্রতি তিনি বলেন, বর্তমানে চীনা অর্থনীতি সার্বিকভাবে স্থিতিশীল আছে। সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক অবস্থা ভাল। চীনের বিদেশি মুদ্রার বাজারে তারল্যসংকট নেই; বিদেশি মুদ্রার মজুতও স্থিতিশীল আছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী চীনের আর্থিক খাতকে আরও উন্মুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি, আর্থিক সংস্কার ও উন্মুক্তকরণনীতির বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে হবে।
৮. যুক্তরাষ্ট্র একটি পিগি ব্যাংক এবং চীনসহ অন্যান্য দেশ এ ব্যাংক থেকে নিয়মিত অর্থ 'চুরি' করছে বলে সম্প্রতি কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিবিদ যে-দাবি করেছেন, তা সম্পূর্ণ অর্থহীন। সিআরআইএর এক সম্পাদকীয়তে এমন মন্তব্য করা হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাজারের নিয়ম অনুসারেই ক্রেতা ও বিক্রেতা চুক্তি করে। এতে দু'পক্ষই কমবেশি লাভবান হয়। চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক লেনদেনও এই নিয়মের বাইরে নয়। অথচ বর্তমান মার্কিন প্রশাসন বাজারের সাধারণ নিয়মকে উপেক্ষা করে অর্থহীনভাবে চীনের বিরুদ্ধে প্রযুক্তি, চাকরি ও অর্থ 'চুরি'র অভিযোগ আনছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
সম্পাদকীয়তে পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বহু বছর ধরে চীনের বাজার থেকে যুক্তরাষ্ট্র বড় অংকের মুনাফা করে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে মেধাস্বত্ব ব্যবহার ফি বাবদ ৭.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করে। আর ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের চীনে পণ্যরফতানি ৮৬ শতাংশ বেড়েছে।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অর্থমন্ত্রী মনে করেন, প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব বজায় রাখার প্রকৃত উপায় প্রযুক্তি উন্নত করা, চীনকে দমন করা নয়। বস্তুত, গত ৪০ বছরে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণে অর্জিত চীনের সাফল্য হলো চীনা জনগণের সংগ্রামের ফসল। আরও উন্মুক্ত চীন আরও বেশি সাফল্য লাভ করবে।
৯. চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তথা জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চীনে প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩০,৫২০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.৪ শতাংশ বেশি। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
মন্ত্রণালয় জানায়, প্রথম প্রান্তিকে চীনে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি থেকে।
১০. সম্প্রতি চীন জাতিসংঘের নিয়মিত বাজেটের ১২.০১ শতাংশ চাঁদা হিসেবে পরিশোধ করেছে। চীন হচ্ছে জাতিসংঘের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁদা-প্রদানকারী দেশ। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সম্প্রতি বিশেষভাবে চীনা ভাষায় চীনকে ধন্যবাদ জানান।
অন্যদিকে জাতিসংঘের বৃহত্তম চাঁদা-প্রদানকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত নিজের চাঁদা ৩৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করেনি। তা ছাড়া, জাতিসংঘের কাছে নিরাপত্তা সুরক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া চাঁদার পরিমাণ ৭৭ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মোট পরিমাণ ২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অথচ, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র সময়মতো জাতিসংঘের চাঁদা পরিশোধ করছে না। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই চাঁদা পরিশোধে সক্ষম। চাঁদা পরিশোধ না-করা আসলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি দেশটির অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ।
(আলিমুল হক)