চীন-মার্কিন বাণিজ্যিক ঘাটতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ক্ষতি হয় এবং দেশটির উত্পাদনশিল্পের কয়েক মিলিয়ন কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়—এমন ধারণা ভিত্তিহীন। চীনের অর্থনীতিবিদরা গতকাল (বুধবার) বলেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্যে উভয়ের লাভ। রফতানিপণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ বরং উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।
গেল ৪০ বছরে চীন-মার্কিন বাণিজ্যের আকার ২৩০ গুণ বেড়েছে। বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় উন্নয়ন গবেষণালয়ের প্রধান লিন ই ফু এক ফোরামে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে পণ্য ক্রয় করে চীনকে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা দিচ্ছে না, এতে উভয়েরই লাভ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে যে পণ্য ক্রয় করে তা নিজে উত্পাদন করে না। চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম কম এবং গুণগত মান তুলনামূলকভাবে ভাল। উদাহরণস্বরূপ, পোশাক ও চামড়ার জুতা যুক্তরাষ্ট্র নিজেও উত্পাদন করতে পারে, তবে তার উত্পাদনব্যয় বেশি। এমন পরিস্থিতিতে, চীন থেকে পণ্য আমদানি করে দেশটি। এটা বাণিজ্যের মৌলিক নীতি এবং সাধারণ ও সহজ বিষয়।
আসলে, দু'দেশের বাণিজ্য থেকে বেশ লাভ করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন-চীন বাণিজ্য জাতীয় কমিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দু'দেশের বাণিজ্য থেকে প্রত্যেক মার্কিন পরিবার প্রতিবছর গড়ে ৮৫০ ডলার সাশ্রয় করতে পারে, যা তাদের পারিবারিক আয়ের ১.৫ শতাংশ। দু'দেশের বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি ও চীনের লাভ—বিষয়টা তা নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতির উন্নয়নের ভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দু'দেশের ভূমিকাও ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র শিল্প চেনের উজানে থেকে অধিকাংশ মুনাফা অর্জন করে।
ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন-মার্কিন সম্পর্ক গবেষণালয়ের ঊর্ধ্বতন গবেষক চৌ সি চিয়ান মনে করেন, দু'দেশের বাণিজ্যের বিপুল ঘাটতি দু'দেশের বাস্তব অবস্থার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, চীনের রফতানিকৃত পণ্যের দাম কম এবং গুণগত মান ভাল। বিশেষ করে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের জন্য চীনের ওপর বেশ নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ৮৬ শতাংশ খেলনা, ৬০ শতাংশ জুতা ও লটবহর, ৪৪ শতাংশ আসবাবপত্র, ৩৭ শতাংশ টেক্সটাইল ও পোশাক, ২১ শতাংশ যান্ত্রিক এবং বৈদ্যুতিক পণ্য, ৪০ শতাংশ ডিজিটাল ক্যামেরা ও ৯৪ শতাংশ ল্যাপটপ চীন থেকে আমদানি করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, চীনের কারণে বিপুল ঘাটতি সৃষ্টি হয়, তা নয়। অত্যধিক খরচ, অপর্যাপ্ত সঞ্চয়, বিশাল আর্থিক ঘাটতি এর মূল কারণ। লিন ই ফু বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, চীন, কানাডা, ইউরোপ ও জাপানসহ নানা দেশ ও অঞ্চলের রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে ঘাটতি সমস্যার সমাধান করতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। এতে বরং মার্কিন জনগণকে বড় মূল্য দিতে হবে।
তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলেও, ২০১৮ সালে মার্কিন বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি ১২.১ শতাংশ বেড়েছে এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ১১.৭ শতাংশ বেড়েছে। সমস্যার সমাধান হয়নি, অথচ বাণিজ্যিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। এখন মার্কিন সাধারণ পরিবারগুলোকে আমদানিকৃত পণ্য কিনতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। যদি দেশীয় পণ্য ও সেবা কেনে, তাহলে দেশীয় পণ্যের উত্পাদনব্যয় বেশি হওয়ায় দাম বেশি হবে।
বর্তমানে চীন বিশ্বের ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও বার বার জোর দিয়ে বলছে যে, চীন কখনও বাণিজ্যউদ্বৃত্ত ইচ্ছা করে সৃষ্টি করে না। চীনে পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। ফলে বিদেশ থেকে আমদানিও বাড়ছে। তা ছাড়া, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে চীন আদমানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য নতুন লাভের সুযোগ সৃষ্টি করবে। (শিশির/আলিম/রুবি)