প্যারিসে অর্থনীতি ও সহযোগিতা উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদরদফতর থেকে গতকাল (মঙ্গলবার) প্রকাশিত হয় 'ওইসিডি অর্থনৈতিক পূর্বাভাস, ২০১৯'। এতে চলতি ও আগামী বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩ শতাংশের বেশি করে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ওইসিডি প্রতিবছর বসন্তকাল ও শরত্কালে বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হার হবে ৩.২ শতাংশ। আর ২০২০ সালের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে মাঝারি এক পর্যায়ে অবস্থান করছে। তবে তীব্রতর বাণিজ্যিক সংঘাত, নীতিমালার ক্ষেত্রে উচ্চ অনিশ্চয়তা, আস্থা কমে যাওয়া, বিনিয়োগ হ্রাস, উত্পাদন হ্রাস ইত্যাদি নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতির মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছর বিশ্ব বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ২ শতাংশ, যা গেল ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
ইউরো অঞ্চল সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাহ্যিক চাহিদা বিশেষ করে কিছু নবোদিত অর্থনৈতিক সত্তার চাহিদা কমে যাওয়া এবং বাণিজিক উত্তেজনার কারণে, ইউরো অঞ্চলের রফতানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাণিজ্যিক আস্থা, বিশেষ করে উত্পাদন- শিল্পের আস্থা কমে যাবে। চলতি ও আগামী বছরে ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়নে দেখা যাবে মন্দাভাব। প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হার ১.২ শতাংশ এবং আগামী বছর ১.৪ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ইউরো অঞ্চলের দেশগুলোকে কাঠামোগত সংস্কার করে পণ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা-ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয় ওইসিডি।
মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনে। ওইসিডি মনে করে, মার্কিন অর্থনীতি অব্যাহতভাবে উন্নত হবে। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধির হার হবে ২.৮ শতাংশ এবং ২০২০ সালে হবে ২.৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিবেশের নাজুক অবস্থার প্রেক্ষাপটে মার্কিন সরকারের উচিত বাণিজ্যিক সংঘাত এড়িয়ে চলা।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি কম হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, নবোদিত অর্থনৈতিক সত্তার অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার পূর্বানুমানের চেয়ে কম হলেও, বিশ্ব অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি পূর্বানুমানের চেয়ে বেশি হবে। ভারত ও ব্রাজিলের অর্থনীতি চলতি ও আগামী বছরে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখবে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে চীনকে এখনও বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি মনে করে ওইসিডি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে অনিশ্চয়তা ও বাণিজ্যিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং কাঠামোগত সংস্কারও শেষ হয়নি—এমন প্রেক্ষাপটে চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের পথে কিছু দুর্বলতা বাধা হয়ে দেখা দেবে। তবে চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের প্রবণতা বাড়বে। অর্থনীতির ভারসাম্য এবং পরিষেবা খাতে বিনিয়োগে স্থিতিশীলতার কারণে ভবিষ্যতে চীনা অর্থনীতিতে উন্নয়ন ধীর হলেও সার্বিকভাবে অর্থনীতি শক্তিশালী থাকবে। প্রতিবেদনে পূর্বাভাস করা হয় যে, চীনের অর্থনীতিতে চলতি ও আগামী বছরে প্রবৃদ্ধির হার হবে যথাক্রমে ৬.২ ও ৬.০ শতাংশ।
ওইসিডির প্রধান অর্থনীতিবিদ মাদাম লরেন্স বুনে প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পরের রফতানিপণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা, যুক্তরাষ্ট ও ইউরোপীয় ইউনিয়ানের মধ্য নতুন শুল্ক বাধা, চীনের অর্থনীতির ধীর উন্নয়ন, এবং ইইউর অর্থনীতিতে মন্দাভাব বিশ্ব অর্থনীতির জন্য মূল ঝুঁকি হবে। (শিশির/আলিম)