৭২তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন
  2019-05-21 15:23:05  cri

স্থানীয় সময় গতকাল (সোমবার) ৭২তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন জেনিভায় শুরু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মহাপরিচালক তেদ্রোস আদহানম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ১৯৪টি দেশের স্বাক্ষরিত 'আস্‌তানা ঘোষণা' প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উদ্দেশ্য নিশ্চিত করে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এবং সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ২০৩০ সালে 'সার্বিক জাতীয় স্বাস্থ্যরক্ষা' শীর্ষক লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আরও ‌এক কোটি ৮০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী লাগবে। এতে বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

আদহানম জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সম্মেলন চলাকালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সার্বিক জাতীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করবে এবং চলতি বছরেই প্রতিষ্ঠিত হবে 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তহবিল'।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান লাওসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুনকং সাইহাভং সম্মেলনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অনুষ্ঠানে ৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন কমিটির প্রধানরাও নির্বাচিত হন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনসহ ৫টি দেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় 'প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা থেকে সার্বিক জাতীয় স্বাস্থ্যরক্ষায় উত্তরণ ও টেকসই উন্নয়নের উদ্দেশ্য' শিরোনামে একটি পার্শ্বসম্মেলন। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির পরিচালক মাও সিয়াও ওয়ে এতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার ভাষণে চীনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন ও সার্বিক জাতীয় স্বাস্থ্যরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন।

মা সিয়াও ওয়ে তার ভাষণে বলেন, স্বাস্থ্য মানবজাতির মৌলিক অধিকার এবং সমাজ উন্নয়নের চালিকাশক্তি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা হল সার্বিক জাতীয় স্বাস্থ্যরক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়নের সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি এবং অর্থনীতি ও সমাজের টেকসই উন্নয়নের মৌলিক শর্ত। মা সিয়াও ওয়ে বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার শুরুর দিক থেকে মৌলিক চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যসেবা নেইওয়ার্ক গড়ে তুলতে শুরু করে সরকার এবং তৃণমূল পর্যায়ে চিকিত্সক তৈরির ওপর গুরুত্ব দেয়। বিংশ শতাব্দীর সত্তুরের দশকে গ্রাম, উপজেলা, ও জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যরক্ষা নেটওয়ার্ক ও গ্রামীণ অঞ্চলের সহযোগিতামূলক চিকিত্সাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হবার পর, চীন সরকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা সেবা জোরদার করার কাজ অব্যাহত রাখে এবং তৃণমূল পর্যায়ের চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যসেবার কার্যকারিতা ও মান উন্নত করে।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ে চীনের চারটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন পরিচালক মা সিয়াও ওয়ে। তিনি বলেন, প্রথমত, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ওপর গুরুতারোপ করা ও জনগণকেন্দ্রিক নীতির আলোকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়; দ্বিতীয়ত, চীনের অবস্থা অনুযায়ী সরকারের উদ্যোগে মূলত গণকল্যাণ অভিযান চালানো হয় এবং এতে সরকারি চিকিত্সা সংস্থাগুলো মূল ভূমিকা পালন করে; তৃতীয়ত, সাধারণ রোগের চিকিত্সায় তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা যথাযথ ভূমিকা পালন করে; এবং চতুর্থত, জনগণের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে নানা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণ করা হয়।

মাও সিয়াও ওয়ে আরও বলেন, তেদ্রোস আদহানম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক নিযুক্ত হবার পর সার্বিক জাতীয় স্বাস্থ্যরক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কাজ সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। চীনের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা বাস্তবায়ন সার্বিক জাতীয় স্বাস্থ্যরক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়নের সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি। বহুপক্ষবাদের দৃঢ় সমর্থক হিসেবে চীন স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং যৌথ আলোচনা, নির্মাণ ও পারস্পরিক কল্যাণের নীতি অনুসারে 'স্বাস্থ্য রেশমপথ' নির্মাণ করছে। ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় স্বাস্থ্যবিষয়ক সহযোগিতামূলক স্মারক স্বাক্ষর করে চীন এবং এ পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে বেশ সাফল্যও অর্জিত হয়েছে।

চীন নানা পক্ষের সঙ্গে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করে বিশ্ব সার্বিক জাতীয় স্বাস্থ্যরক্ষা লক্ষ্যমাত্রা ও জাতিসংঘের 'এজেন্ডা ২০৩০' শীর্ষক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখতে চায়। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040