তাই জাতি
  2019-05-15 09:24:53  cri

তাই জাতির লোকসংখ্যা ১১ লাখ ৫৯ হাজার। মূলত ইউননান প্রদেশের সিসুয়াংবাননা তাই স্বায়ত্তশাসিত এলাকা, ত্য হং তাই ও চিংপো স্বায়ত্তশাসিত এলাকা এবং কেং মা ও মেং লিয়ান নামক দুটি জেলায় তাদের বাস। বাকিরা ইউননান প্রদেশের ৩০টির বেশি জেলায় বাস করেন এবং কোনো কোনো তাই জাতির মানুষ চীন ও মিয়ানমার, লাওস ও ভিয়াতনামের সীমান্তে বাস করে বলে তাদেরকে ডাকা হয় 'সীমান্ত তাই' বলে।

তাই জাতির গ্রামগুলো সাধারণত পাহাড়ের মাঝখানে উপত্যকায় অবস্থিত। সমুদ্রপুষ্ঠ থেকে এসব উপত্যকার গড় উচ্চতা ৫০০ থেকে ১৩০০ মিটার। ওখানে সারা বছর আবহাওয়া উষ্ণ এবং উর্বর জমি ফসলের জন্য উপযুক্ত। চাল, চিনি বেত, কফি, রাবার এখানকার বৈশিষ্টসম্পন্ন কৃষিপণ্য। গড় তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে কখনও তুষার পড়ে না। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০০০ থেকে ১৭০০ মিলিমিটার এবং মূলত মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। এখানে ঋতু দু'টি: বর্ষাকাল ও গরমকাল। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গরমকাল।

তাই জাতিঅধ্যুষিত এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর। সিসুয়াংবাননা এশিয়ার বড় পাতা চা'র আদি স্থান এবং বিশ্ববিখ্যাত পুয়ের (Pu'er) চা-এর মূল উত্পাদনকেন্দ্র। সিসুয়াংবাননার মোট আয়তনের শতকরা ৫৭ ভাগই বনাঞ্চল এবং ত্য হং এলাকার মোট আয়তনের শতকরা ৪৬ ভাগই বনাঞ্চল। নদী ও বনের সীমান্তে প্রচুর ময়ূর দেখা যায় বলে একে 'ময়ূর জেলা'-ও ডাকা হয়।

অঞ্চল অনুযায়ী, তাই জাতির ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। যেমন, সিসুয়াংবাননার তাই জাতি নিজেদের ডাকে 'তাই ল্য', ত্য হং অঞ্চলের তাই জাতির মানুষ নিজেদের ডাকে 'তাই না' বলে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর কেন্দ্রীয় সরকার তাই জাতির মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী এ জাতিকে 'তাই' নাম দেয়।

তাই জাতির ত্য হং, সিসুয়াংবাননা ও চিন পিং—এই তিনটি আঞ্চলিক ভাষা আছে। তাই জাতির ভাষার পিনইং একেক অঞ্চলে একেক রকম। পিনইং ৫ ধরনের। এর মধ্যে চারটি ভারতের সংস্কৃত ভাষার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা। সিসুয়াংবাননা ও ত্য হং আঞ্চলিক ভাষা বেশি ব্যবহৃত হয়। ২০ শতাব্দীর ৫০-এর দশকে দুটি তাই ভাষার পিনইংকে একটু উন্নত করা হয় এবং উন্নত ভাষাকে 'নতুন তাই ভাষা' নামকরণ করা হয়।

তাই জাতির ছেলেরা শরীরে ট্যাটু আঁকে। ১১ বছর বয়স থেকে তারা শরীরে ট্যাটু আঁকতে শুরু করে। সাধারণত তারা বাঘ, চিতাবাঘ, সিংহ, ড্রাগন, সাপ এবং ঈগলে ছবি ট্যাটু করে। সারা শরীর ট্যাটু করাতে এক সপ্তাহের মতো সময় লাগে।

চাল তাই জাতির মূল খাদ্য। ত্য হং তাই জাতির মানুষ সাধারণত ভাত বেশি খায় এবং সিসুয়াংবাননার তাই জাতি বেশ আঠালো ভাত খায়। তাই জাতির বিখ্যাত একটি খাবার 'বাঁশের ভাত'। ভাত বাঁশের চোঙের মধ্যে রেখে আগুনে রান্না করা হয়। তা ছাড়া, তারা আনারস এবং কলা পাতাসহ নানা জিনিষের মধ্যে চাল রেখে ভাত রান্না করে। এতে ভাতের বিশেষ সুবাস তৈরি হয়।

তাই জাতির মানুষ পোকা খায়। তাই জাতির অন্য বিশেষ একটি খাবার শৈবাল। বসন্তকালে নদীর পাথর থেকে শৈবাল সংগ্রহ করে রোদে শুকায় তারা। তাই জাতির মানুষ

ফুলও খায়। তারা প্রায় ৩০ ধরনের ফুল খায়।

তাই জাতির মানুষ সাধারণত চার ধরনের খাবার খায়: কাঁচা, তাজা, ঝাল ও খামি। তাই জাতির মানুষ মনে করে খামি স্বাদের খাবার খাওয়া হজম ও গরম দূর করার জন্য সহায়ক; ঝাল খাবার খেলে ক্ষুধা বাড়ে ও শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে। বাঁশের অঙ্কুর তাই জাতির বিখ্যাত খাবার এবং যে-কোনো তাই জাতির পরিবারে ৫০ কেজির বেশি বাঁশের অঙ্কুর সংরক্ষণ করা হয়।

বাঁশ দিয়ে তৈরি ঘর তাই জাতির বেশিষ্ট্যসম্পন্ন বাড়ি। মাটি থেকে দু'মিটার উপর থেকে দুই তলার বাড়ি তৈরি করে তাই জাতির মানুষ। প্রথম তলা গুদাম হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং মানুষ থাকে দ্বিতীয় তলায়।

তাই জাতির উত্সব মূলত ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। তারা বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাস করে। তাই পঞ্জিকা অনুযায়ী নবম মাসের ১৫ তারিখ তাদের 'দরজা বন্ধ' দিবস এবং দ্বাদশ মাসের ১৫ তারিখ 'দরজা খোলা' দিবস। 'দরজা বন্ধ' দিবস থেকে 'দরজা খোলা' দিবস পর্যন্ত—এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় আচার পালিত হয়।

পানি বিচ্ছুরণ উত্সব, তাই জাতির নববর্ষের উত্সব। তিন দিন ধরে পালিত হয় এ উত্সব। সিসুয়াংবাননায় প্রতিবছর নববর্ষে ড্রোগন নৌকা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।

ময়ূর নাচ তাই জাতির সবচেয়ে বিখ্যাত একটি নাচ। প্রতিবছর বিভিন্ন ধর্মীয় উত্সব ও নববর্ষের সময়ে ময়ূর নাচ করে তাই জাতির মানুষ। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040