চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধ অব্যাহত থাকায় উদ্বিগ্ন মার্কিন অধিবাসীরা
  2019-05-14 15:21:41  cri
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর আমদানিশুল্কের পরিমাণ ১০ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়। গতকাল (সোমবার) চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের শুল্ক কমিটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এ ব্যবস্থার কারণে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক বিরোধ থামছে না। এটি দু'পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্যিক মতভেদ দূর করার নীতি লঙ্ঘন করেছে, দু'পক্ষের স্বার্থ নষ্ট করেছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ও নিজের যৌক্তিক স্বার্থ রক্ষা করার জন্য চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করতে হবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধের প্রভাবে নিউইয়র্ক শেয়ার বাজারের সূচক নিম্নমুখী হয়েছে। গোল্ডম্যান স্যাচ গ্রুপসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল জানায়, অতিরিক্ত শুল্ক মার্কিন অর্থনীতির ওপর বিশাল আঘাত হানবে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমি এ বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।

বর্তমানে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক বিরোধসংক্রান্ত বিষয় প্রতিদিন মার্কিন আর্থিক গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়ে থাকছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেক মার্কিন শিক্ষার্থী। মার্কিন সরকার হঠাত্ করে এবারের শুল্কের পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, তা দু'পক্ষের বাণিজ্যিক বিরোধ পরিস্থিতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এভাবে মার্কিন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের প্রবণতা নষ্ট হবে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। পাশাপাশি, মার্কিন অর্থনীতির ওপর শুল্কের প্রভাব সংক্রান্ত গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পুঁজি ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট আর্থিক কোম্পানি।

সম্প্রতি গোল্ডম্যান স্যাচের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, গবেষণা থেকে স্পষ্ট যে, চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে, তার নেতিবাচক ফলাফল সবই মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ভোক্তাদের বহন করতে হয়েছে। সুতরাং, শুল্কের সব ব্যয় চীনারা দিচ্ছেন- তা সঠিক নয়। রিপোর্টে আরও বলা হয়, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক বিরোধ অব্যাহত থাকলে, যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি'র প্রবৃদ্ধির হার ০.৪ শতাংশ কমে যাবে, মার্কিন শেয়ার বাজারের অবস্থা আরও দুর্বল হয়ে যাবে। তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও ব্যাপকভাবে কমবে।

রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থিত 'দ্য ট্রেড পার্টনারশিপ' মার্কিন কোম্পানিও সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, এবারের শুল্ক বাড়ানোর কারণে এ বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। পাশাপাশি, প্রত্যেক মার্কিন পরিবারের জীবনযাপনের বার্ষিক গড় ব্যয়ের পরিমাণ ৭৬৭ মার্কিন ডলার বেড়ে যাবে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, যদি যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তাহলে মার্কিন অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও ২০ লাখ কমে যাবে। প্রত্যেক মার্কিন পরিবারের জীবনযাপনের বার্ষিক গড় ব্যয়ের পরিমাণ ২২৯৪ মার্কিন ডলার বাড়বে।

তা ছাড়া, চীনসহ বহু দেশের সঙ্গেই বাণিজ্যযুদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে মার্কিন পণ্যের ওপর শাস্তিমূলক শুল্কও আরোপ করেছে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহ। গত ১০ মে মার্কিন কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বলা হয়, বাণিজ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফসল ও পশু সরবরাহ খাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীন ইতোমধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের শুল্ক কমিটি জানায়, অতিরিক্ত শুল্ক খাতের সমন্বয় করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাবাদ ও বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদের পাল্টা জবাব। এতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে এক পারস্পরিক কল্যাণকর চুক্তিতে পৌঁছাবে বলে আশা করে চীন।

(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/তুহিনা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040