রুইজিন শহরের ইয়েফিং থানার হুয়াংশা গ্রামের হুয়াউ হল স্থানীয় বিখ্যাত লাল বাহিনী গ্রাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হুয়াউ'র প্রতিটি পরিবার বিপ্লবে অংশ নেয়। ২০১২ সালের আগে হুয়াউ অত্যন্ত দরিদ্র ছিল। গ্রামটির অধিকাংশ বাসিন্দা অত্যন্ত দরিদ্র ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সমাজের বিভিন্ন মহলের সহায়তায় হুয়াউতে ৬৬টি তিন-তলা আবাসিক ভবন নির্মিত হয়। গ্রাসবাসীদের বসবাসের অবস্থা এতে অনেক উন্নত হয়েছে।
৮৫ বছর বয়সী হুয়া ছং ছি হলেন বীরের বংশধর। আগে তাঁর পরিবারের সকল সদস্য তিনটি মাটির ঘরে থাকতেন। তাঁর ৬ সন্তান বাইরে কাজ করে। প্রতিবছর বসন্ত উত্সবের সময় তারা পালাক্রমে বাড়ি ফিরতেন। কারণ, তিনটি ঘরে সবাই একসঙ্গে থাকতে পারতেন না। কিন্তু নতুন আবাসিক ভবন নির্মিত হওয়ার পর হুয়া ছং ছি'র পরিবার তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছে। প্রতি অ্যাপার্টমেন্টের আয়তন দুই শতাধিক বর্গমিটার। ২০১৫ সালের বসন্ত উত্সব হুয়া ছং ছিং'র পরিবার প্রথমবারের মতো সবাই একসঙ্গে কাটিয়েছে। নতুন সুখী জীবন সম্পর্কে হুয়া ছং ছি বলেন, "চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে (সিপিসি) ধন্যবাদ জানাই। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে ধন্যবাদ জানাই। সিপিসি'র কেন্দ্রীয় কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই।"
সঠিক শিল্প বাছাই, লিডিং শিল্প গড়ে তোলা, ও বড় অংকের অর্থ বরাদ্দের ভিত্তিতে হুয়াউ পেশাদার সমবায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ব্যাপকভাবে বৈশিষ্ট্যময় কৃষিশিল্প উন্নত হয়। হুয়া ছং ছি'র দ্বিতীয় সন্তান হুয়া শুই লিন গ্রামে ফিরে এসে কৃষিকাজ শুরু করেন। শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচননীতির সহায়তায় হুয়া শুই লিন কৃষিক্ষেত্র সংকুচিত করে সবজি ও ফল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে হুয়া শুই লিন সফলভাবে দারিদ্র্যবিমোচনের পথে চলছেন। তাঁর সবজি ও ফল বর্তমানে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ও কাছাকাছি এলাকায় বিক্রি হয়।
হুয়া শুয়েই লিন পেয়ারা ফল চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি সাংবাদিককে বলেন, "আমার পেয়ারা গাছ বড় হয়েছে, ফসল হয়েছে এবং আমাদের আয় ক্রমশ বাড়ছে। চলতি বছরে আমার আয় প্রায় ৩০-৪০ হাজার ইউয়ান হবে। আমার নিজের সামর্থ্য বেড়েছে এবং আমি এখন নিজের পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারি।"
গ্রামবাসীরা ক্রমবর্ধমান হারে ফল চাষ শুরু করেন। হুয়াউ'র বৈশিষ্ট্যময় কৃষিশিল্প ক্রমান্বয়ে উন্নত হয়েছে। বৈশিষ্ট্যময় শিল্প উন্নয়নে প্রতিবছরে হুয়াই'র পরিবারের গড় আয় ৩০ হাজার ইউয়ান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পুরাতন বিপ্লব এলাকা রুইজিনে দরিদ্র গ্রামগুলো হুয়াউ'র মতো অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দরিদ্র বাসিন্দাদের অনেকে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। তাঁদের সুখী জীবন শুরু হয়েছে।
রুইজিন শহরের শানছি গ্রাম একটি বৈশিষ্টসূচক দরিদ্র গ্রাম। ২০১৫ সালে শানছি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিবছরে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৪৩৫০ ইউয়ান। নাগরিকদের, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর টেকসই আয়বৃদ্ধির জন্য শানছি গ্রাম চংস্যিং কৃষি ও শেংওয়েইসহ বিভিন্ন বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে। প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য উচ্চ মানের সবজি ও ফল চাষকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদেরকে সবজির চারা, চাষের প্রযুক্তি ও বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। কৃষকদের উত্পাদিত ফসলও তারা কিনে থাকে।
শানছি গ্রামের বাসিন্দা হুয়াং স্যিয়াও ছুয়ান আগে গুয়াংদংয়ে কাজ করতেন। গ্রামে চুস্যিং আধুনিক কৃষি শিল্প ক্ষেত্র নির্মিত হওয়ার পর তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি শিল্প ক্ষেত্রে কাজ করার পাশাপাশি সবজি চাষের প্রযুক্তি শেখেন। এ সম্পর্কে হুয়াং স্যিয়াও ছুয়ান বলেন, "বাইরে কাজ করার সময় আমি খুবই ব্যস্ত ছিলাম এবং খরচ বেশি ছিল, সেজন্য সঞ্চয় ছিল না। বর্তমানে আমার মাসিক বেতন ৪৫০০ ইউয়ান আরএমবি। কোম্পানি নিয়মিত আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়। বিশেষজ্ঞরা আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দেন। আগে আমি সবজি চাষ করতে চাইতাম, কিন্তু ভাল প্রযুক্তি ছিল না। এখন আমি প্রযুক্তি শিখেছি। আমি একটি ক্ষেত ঠিকা নিয়ে সবজি ও ফল চাষ করবো।"
শানছি গ্রামের বাসিন্দাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, গ্রামটির কালেকটিভ আয়ও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। শানছি গ্রামে দারিদ্র্যবিমোচনের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে গ্রামের কমিটি প্রতিবছর আয় করছে প্রায় ৬ লাখ ইউয়ান।
শানছি গ্রামের চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) কমিটির সম্পাদক হুয়াং স্যিয়াও ফা সাংবাদিককে বলেন, শানছি গ্রাম সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামটি সুন্দর হয়েছে, বাসিন্দাদের জীবন আরো সুখের হয়েছে। গ্রামটির অবকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে। আমাদের আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।"
স্থানীয় বাসিন্দাদের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে রুইজিন সফলভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়। রুইজিন হল চিয়াংসি প্রদেশের পুরাতন বিপ্লব এলাকাগুলোর মধ্যে প্রথম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হওয়া জেলা। ২০১৮ সালে রুইজিন চীনের দশটি শ্রেষ্ঠ দারিদ্র্যবিমোচন জেলার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রুইজিন সমগ্র জেলায় ১৮৬৩৯টি পরিবারের ৭৬৯৩৫ জনকে দারিদ্র্যমুক্ত করে। দারিদ্র্য সৃষ্টির হার ২০১৪ সালের শেষ দিকের ১৪.৩ শতাংশ থেকে ০.৯১ শতাংশে নেমে আসে। রুইজিন জেলায় গ্রামবাসীদের মাথাপিছু আয় ২০১৫ সালের ৮২৫১ থেকে ২০১৮ সালের ১১৩৫৫ ইউয়ানে উন্নীত হয়।
রুইজিন জেলার দারিদ্র্যবিমোচন কার্যালয়ের পরিচালক জেং নেং গুই বলেন, রুইজিন ভবিষ্যতে দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ জোরদার করতে থাকবে, যাতে দরিদ্র নাগরিকদের আয় স্থিতিশীল থাকে, দারিদ্র্যবিমোচনের মান উন্নত ও গ্রামের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, "আমরা শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন, দারিদ্র্যবিমোচন নিশ্চিতকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, গণসেবা ইত্যাদি কাজে আরও উন্নতি করবো। গ্রামের গোষ্ঠী অর্থনীতি আরও উন্নত এবং গ্রামের সভ্যতা ও বসবাসের পরিবেশ আরও উন্নত করা হবে। বাসিন্দাদেরকে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।"