সংলাপের আগে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে চীন বলে, ১১তম দফায় 'চীন-যুক্তরাষ্ট্র আর্থ-বাণিজ্যিক সংলাপ' থেকে চীন আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে এবং যৌথভাবে সহযোগিতা ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করবে। আলোচনা শেষে এক সাক্ষাত্কারে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ হ্য জানান, শিগগিরি বেইজিংয়ে পরবর্তী আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, এ আচরণ অন্যের পাশাপাশি নিজের জন্যও ক্ষতিকর। চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ আবারও শুরু হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক। এর কারণ, যুক্তরাষ্ট্র চীনের আন্তরিকতা উপেক্ষা করে নিজেকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং চীনের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ আচরণ পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমতা ও সমন্বিত অর্জনের নীতির লঙ্ঘন। সংলাপ দু'পক্ষের আন্তরিকতার ব্যাপার। চীন বাস্তব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আন্তরিকতা প্রদর্শন করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া। চীন সহযোগিতার মাধ্যমে বাণিজ্যিক সমস্যা সমাধান করতে ইচ্ছুক। তবে চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থ ও জনগণের মূল স্বার্থ রক্ষা করা হবে।
চীন মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে চীনের উন্নয়নের পথচলা থামানোর অপচেষ্টা করছে। এ ষড়যন্ত্র সফল হবে না। গত এক বছরে চীন সরকার সঠিকভাবে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। চীন নিজের কার্যক্রম পরিচালনা করতে এবং আরও উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে গুণগতমানের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। বাণিজ্যযুদ্ধের এ পরিস্থিতি দু'দেশের জনগণ ও বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর। বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যেই দু'পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক সংলাপ চলে। এতে বোঝা যায়, সংলাপ ও লড়াই সম্ভবত চীন-যুক্তরাষ্ট্র আর্থ-বাণিজ্যিক সংঘাত সমাধানের পথে স্বাভাবিক অবস্থায় পরিণত হয়েছে।
শুল্ক বাড়ানোর মার্কিন বিবৃতির দু'ঘণ্টার মধ্যেই উত্তর দিয়েছে চীন এবং চীন আগের মতো দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে। চীন বলছে, সংলাপের দরজা খোলা রয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র লড়াই অব্যাহত রাখলে চীন শক্তিশালী পাল্টা জবাব দেবে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চীন-যুক্তরাষ্ট্র আর্থ-বাণিজ্যিক সংলাপে ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে মাঝখানে বেশ কিছুদিন বাণিজ্যযুদ্ধ স্থগিত ছিল। এবার দু'পক্ষ নতুন দফা সংলাপ শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র হঠাত্ শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এ অবস্থা বহুবার ঘটেছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। চীন সংলাপে বসতে চায়, তবে লড়াই শুরু হলে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চীন বরাবরই একতরফা কোনো পদক্ষেপ নয়, বরং সংলাপের মাধ্যমে আর্থ-বাণিজ্যিক সমস্যা সমাধানের আশা করে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ, এমন কি বিশ্বের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে খোদ মার্কিন প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন', 'যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প কাউন্সিল'সহ দশটিরও বেশি সংস্থা সম্প্রতি মার্কিন সরকারের এ ঘোষণার প্রতিবাদ করেছে। তারা বলেছে, শুল্ক বাড়ালে মার্কিন ভোক্তাদেরই তা পরিশোধ করতে হবে। মার্কিন সরকারের উচিত চীনের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক সংলাপ জোরদার করা, যাতে দ্রুত চুক্তিতে পৌঁছানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের' দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেন, হঠাত্ এক সপ্তাহের মধ্যে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা মার্কিন প্রতিষ্ঠান—বিশেষ করে ক্ষুদ্র আকারের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিশৃঙ্খল করে দেবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান কমে যাবে এবং দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে।
বাস্তবতা হলো, বাণিজ্যযুদ্ধ কারও বিজয় ডেকে আনবে না। বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনৈতিক স্বত্বার এ লড়াইয়ে গোটা বিশ্বই ক্ষতির মুখে পড়বে।
মোহাম্মদ তৌহিদ/সিআরআই