0510
|
জন্মগতভাবেই গানের অনুরক্ত ছিলেন আবদুল আলীম। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে গান গাইতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। শিল্পীর বয়স যখন মাত্র দশ-এগারো বছর তখন তাঁর এক সম্পর্কিত চাচা গ্রামের বাড়িতে কলের গান বা গ্রামোফোন নিয়ে আসেন। তিনি তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ভাষা আন্দোলনের বীর শহিদ বরকত ছিলেন তাঁর সহপাঠী। প্রায় প্রতিদিনই তিনি চাচার বাড়িতে গিয়ে গান শুনতেন। এভাবে ছোট্ট বয়সেই শুরু করেন সংগীতচর্চা। গ্রামের লোক আবদুল আলীমের গান শুনে মুগ্ধ হতো। পালা-পার্বণে তাঁর ডাক পড়তো। আবদুল আলীম গান গেয়ে আসর মাতিয়ে তুলতেন। পড়াশোনার জন্য গ্রামের স্কুল তাঁকে বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। কলকাতা করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র প্রখ্যাত জননেতা সৈয়দ বদরুদ্দোজা ও আবদুল আলীম ছিলেন একই গ্রামের লোক। তিনি এ নবীন শিল্পীকে নিয়ে আসেন কলকাতায় নিজ বাসভবনে।
সৈয়দ বদরুদ্দোজার ছোটভাই সৈয়দ গোলাম অলি ছিলেন একজন প্রখ্যাত ওস্তাদ। তিনি আবদুল আলীমের সুরের যাদুতে মুগ্ধ হন। এরপর তিনি আবদুল আলীমকে গানের তালিম দিতে থাকেন। কিন্তু কিছুদিন কোলকাতা থাকার পর তাঁর মন ছুটলো ছায়াঘন পল্লীগ্রাম তালিবপুরে। ফিরে এলেন গ্রামে। কিন্তু ওখানে গান শেখার সুযোগ কোথায়? তাই বড় ভাই শেখ হাবিব আলী একরকম ধরে বেঁধেই আবার কলকাতা নিয়ে যান তাঁকে। সেখানে তিনি আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সাক্ষাৎ পান। ধীরে ধীরে তাঁদের ঘনিষ্ঠজন হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁরা শিল্পী আলীমকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের একমাস পূর্বে আবদুল আলীম কলকাতা ছেড়ে আবারো গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু গ্রামে না থেকে গুরুজনের পরামর্শে ঐ বছরের ডিসেম্বর মাসেই তিনি ঢাকা আসেন। পরের বছর ঢাকা বেতারে অডিশন দেন এবং প্রশংসনীয় পারফরমেন্স দেখিয়ে অডিশনে পাশ করলেন। ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসের ৯ তারিখে তিনি বেতারে প্রথম গাইলেন তিনি। এরপর আর তাকে থেমে থাকতে হয় নি। বেতার থেকে টেলিভিশন, ঢাকা-কলকাতা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন গানের জাদুকরী সুরের ওপর ভর করে। চলুন তাঁর আরও কয়েকটি গান শুনে নেই।