0511jingji
|
১. চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যুরোতে অনুমোদনপ্রাপ্ত ৯টি কিউএফআইআই (কোয়ালিফায়েড ফরেন ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর) চীনে বিনিয়োগ করেছে ৪২০ কোটি মার্কিন ডলার। পাশাপাশি, এসময় আরও ৫টি কিউএফআইআই চীনা মুদ্রায় বিনিয়োগ করেছে ৯৮০ কোটি ইউয়ান। চীনের জাতীয় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ব্যুরো সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
ব্যুরো আরও জানায়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত মোট ১৩টি কিউএফআইআই চীনে বিনিয়োগ করেছে মোট ৪৭৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০১৮ সালের গোটা বছরের মোট পরিমাণের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি, এসময় আরও ১২টি কিউএফআইআই চীনা মুদ্রায় বিনিয়োগ করেছে ২৪০০ কোটি ইউয়ান, যা ২০১৮ সালের মোট বিনিয়োগের অর্ধেকের বেশি।
২. চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় পরিষদের নিয়মিত সভায় বলেছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে চীনে হাইওয়ে-ফি তুলে দেওয়া হবে। দেশের ভিতরে নাগরিকদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করতে এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যাতায়াতের ব্যয় কমাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে, সড়কপথে এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যেতে নাগরিকদের হাইওয়ে-ফি দিতে হবে না।
সভায় আরও জানানো হয়, চীনের হাইওয়ে-ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হবে; মালবাহী গাড়ি না-থেমেই অনলাইনে নির্ধারিত ফি দিতে পারবে; সংশ্লিষ্ট হাইওয়ে স্টেশানে মালবাহী গাড়ির ওজন স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাপার ব্যবস্থা করা হবে। তা ছাড়া, কৃষিজাত পণ্য বা শাকসবজি বহনকারী যানবাহনের ফি কমানো হবে বা একেবারে বাতিল করা হবে। পাশাপাশি, নতুন নিয়মের ফলে যেসব হাইওয়ে ফি-স্টেশান বন্ধ হয়ে যাবে, সেসব স্টেশানের কর্মীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
৩. ১২৫তম চীন আমদানি-রফতানি মেলা তথা ক্যান্টন মেলা সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এবারের মেলায় রফতানি-চুক্তির পরিমাণ ও অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। তবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলে চীনা কোম্পানিগুলো রফতানি-আদেশ পেয়েছে আগের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি।
২১৩টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ২ লাখ ব্যবসায়ী ১২৫তম বসন্তকালীন ক্যান্টন মেলায় অংশ নিয়েছেন, যা গত বছরের বসন্তকালীন মেলার চেয়ে ৩.৮৮ শতাংশ কম। আর এবারের মেলায় রফতানি-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২৯৭৩ কোটি মার্কিন ডলারের, যা গত বছরের চেয়ে ১.১ শতাংশ কম।
এদিকে, এবারের মেলায় 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে চীনের রফতানিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ১০৬৩ কোটি মার্কিন ডলারের, যা গত বছরের চেয়ে ৯.৯ শতাংশ বেশি। আর 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের ৮৮ হাজার ব্যবসায়ী এবারের মেলায় অংশ নেন, যা মোট অংশগ্রহণকারীর ৪৫ শতাংশ।
৪. চীনের রাষ্ট্রীয় বিদেশি মুদ্রা পরিচালনা ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চীনে বিদেশি মুদ্রার মজুত ছিল ৩ ট্রিলিয়ন ৯৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মার্চ মাসের তুলনায় ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কম। এর মাধ্যমে চীনের বিদেশি মুদ্রার মজুতের টানা ৫ মাসের বৃদ্ধির ধারার অবসান ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদিও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও আর্থিক বাজারের অনির্দিষ্ট উপাদান অনেক বেশি, তবে চীনের বিদেশি মুদ্রা মজুতের আকার মোটামুটি স্থিতিশীল এবং এর ভিত্তি দৃঢ় থাকবে।
এপ্রিল মাসে চীনের বিদেশি মুদ্রার মজুত কিছুটা হ্রাস পেলেও, চীনের রাষ্ট্রীয় বিদেশি মুদ্রা পরিচালনা ব্যুরোর মুখপাত্র ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ওয়াং ছুন লিং মনে করেন, এপ্রিল মাসে, চীনের বিদেশি মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল ছিল। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে মার্কিন ডলারের সূচক ০.২ শতাংশ বেড়েছে। মুদ্রা বিনিময় হার এবং সম্পদমূল্যের পরিবর্তনসহ বিভিন্ন উপাদানের কারণে চীনের বিদেশি মুদ্রার মজুত কমেছে।
চীনের বিদেশি মুদ্রা পুঁজি বিনিয়োগ গবেষণাগারের প্রধান থান ইয়া লিং বলেন, বিদেশি মুদ্রা মজুত হ্রাসের সঙ্গে রফতানির সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, "চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের সূচক আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। কারণ, বিদেশি মুদ্রার উত্স প্রধানত রফতানির মুনাফার সঙ্গে সম্পর্কিত। আসলে, মুদ্রা বিনিময় হারে বড় পরিবর্তন ঘটেনি ও মার্কিন ডলার এখন স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। তাই চীনের বিদেশি মুদ্রার মজুত হ্রাস অস্বাভাবিক নয়।"
২০১৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে চীনের বিদেশি মুদ্রা মজুতের পরিমাণ একটানা পাঁচ মাস ধরে বেড়েছে। এরপর এপ্রিলে মজুত হ্রাস পেল। থান ইয়া লিং মনে করেন, ভবিষ্যতে চীনের বিদেশি মুদ্রা মজুতের পরিমাণ ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নামার সম্ভাবনাও রয়েছে। থান ইয়া লিং বলেন, বর্তমানে চীন কাঠামোগত সুসংহতকরণের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। তাই বিদেশি মুদ্রা মজুতসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের ওঠানামা স্বাভাবিক ব্যাপার। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিদেশি মুদ্রা মজুত বাড়বে বলেও তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
৫. চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১.৬ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনে গ্যাসের ব্যবহার ছিল ৭৭০০ কোটি ঘনমিটার। চীনের উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন এ তথ্য জানায়। কমিশন জানায়, ২০১৮ সালে চীনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ ছিল ২৮০৩০ কোটি ঘনমিটার।
৬. ২২তম আসিয়ান-চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া (১০+৩) অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান পর্যায়ের সম্মেলন সম্প্রতি ফিজির নাদি-তে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অর্থনীতির সামষ্টিক পরিস্থিতি, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে আর্থিক খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা, দেশগুলোর আর্থিক ব্যবস্থা সংস্কার, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলনশেষে একটি যৌথ-ঘোষণাও প্রকাশিত হয়।
সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল থাকলেও, আসিয়ানভুক্ত দশটি দেশ এবং চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। তবে, বাণিজ্যিক সংঘাত, আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিবেশের অবনতি, চাহিদা হ্রাস, ইত্যাদি ফ্যাক্টর বৈশ্বিক অর্থনীতির অগ্রগতির পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। এ অবস্থায়, আসিয়ান এবং চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার উচিত, নিজ নিজ অবস্থা অনুসারে, মুদ্রানীতি ও আর্থিকনীতি বাস্তবায়ন করা।
সম্মেলনে বিভিন্ন পক্ষ পুনরায় জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা বহুমুখী বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ও আঞ্চলিক উন্মুক্তকরণ নীতি সমর্থন করে এবং যে-কোনো ধরনের বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করে। বিভিন্ন পক্ষ এব্যাপারে একমত হয় যে, আঞ্চলিক বিনিয়োগ বাড়ানো হবে এবং নিজ নিজ মূলধন বাজার সম্প্রসারিত করা হবে।
৭. চলতি বছর শ্রম দিবসের চারদিনের ছুটিতে চীনে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৯ কোটি। আর এসময় অভ্যন্তরীয়ণ পর্যটন খাতে আয় হয়েছে ১১,৭৬৭ কোটি ইউয়ান। চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগ গতকাল সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
৮. 'চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর' প্রকল্পের আওতায় নির্মিত কাসিম পাওয়ার স্টেশন উত্পাদনের ক্ষেত্রে সম্প্রতি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি এই তথ্য জানানো হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে উত্পাদনে যাবার পর থেকে কেন্দ্রটি এ পর্যন্ত ১০০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ উত্পাদন করেছে, যা এ সময়কালে পাকিস্তানের মোট উত্পাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ। কাসিম পাওয়ার স্টেশন চীনের বিদ্যুৎ নির্মাণ গোষ্ঠী ও কাতার রাজপরিবারের এএমসি কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত। বিদেশে কোনো বিদ্যুৎ-কেন্দ্রে চীন এর আগে এতো বেশি বিনিয়োগ করেনি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল কাসিম পাওয়ার স্টেশন আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ উত্পাদন শুরু করে।
৯. ইরানের রাজধানী তেহরানে সম্প্রতি ২৪তম আন্তর্জাতিক তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা পয়লা মে থেকে ৪ঠা মে পর্যন্ত চলে। তেহরান আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীকেন্দ্রে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করে দেশি-বিদেশি এক সহস্রাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরানের তেলমন্ত্রী বিজন নামদার জঙ্গেনাহ বলেন, ইরানের অপরিশোধিত তেল রফতানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। নতুন উপায় খুঁজে বের করবে ইরান। (আলিমুল হক)