কাজাখ জাতির লোকসংখ্যা ১২.৩ লাখের বেশি। তারা মূলত সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ই লি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য, মু লেই কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত জেলা, পালিখুন কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত জেলা ও উরুমুছি শহর ও ছাং চি হুই স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যে বাস করে। একসময় কান সু এবং ছিং হাই প্রদেশে বাস করতো কাজাখ জাতির মানুষ। তারা ১৯৩৪ সালে সিন চিয়াংয়ের যুদ্ধবাজ প্রশাসনের নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছিল এ দুটি প্রদেশে। পরে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর সিপিসি ও সরকারের সাহায্যে তাদের অধিকাংশ ১৯৮৪ সালে সিন চিয়াংয়ে ফিরে আসে।
কাজাখ ভাষা তুর্কী ভাষার একটি শাখা। দীর্ঘকাল ধরে তারা হান, উইগুর ও মঙ্গোলীয় জাতির সঙ্গে মিলেমিশে চলে আসছে বিধায়, তাদের ভাষার ওপর এই তিন'টি জাতির ভাষার প্রভাব পড়েছে। কাজাখ মানুষ অন্য তিন'টি জাতির ভাষার শব্দ ব্যবহার করে এবং কেউ কেউ এই দু'টি জাতির ভাষা বলতেও পারে। ইতিহাসে কাজাখ জাতি নানান ধরনের লিখিত ভাষা ব্যবহার করতো। ১৯৮০ সাল থেকে কাজাখ জাতির ভাষায় আরবি বর্ণমালার ব্যবহার শুরু হয়।
কাজাখ একটি যাযাবর জাতি। তাদের বসবাসের এলাকায় সারা বছরের গত বৃষ্টিপাত ২০০-৩০০ মিলিমিটার এবং গড় তাপমাত্রা কম। যাযাবর জাতি বলে কাজাখ মানুষের স্থায়ী বাড়িঘর নেই। ঋতু অনুযায়ী তারা সাধারণত তিনটি বসতি স্থাপন করে। বসন্তকাল ও শরত্কাল তারা একই জায়গায় থাকে। কয়েকটি কাজাখ পরিবার একসাথে বাস করে; পরিবারগুলোর মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকে। তারা একসাথে পশুপালন করে। তারা তাবুতে বাস করে এবং এ তাবু ৩০ মিনিটের মধ্যে গুটিয়ে ফেলা যায়।
প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে পরিবর্তী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত, প্রায় ছয় মাস ধরে কাজাখ জাতির মানুষ স্থায়ী একটি জায়গায় থাকে। তখন তারা সাধারণত নদীর তীরে তাবু খাটায়। তবে যাযাবর জাতি হিসেবে তাদের জন্য চিকিত্সা ও শিক্ষা একটি সমস্যা ছিল। তাই সিপিসি ও সরকার কাজাখ জাতি মানুষের জন্য স্থায়ী বা অর্ধ-স্থায়ী বসতি নির্মাণ করে দিয়েছে। বিংশ শতাব্দীর সত্তুরের দশক থেকে কাজাখ জাতির মানুষ ইটের তৈরি ঘরে বাস করা শুরু করে।
কাজাখ জাতির পোশাকও বেশিষ্ট্যময়। শীতকালে কাজাখ পুরুষ যে ধরনের টুপি পড়ে তাকে 'তুমাখ' বলে ডাকা হয়। মেষচর্ম বা শিয়ালের চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয় এই টুপি। অন্য একটি টুপির নাম 'ভোর্ক'। গোলাকৃতির এ টুপি ভোঁদড়ের চামড়া দিয়ে তৈরি। তাদের বেল্ট এবং জুতাও চামড়ার তৈরি। কাজাখ নারীর পোশাক আরও জটিল। নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোশাকও বদলে যেতে থাকে। ছোট বেলা থেকে মেয়েরা 'তাখয়া' নামে এক ধরনের টুপি পরে। আর বিয়ের সময় 'শউক' (Shawuk) নামে এক ধরনের টুপি পরে। ছোট মেয়ে, কিশোর মেয়ে, বিবাহিত নারী-র পোশাকের অলংকরণ ভিন্ন রকমের হয়।
কাজাখ জাতির মূল খাবার মাংস, দূধ, চা। তারা প্রতিদিন চা খায়। শীতকালে তারা মাংস দিয়ে সসেজ তৈরি করে এবং বসন্তকাল পর্যন্ত এটা তাদের মূল খাবার।
নিয়ম অনুযায়ী, কাজাখ পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যেতে হয়; গড়ে তুলতে হয় নিজের পরিবার। পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়। মেয়ে বিয়ের পর সন্তান হলে পিতার কাছ থেকে কিছু সম্পত্তি পেতে পারে।
কাজাখ জাতির মানুষ ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করে। তাই তারা ইসলামী উত্সব পালন করে। দুটি ঈদ ছাড়া তারা নওরোজ উত্সবও পালন করে। নওরোজ তাদের নববর্ষের উত্সব। (শিশির/আলিম)