বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রথম থেকেই পূর্বাভাস দিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে- এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়। সৌভাগ্যবশত সরাসরি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত না করে ঘূর্ণিঝড়টি ৩ মে সকালে আঘাত হানে ভারতের উড়িষ্যার পুরী উপকূলে। উড়িষ্যাজুড়ে তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড়টি। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বিস্তীর্ণ জনপদ। ধ্বংসযজ্ঞের অনুপাতে ১৬ জনের প্রাণহানির কমই বলা চলে। জানা গেছে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বাংলাদেশের আশ্রয়কেন্দ্রের মডেলে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয় উড়িষ্যায়। ফলে প্রাণহানি কমানো গেছে। উড়িষ্যার পর পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে ফণী। ততক্ষণে অনেকটা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সেখানে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
৪ মে ভোরে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়া ফণী খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে এটি দেশের মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত হয়। আবহাওয়াবিদদের ধারনা ছিল ফণী খুলনাসহ উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানবে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি ছিল ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়টি গতি পরিবর্তন করে উপকূলী এলাকায় আঘাত না হেনে দেশের মধ্যাঞ্চলে ঢুকে পড়ে। যদি পূর্ণ শক্তিতে সেটি আঘাত হানতো তবে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারতো এবং এর মোকাবেলায় ওইসব অঞ্চলে যথেষ্ট প্রস্তুতিও ছিল না- যতটা ছিল উপকূলীয় অঞ্চলে। তাই ভবিষ্যতে এ জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা এ বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।
বিরোধী দল বিএনপি অবশ্য সরকারের প্রস্তুতিতে বরাবরের মতোই ঘাটতি দেখেছে। দলটির নেতারা বলেছেন, সরকারে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না বলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। তবে তাদের এমন অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রথম থেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তৎপরতা চোখে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ১৯টি উপকূলীয় জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল সরকারের। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসনে এ সব জেলার প্রশাসন দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা কমিটি জরুরি সভা করেছে। আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয় সাইক্লোন শেল্টার, উদ্ধারকারী বাহিনী, ত্রাণসামগ্রী ও মেডিকেল টিম। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়। ছুটি বাতিল করা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের।
যুক্তরাজ্য সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন থেকে সার্বক্ষণিকভাবে ঘূর্ণিঝড়ের খবরাখবর রেখেছেন, দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা কমতি থাকলেও সরকারে প্রচেষ্টার ঘাটতি অন্তত চোখে পড়েনি। সবশেষ ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন থেকেই নির্দেশনা দিয়েছেন দ্রুততম সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন সাংস্থা দুর্যোগ কবলিত এলাকাগুলোতে পৌঁছেছে বলে গণমাধ্যমে খবর হয়েছে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীরও যোগ দিয়েছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে। আশা করা যায় দ্রুততম সময়েই ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাবে।
তবে এবারের ঘূর্ণিঝড়ের শিক্ষা, শুধু উপকূলীয় এলাকায়ই নয়, দুর্যোগ মোকাবেলায় একই সঙ্গে প্রস্তুত রাখতে হবে গোটা দেশকে।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।