শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। শনিবার সকাল ৯টায় খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা হয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ফণীর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ঝড়ো হাওয়ার সাথে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ফণীর আঘাতে শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে নোয়াখালী, ভোলা, বরগুনা ও বাগেরহাট জেলায় ইতোমধ্যে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কবল থেকে বাঁচাতে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জেলাগুলোর ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রিয় শ্রোতা বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং সারাদেশে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী আরও উত্তর- উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় আকারে শনিবার সকাল ৬ টায় সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চল এবং এদের পাশ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং সারাদেশে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
সাগর প্রচণ্ড উত্তাল উঠেছে। সাগরের পানি পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতায় উপকূলে আছড়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল, কৈয়ারবিল, উত্তরধুরুং, লেমশিখালী ও বড়ঘোপ ইউনিয়নের ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নেও ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশের মতো এ বিভাগেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে গেছে উল্লেখ করে বলা হয়, আজ তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো কমতে পারে। গতকাল সকাল ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর কবল থেকে নিরাপত্তার লক্ষ্যে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জেলাগুলোর ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত-পরবর্তী জরুরি উদ্ধারকাজ, ত্রাণ তৎপরতা ও চিকিৎসা সহায়তাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে নৌবাহিনীর ৩২টি জাহাজ ও নৌ কন্টিনজেন্ট। চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা নৌ অঞ্চলে নৌবাহিনীর ৩২টি জাহাজ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় দ্রুততম সময়ে জরুরি ত্রাণসামগ্রী এবং চিকিৎসা সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। শুক্রবার আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।