আমার বন্দর, আমার বাড়ি
  2019-05-01 14:30:33  cri

আজ পয়লা মে, আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস। অনুষ্ঠানের শুরুতে চীন ও বাংলাদেশসহ নানা দেশের কর্মী ও শ্রমিকদের জানাই শুভেচ্ছা। আজকের 'পূবের জানালা' অনুষ্ঠানে আমরা সাধারণ তিনজন কর্মীর গল্প শোনাব। পিতা ও দুই ছেলে, কাজ করেন একই বন্দরে। তারা স্বচোখে দেখেন নিজের জন্মস্থানের পরিবর্তন।

কুয়াং সি প্রদেশের ফেং ছেং কাং শহর চীনের দুটি শহরের অন্যতম যেখানে যেমন একটি সামুদ্রিক বন্দর আছে, তেমনি আছে একটি স্থলবন্দর। ১৯৬৮ সালে এ বন্দর নির্মাণ করা হয় এবং ১৯৯৩ সালে একটি শহরে পরিণত হয়। উ থং হুই ও তার ছেলে ফেং চেং কাংয়ের এ পরিবর্তন দেখেছেন।

উ থং হুই এখন অবসরপ্রাপ্ত। ১৯৭২ সালে, ১৯ বছর বয়সী উ থং হুই হাইস্কুল থেকে স্নাতক হবার পর ফেং ছেং কাংয়ে এসে একজন stevedore হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, "তখনকার বন্দর খুব জরাজীর্ণ ছিল এবং মাত্র ছোট জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারত। ১৯৮১ সালে আমি কুয়াং চৌতে গিয়ে জাহাজ পরিচালনা শিখেছি এবং ১৯৮৪ সালে আমি ফাং ছেং কাংয়ে ফিরে একজন পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করি।"

বন্দর পাইলটের কাজ হল নির্দিষ্ট জলসীমায় জাহাজের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করা। বৃষ্টি ও বাতাস—যে কোনো আবহাওয়ায় বা সময়ে নিজের কাজ করতে হয়; নির্দিষ্ট ছুটি নেই। তিনি স্মরণ করে বলেন, "তখনকার ফেং ছেং কাং বন্দরের জলপথ অগভীর ছিল; তাই কেবল জোয়ারের সময় জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারত। তাই জাহাজ পৌঁছানোর সময় ছিল অনিশ্চিত। আমি জাহাজের জন্য অপেক্ষা থাকতাম। যে-কোনো সময়, আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন, আমাকে যেতে হতো।"

কাজের কারণে উ থং হুইর দু'জন ছেলে মা ও নানীর কাছে বড় হয়েছে। বন্দরের পাইলটদের অধিকাংশ স্থানীয় মানুষ নয়; তাই প্রতিবছরের বসন্ত উত্সবে অন্য সহকর্মীদের সুবিধার্থে উ থুং হুই কাজের দায়িত্ব নিতেন।

উ থং হুইর দু'জন ছেলে ছোটবেলা থেকে বাবার সাদা রঙের ইউনিফার্ম পছন্দ করত। তাঁরা স্বপ্ন দেখত, বড় হয়ে বাবার মতো হবে। পরে তারা একজন বাবার মতো পাইলট হন এবং আরেকজন কনটেইনার কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন।

ছোট ছেলে উ ইউ জানান, ২১ বছরে তিনি বন্দরের একজন মেরামতকর্মী থেকে সাধারণ ব্যবস্থাপক সহকারী হন এবং এখন কনটেইনার ব্যবস্থাপনার কাজ করছেন। তিনি বলেন, গেল কয়েক বছর তিনিও অন্য চাকরি নেওয়ার কথা ভেবেছেন। তবে পরিবারের কেউ সমর্থন করেনি। তার বাবা বলেন, বন্দরে তার দরকার আছে এবং নিজের কাজ তার ভালভাবে করা উচিত।

উ ইউ বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমে বন্দরে কাজ শুরু করেন এবং তখনকার বন্দেরর নোঙ্গরস্থান মাত্র দশ বারোটা ছিল। এখন নোঙ্গরস্থান ৪৩টি এবং এর মধ্যে ৩৩টি ১০ হাজার টন পর্যায়ের নোঙ্গরস্থান এবং ৮টি ১ লাখ টন পর্যায়ের। ২০১৮ সালে মাল বোঝাই ও খালাসের পরিমাণ ৮১৭৭০ হাজার টন ছিল। জলপথে চীনের মূল ভূভাগের সাথে আসিয়ান দেশগুলোকে সংযুক্ত করেছে এই বন্দর। তিনি সাংবাদিককে বলেন, তিনি ও তার বড় ভাই বাবাকে খুব সম্মান করেন; কারণ ওই প্রজন্মের মানুষ বন্দরের উন্নয়নে নিঃস্বার্থ কাজ করেছেন।

প্রজন্ম পর প্রজন্ম মানুষের পরিশ্রমে ফেং ছেং কাং দিন দিন উন্নত হয়েছে ও হচ্ছে। উ ইউ বলেন, তিনি আশা করেন মেয়ে বড় হলে এবং ইচ্ছা থাকলে বন্দরে কাজ করতে পারবে। 'ভবিষ্যতে আমাদের দেশ, আমাদের বন্দর এবং আমাদের পরিবার আরও ভাল থাকবে' বলে বিশ্বাস করেন উ ইউ।(শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040