হানি জাতি
  2019-04-29 15:14:10  cri

হানি জাতির লোকসংখ্যা ১৪.৩ লাখের বেশি এবং মূলত ইউন নান প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের হং হ্য নদী ও লাচাং নদীর মাঝখানে আইলাও ও উ লিয়াং—এই দুটি পাহাড়ের মধ্যের ব্যাপক অঞ্চলে তাঁদের বাস। হানি জাতিঅধ্যুষিত এলাকা হান, ই, পাই, তাই, ও লাকুসহ নানা জাতিঅধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে অবস্থিত। হং হ্য হানি ও ই জাতির স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের চারটি জেলায় সবচেয়ে বেশি হানি জাতি মানুষের বাস।

হানি জাতির শাখা অনেক বেশি এবং নিজেদের তারা নানা নামে ডাকে। নাম বেশি হলেও উচ্চারণ কাছাকাছি। হানি জাতির ইতিহাস ২ হাজার বছরের বেশি এবং ১৯৪৯ সালের পর, সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নাম 'হানি' এ জাতির নাম হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এলাকা অনুযায়ী হানি ভাষা তিন রকমের এবং তিন ভাষার মধ্যে পার্থক্য বেশি। হানি জাতির অক্ষর ছিল না। ১৯৫৭ সালে ল্যাটিন বর্ণমালাভিত্তিক অক্ষর সৃষ্টি হয় এবং এ পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে।

পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুযায়ী সিড়ির ধাপের মতো থাককাটা কৃষিক্ষেত তৈরি করা হানি জাতির বৈশিষ্ট্য ও হাজার বছরের ঐতিহ্য। বিশেষ এ ধরনের কৃষিক্ষেত এ জাতির প্রতীকে পরিণত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের মালভূমিতে, যেখানে হানি জাতি বাস করে, সেখানে নিশ্চয় দেখা যায় সিড়ির ধাপের মত থাককাটা কৃষিক্ষেত। তারা বিভিন্ন ভূ-সংস্থান ও মাটির মান অনুযায়ী ক্ষেত তৈরি করতে পারে এবং ক্ষেতের মধ্যে পরিখা তৈরি করে জলসেচের ব্যবস্থা করে। সিড়ির ধাপের মতো থাককাটা ক্ষেত আই লাও পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় এবং এটি হানি জাতির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার ভিত্তি।

আসলে খ্রিষ্টপূর্ব তিন শতক থেকে হানি জাতির মানুষ সিড়ির ধাপের মতো থাককাটা কৃষিক্ষেত তৈরি শুরু করে। এ অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হয়। হানি জাতির ইতিহাস যেন কৃষিশিল্প উন্নয়নের ইহিতাস। আদিম কৃষি থেকে ঐতিহ্যিক কৃষির সব পদ্ধতি হানি জানির এ ব্যবস্থায় আছে।

হানি জাতির মানুষের বাসস্থানের সংস্কৃতি কৃষিসংস্কৃতির একটি অংশ। তারা পাহাড়ের মাঝামাঝি অঞ্চলে বাস করে। আই লাও পাহাড়ি অঞ্চলের উপত্যকা অঞ্চল ভিজা ও গরম এবং এখানে বিষাক্ত পোকা ও সাপ থাকে। তাই মানুষের বসবাসের উপযোগী নয়। আবার পাহাড়ের চূড়ার দিকে শীত ও আর্দ্রতা বেশি এবং বন্যপ্রাণীদের আনাগোনা বেশি বলে সেখানেও মানুষ থাকতে পারে না। তাই হানি জাতির মানুষ বেছে নিয়েছে পাহাড়ের মাঝের অংশ। মাঝখানে থাকলে উপরে গিয়ে শিকার করা যায় এবং নীচে গিয়ে চাষ করা যায়।

হানি জাতির বাড়ি সাধারণত তিন তলা। পাহাড়ি অঞ্চলে আর্দ্রতা বেশি বলে প্রথম তলায় মানুষ থাকে না। প্রথম তলায় পশুপালন করা হয়। মানুষ দ্বিতীয় তলায় বাস করে এবং তৃতীয় তলা খাদ্য সংগ্রহস্থল।

হানি জাতির মানুষ একটি বছরকে তিনটি ঋতুতে ভাগ করে। শীতকাল, গরমকাল এবং বর্ষাকাল। প্রতিটি ঋতুর দৈর্ঘ্য ৪ মাস। তাদের নিজস্ব পঞ্জিকা আছে। তাদের পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতিবছর ১২ মাস এবং প্রতিমাস ৩০ দিন। আমরা জানি প্রতিবছর ৩৬৫ দিন। তাই তারা প্রতিবছরের পঞ্চম ও দশম মাস তিন দিন ধরে উত্সব পালন করে। হানি জাতির সব উত্সব আসলে কৃষি কাজের সময় অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। তাদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উত্সব ফসল চাষ শুরু এবং শেষের সময়।

বিংশ শতাব্দীর ৫০-এর দশক পর্যন্ত হানি জাতির মানুষের পোশাকে নীল ও কালো—এই দুটি রঙ দেখা যেতো। এখন পোশাকে রঙের সংখ্যা বেড়েছে।

হানি জাতির নববর্ষ ষষ্ঠ মাসে। কারণ এ সময় বসন্তকালের কৃষিকাজ শেষ হয়। তার মানে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় শেষ হয় এবং মানুষ প্রচুর ফলনের জন্য প্রার্থনা করে।

হানি জাতির ঐতিহ্য অনুযায়ী, ছেলের নামের প্রথম শব্দ তার বাবার নামের শেষ শব্দ হয়। যেমন, বাবার নাম হেই কা এবং ছেলের নাম কা লাও। আবার তার ছেলের নামের প্রথম শব্দ লাও হতে হবে। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040