২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেলফাতাহ আল সিসির উপস্থিতিতে সিএসসিইসি মিশরের গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে 'নতুন রাজধানী প্রকল্প' বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটি মিশরে কোনো চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তম প্রকল্প।
সিএসসিইসি'র মিশর শাখার জেনারেল ম্যানেজার ছাং ওয়েই ছাই বলেন, "প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষরের ভিত্তি হল চীন-মিশর সুসম্পর্ক। এ ছাড়া, চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সিসি'র 'লোহিত সাগর-সুয়েজ খাল অর্থনৈতিক এলাকা' ও 'মিশরের নতুন রাজধানী' প্রকল্পসহ বিভিন্ন জাতীয় প্রকল্পের মিল আছে। এই প্রকল্পের প্রবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাত্পর্য রয়েছে।"
মিশরের নতুন রাজধানীর সিবিডি কায়রোর পূর্ব দিকে অবস্থিত। মোট আয়তন ৫.০৫ লাখ বর্গমিটার। প্রথম পর্যায়ে ৩৮৫ মিটার উঁচু একটি ভবন, ১২টি বাণিজ্যিক ভবন, ৫টি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ও ২টি উচ্চ মানের হোটেল নির্মিত হবে। মোট আয়তন ১৭ লাখ বর্গমিটার।
২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর মিশরের নতুন সিবিডি প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ মাসে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ছাং ওয়েই ছাই বলেন, "মিশরের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা মাদ্রাবী এ প্রকল্পকে 'মিশরের নতুন যুগে প্রবেশের প্রতীক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আমাদেরকে 'নতুন যুগে পিরামিড' মনে করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে অনুরোধ করেছেন। নতুন রাজধানী হল একটি বড় প্রকল্প। সিবিডি হল নতুন রাজধানীর কেন্দ্র।"
সিবিডি'র ভবনগুলোর কেন্দ্রে থাকবে পতাকা টাওয়ার। এটি একটি বহুমুখী উঁচু ভবন। ভবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট, সিনেমা হল ইত্যাদি থাকবে। ভবনটি হবে আফ্রিকার সর্বোচ্চ ভবন।
৩৬ বছর বয়সী থিয়ান ওয়েই হলেন পতাকা টাওয়ার'র প্রধান প্রকৌশলী। তিনি আর্কিটেকচারের ওপর পোস্ট ডক্টোরাল ডিগ্রিপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, পতাকা টাওয়ারের নির্মাণে ক্ষেত্রে অনেক নতুন ধারণা ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
"এই টাওয়ার নির্মাণে সবুজ ধারণা ব্যবহৃত হবে। এতে জ্বালানি সাশ্রয় হবে। টাওয়ারটি পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে। আমরা এর নির্মাণকাজে সবুজ ও পরিবেশবান্ধব ধারণা ব্যবহার করবা।"
থিয়ান ওয়েই'র নেতৃত্বে ১০৭ জন চীনা প্রকৌশলীর গড় বয়স মাত্র ৩১ বছর। তাঁরা সবাই হলেন তরুণ প্রকৌশলী। তাঁদের কর্মক্ষমতা মিশরের কর্মীদের প্রশংসা পেয়েছে। এ সম্পর্কে থিয়ান ওয়েই বলেন, "মিশরের কর্মীদের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, আমাদের কর্মীদের বয়স এতো কম! কিন্তু আমাদের কর্মীদের অভিজ্ঞতা বেশি। তাঁদের অভিজ্ঞতা হয়ত মিশরের ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কর্মীদের চেয়ে আরো বেশি। কাজ করার মাধ্যমে আমরা মিশরের কর্মীদের প্রশংসা পেয়েছি।"
কায়রো'র ওপর চাপ হ্রাস করার জন্য মিশরের নতুন রাজধানী নির্মিত হচ্ছে। নতুন রাজধানীর আয়তন ৭০০ বর্গকিলোমিটার। এখানে ৫০ লাখ মানুষ বসবাস করতে পারবে। এটি হবে একটি একটি স্মার্ট আন্তর্জাতিক শহর। সিবিডি হল নতুন রাজধানীর কেন্দ্রস্থল। মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসি সিবিডির নির্মাণের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা মাদ্রাবীও বহুবার নির্মাণস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জেনারেল ম্যানেজার ছাং ওয়েই ছাই বলেন, সিএসসিইসি 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে। এটি হল মিশরে কোনো চীনা প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তম প্রকল্প। মিশর হল 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ দেশ। মিশরের জাতীয় পুনর্সমৃদ্ধ পরিকল্পনায় নতুন রাজধানীর নির্মাণ হবে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। যদি নতুন রাজধানী একটি ইম্পেরিয়াল মুকুট হয়, তবে সিবিডি হল ইম্পেরিয়াল মুকুটের মাঝখানের মুক্তা। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আগে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় আমরা শুধুমাত্র বিদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে অংশ নিতাম। এখন আমরা মিশরের সিবিডি নির্মাণে অংশ নিচ্ছি। আমরা মিশরের নতুন রাজধানীর কেন্দ্রীয় প্রকল্প নির্মাণে অংশ নিচ্ছি। আমরা এ প্রকল্পের মাধ্যমে মিশর সরকারের সঙ্গে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছি। চীনের উদ্যোগে স্থানীয় উপাদান সরবরাহকারী, সরঞ্জাম সরবরাহকারী ও নির্মাণ কোম্পানিসহ মিশরের কয়েক শতাধিক কোম্পানি এতে অংশ নিচ্ছে। এতে আসল অভিন্ন বাণিজ্য, নির্মাণ, কল্যাণ ও উন্নয়নের ধারণা প্রতিফলিত হচ্ছে।"
ছাং ওয়েই ছাই বলেন, মিশরের নতুন রাজধানীর সিবিডি প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁরা চীনা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার প্রদর্শন ঘটাবেন। তাঁরা চীনের সবচেয়ে উঁচু মানদন্ড অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন। এটা হবে নির্মাণশিল্পের চীনা দক্ষতার প্রমাণ।