২১০০ বছর আগে, চীনের হান রাজবংশের চিয়াং ছিয়েন একটি শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ মিশন নিয়ে মধ্য-এশিয়ায় দুই বার সফর করেন, যা চীন ও মধ্য-এশীয় দেশগুলির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের দরজা খুলে দেয়। ওই ঘটনার দুই সহস্রাধিক বছর পর, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট কাজাখস্তানে প্রথম 'রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' ধারণা পেশ করেন। তিনি বলেন: "যতক্ষণ আমরা ঐক্য, পারস্পরিক বিশ্বাস, সমতা ও পারস্পরিক সুবিধা, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শিক্ষা এবং জয়-জয় সহযোগিতার পথে চলতে থাকব, বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন ধর্ম এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের দেশগুলিতে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন ততক্ষণ সহজতর থাকবে।"
একই বছরের অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একুশ শতকের সামুদ্রিক রেশমপথের ধারণা উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রাচীনকাল থেকে সামুদ্রিক রেশমপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। চীন আসিয়ান দেশগুলির সাথে সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদার করতে এবং একুশ শতকের সামুদ্রিক রেশমপথ যৌথভাবে নির্মাণ করতে ইচ্ছুক।
বস্তুত, "এক অঞ্চল, এক পথ" উদ্যোগটি ইতিহাসের অনুপ্রেরণা এবং বাস্তবতা থেকেই উদ্ভূত। "এক অঞ্চল, এক পথ" উদ্যোগ হলো চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উত্থাপিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিকর সহযোগিতা উদ্যোগ। এর মূল ভিত্তি হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণ, আঞ্চলিক আন্তঃসংযোগ ও বিনিময়কে শক্তিশালী করা, বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নতুন চালিকাশক্তি সৃষ্টি করা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
রেশমপথের চেতনা হচ্ছে, শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা, উন্মুক্ততা ও সহনশীলতা, পারস্পরিক শিক্ষা, পারস্পরিক সুবিধা এবং জয়-জয় পরিস্থিতি। যৌথ আলোচনা, যৌথ নির্মাণ, যৌথ শেয়ারিং হচ্ছে এর শ্লোগান। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, যদি 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগকে এশিয়ার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দুটি ডানার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে আন্তঃযোগাযোগ হবে দুই ডানার মিলনস্থল।
প্রেসিডেন্ট সি বার বার বলেছেন যে, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায় চীন। এর প্রধান লক্ষ্য হলো, বিভিন্ন দেশের অভিন্ন উন্নয়নের জন্য কাজ করা। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ একটি চীনা দৃষ্টিভঙ্গি, যা সকল দেশের সাধারণ স্বপ্নের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং বিশ্বের সমৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য চীনা প্রস্তাব সরবরাহ করে।
২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের পঞ্চম বার্ষিকীর আলোচনাসভায় চীনের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, উচ্চ মানের উন্নয়নের জন্য "এক অঞ্চল, এক পথ" রূপান্তর প্রয়োজনীয়। কয়েক দিন পর দ্বিতীয় 'এক অঞ্চল, এক পথ' আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ সম্মেলন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে। ৩৭টি দেশের নেতা, সরকার-প্রধান এবার শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে 'এক অঞ্চল, এক পথ' সহযোগিতাও নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে। (জিনিয়া/আলিম/লিলি)