মিসরের রাজধানীর নতুন বাণিজ্য এলাকা গড়ে উঠছে কায়রো থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। চারপাশে মরুভূমি। কিন্তু চীনা নির্মাণ-শ্রমিকরা ডরমেটরি এলাকায় একটি ছোট বাগান নির্মাণ করেছেন। মরুভূমিতে সবুজ বনভূমি বিরল এবং মূল্যবান।
এখানকার সাধারণ নির্মাণ-স্থলে শ্রমিকদের বোর্ডরুম ডরমেটরির মত না। মিসরের রাজধানীর নতুন বাণিজ্য এলাকার নির্মাণ-স্থলের ডরমেটরি ইট-পাথরের তৈরি ভবন। কারণ, চীনা কোম্পানির কর্মীদের নিরাপত্তার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মিসরে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় এবং অংসখ্য সহিংস ঘটনা ঘটে। সেজন্য কর্মীদের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য এলাকা'র একজন ম্যানেজার লিউ গুই সিন সাংবাদিকদের বলেন, "শ্রমিকদের ঘরে মৌলিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। গোসলখানা, বাথরুম, ঝর্না তাদের শেয়ার করতে হয়। এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা চীনের বিভিন্ন নির্মাণ-স্থলেও নেই।"
নির্মাণস্থলের চারপাশে মরুভূমি। এখানে কোনো মানুষ বসবাস করে না। সেজন্য চীনা কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহে অসুবিধা হয়। কয়েক শতাধিক শ্রমিকের জন্য খাবার যোগান দেওয়া কোম্পানির জন্য আরেকটি সমস্যা। প্রকল্পের আরেকজন ম্যানেজার ওয়াং ই বো এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "কায়রোয় ৩০ হাজার চীনা প্রবাসী বাস করেন। আমরা তাঁদের কাছ থেকে চীনা সবজি ও মশলা ক্রয় করি। কোনো কোনো সময় স্থানীয় চীনা প্রবাসীরা আমাদের নির্মাণ-স্থলে সবজি ও মাংস পাঠান।"
শ্রমিকরা চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন। সেজন্য খাদ্যের প্রশ্নে তাদের পছন্দ-অপছন্দ আলাদা। কোম্পানি এ সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েকটি ক্যান্টিন নির্মাণ করেছে এবং নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ক্যান্টিনের পাচক পরিবর্তন করে থাকে। লিউ গুও ওয়েই গত মার্চ মাসে মিসরে এসেছেন। আগে তিনি ইকুয়েটোরিয়াল গিনিতে ৯ বছরের মতো কাজ করেছেন। তিনি হোটেল, বিশ্ববিদ্যালয়ভবন ও সম্মেলনকেন্দ্র নির্মাণে অংশ নিয়েছিলেন। মিসরের অপরিচিত পরিবেশে তিনি সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি বিগত দশ বছর ধরে বিদেশে আছি। আমার খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বেশি। এখানকার খাবার আমার ভালোই লাগে। অবসরে আমরা টেবিল টেনিস ও বাস্কেট বল খেলি। আমাদের কোম্পানি আস্তে আস্তে লাইব্রেরি, জিম, বিলিয়ার্ড রুম চালু করবে বলেছে। তখন আমাদের বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।"
শ্রমিকের অধিকাংশই হাইস্কুল পাস করেছেন। তাঁদের আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনও সমৃদ্ধ। ৪২ বছর বয়সী ওয়াং হ্যে ফিং চীনা স্থাপত্য কোম্পানিতে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি আলাদাভাবে বিগত আট বছর ধরে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করেন তিনি ফিলিপিন্স, মরিশাস, কঙ্গোতে কাজ করেছেন। তিনি প্রতিদিন টেলিভিশনে চীনের খবরাখবর রাখেন। তিনি বলেন, "রাতের খাবারের পর আমি টেলিভিশন দেখি। আমাদের ক্যান্টিনে টেলিভিশন আছে। আমি প্রতিদিন চীনা খবর দেখি। আমি বিদেশে কাজ করছি। কিন্তু নিজেদের দেশের খবর রাখতে ভুলি না।"
ওয়াং হ্যে ফিং ওয়েইবো ও ওয়েইচ্যাটে পোস্ট করতে পছন্দ করেন। তিনি মিসরে তার অভিজ্ঞতা চীনা বন্ধু ও প্রিয়জনদের সঙ্গে শেয়ার করেন। তিনি জানান, তাঁর দু'টি সন্তান আছে। বিদেশে বেতন বেশি। দু'টি সন্তানের জন্য সুখী জীবন নিশ্চিত করতে অর্থের প্রয়োজন।
শ্রমিকরা মাঝে মাঝে রাজধানী কায়রোর কেন্দ্র যান। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে কোম্পানির গাড়িতে তাঁরা কায়রোতে চলচ্চিত্র দেখতে বা শপিং করতে যান। কখনও কখনও সেখানে চীনা রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ করেন।
চীনা কর্মীরা মিসরের কর্মীদের সঙ্গে কাজ করার সময়টা উপভোগ করেন। তাঁরা একে অপরের ভাষা বোঝেন না। কিন্তু তাতে তাদের যোগাযোগে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। এ সম্পর্কে ওয়াং হ্যে ফিং বলেন, "মিসরের কর্মীরা প্রতিদিন দেখা হলেই আমাদের 'হ্যালো' বলে বুকে জড়িয়ে ধরে। এটা আমাদের ভালো লাগে। আমি তাদের আলিঙ্গনে তাদের অন্তরের ভালোবাসা গভীরভাবে অনুভব করি।"
বিদেশে কাজ করার সময় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকাটা সবচেয়ে কঠিন। গত বছর উ জি জিয়া শেনচেনের কাজ ত্যাগ করে মিসরে স্বামীর কাছে এসেছেন। এখন মিসরে নির্মাণ-স্থলে দু'জনের জীবন খুবই মিষ্টি। এ সম্পর্কে উ জি জিয়া বলেন, "দু'জন একসঙ্গে যেকোন কঠিন সমস্যা সমাধান করা যায়। বিশেষ করে, মানসিক সমস্যা সমাধানের জন্য দু'জনের একসঙ্গে থাকা জরুরি।"
নির্মাণ-স্থলে কর্মী-সেবাকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য এলাকার বহুমুখী কার্যালয় পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার উ চৌ জুন বলেন, সেবাকেন্দ্রে সুপারমার্কেট, ক্লিনিক, সেলুন, জিম ইত্যাদি থাকবে। সেবাকেন্দ্র শ্রমিকদেরকে আরো সুবিধাজনক সেবা সরবরাহ করবে।