১৯১৯ সালে জার্মান স্থপতি ওয়াল্টার গ্রোপিয়াস ওয়েমরে একটি নতুন বিস্তৃত শিল্প ও কারুশিল্প স্কুল—বাউহাউস স্কুল খোলেন। এটি স্থপতি ও ডিজাইনারদের প্রশিক্ষণ দেয় ও লালন-পালন করে। যদিও স্কুলটি কেবল ১৪ বছর ছিল। স্কুলের তত্ত্ব ও মতবাদটি ঐতিহ্যবাহী থেকে আধুনিক পর্যন্ত একটি নতুন যুগ সংজ্ঞায়িত করে এবং এটি বিশ্বের আধুনিকতাবাদী স্থাপত্য ও নকশার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে উঠেছে। ১০০ বছর পর, বোহাউস শুধু একটি স্কুল, একটি নকশা প্রবণতা, একটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, এটি জাগরণ, অগ্রগামী, এবং অনুসন্ধানী চেতনার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালে, সারা জার্মানিতে বৌহাউস "উদযাপন" অনুষ্ঠানের জন্য একটি সিরিজ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে, সবচেয়ে বড় বিষয় নতুন ওয়েমর বাউহাউস যাদুঘর, যা ৬ এপ্রিল বৌহাউস শহরে উদ্বোধন করা হবে।
থারুরিয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রী বেঞ্জামিন-ইমানুয়েল হফের বলেন, নতুন ওয়েমার বাউহাউস মিউজিয়ামে ১০০তম বার্ষিকীর উদযাপন অনুষ্ঠানটি একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। তা ছাড়া, এটি থারুরিংয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ করেছে ও উজ্জ্বল করেছে।
আধুনিক প্রতীক হিসাবে, নতুন যাদুঘর কেবল 'মেড ইন জার্মান' স্থাপত্য ও নকশা ধারণাকেই প্রদর্শন করে নি। এটি ভবিষ্যত প্রজন্মকে ইতিহাস স্মরণ রাখা এবং বৌহাউসের উদ্ভাবনী মনোভাব চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও শিক্ষা দেয়। যা ঐতিহ্যগত না ভাঙ্গা, অত্যাচারের বিরোধিতা করা এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে। এটি বিভিন্ন থিমের সঙ্গে নিজস্ব স্থাপত্যের ধারণা এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করে।
নতুন যাদুঘরের স্থায়ী প্রদর্শনীর প্রধান হলো বৌহাউসের ঐতিহাসিক অবস্থান, বিকাশের ইতিহাস ও গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য, যার মধ্যে মারিয়ান ব্র্যান্ডের টিপট, মার্সেল ব্লাউয়ারের চেয়ার, পল ক্লে ও লেওনি ফিঙ্গারের চিত্রকর্ম, মেস ভ্যান ড্রো ডিজাইনের আসবাবপত্রসহ প্রায় এক হাজার বৌহাউস ক্লাসিক কর্ম রয়েছে। স্থপতি হাইতিং হানাডা যাদুঘরটির ডিজাইন করেছেন। এর বাজেট ২৭ মিলিয়ন ইউরো। ঘনক আকৃতির ভবনটি দুই হাজার বর্গ মিটারের আয়তনের। এর একটি প্রদর্শনী এলাকাসহ ৫ তলায় বিভক্ত। স্থপতি হাইতিং হানাডা বলেন, তিনি আশা করে যে মূল হালকা ধূসর কংক্রিট প্রাচীরটি নতুন ভবনের তীব্রতা ও ত্রিমাত্রিক রূপকে হাইলাইট করবে। একই সময়, নতুন ভবনটি আশেপাশের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই কিনা তাও আর একটি চিন্তা। তিনি বলেন, "যাদুঘরটির নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি সংলগ্ন পার্কের পাশে অবস্থিত। পার্কটির একটি চমত্কার ভৌগোলিক সুবিধা রয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার ভালো ব্যবহার করতে চাই। যাতে মানুষ আকর্ষণ করা এবং যাদুঘর থেকে দূরত্ব সরাসরি দেখা যায়। আমি এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চাই।"
ওয়েমার বৌহাউস যাদুঘরের কাছে ওয়েমার নিউ মিউজিয়মটি। এটি ৬ই এপ্রিল "হেনরি ভ্যান ডের ওয়ার্ল্ড, নিটশে এবং ১৯০০ আধুনিকতাবাদ"র সাথে পুনরায় চালু হয়। ১৮ মে প্রদর্শনী, সেমিনার, বাউহাউস পুতুল শো, বৌহাউস সংগীত নাটক ইত্যাদি বৌহাউস ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছর ওয়েইমার ভ্রমণকারী প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ এবং বৌহাউসের ১০০তম বার্ষিকীর উদযাপন নিঃসন্দেহে ওয়েইমারের আরও দর্শক আকর্ষণ করবে।
এক রিপোর্টে বলা হয় যে, বৌহাউসের ১০০তম বার্ষিকী তিন বছরের বড় আকারের প্রকল্প যা জার্মানির ১৬টি ফেডারেল রাজ্যের অন্তত ১১ টি রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। জার্মানির বাইরে অনেক দেশ সক্রিয়ভাবে এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করছে। এতে রয়েছে নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, স্পেন, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশ।