চীনের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ৮৬০ কোটি মার্কিন ডলার বেড়েছে (অর্থ-কড়ি; ১৩ এপ্রিল ২০১৯)
  2019-04-15 14:50:27  cri


১. চলতি বছরের মার্চশেষে চীনের বৈদেশিক মুদ্রা মজুত দাঁড়ায় ৩.০৯৮৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে (এক ট্রিলিয়ন=১০০০ বিলিয়ন; এক বিলিয়ন=১০০ কোটি)। দেশটির স্টেট এডমিনিস্ট্রেশান অব ফরেন এক্সচেঞ্জ সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

প্রকাশিত তথ্যানুসারে, এক মাসে মজুত বেড়েছে ৮৬০ কোটি মার্কিন ডলার। এ নিয়ে বিগত পাঁচ মাস ধরে টানা বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়লো চীনের।

২. চীনের নির্মাণ ও প্রকৌশল কোম্পানি 'চায়না ক্যচৌপা গ্রুপ কোম্পানি' (সিজিজিসি) সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট পাক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুসারে সিজিজিসি ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের একটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন-কাজে অংশগ্রহণ করবে।

সিজিজিসি জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে। প্রকল্পের অধীনে সোয়াত নদীর ওপর একটি বাঁধ নির্মাণ করা হবে এবং বাঁধে মোট ৮০০ মেগাওয়াটের চারটি জেনারেটর স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে সিজিজিসি এবং পাকিস্তানের ডেসকন। এর মধ্যে সিজিজিসি'র বিনিয়োগ থাকবে ৭০ শতাংশ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় এলাকা বন্যামুক্ত হবে, ব্যাপক অঞ্চল জলসেচের আওতায় আসবে, এবং প্রতিবছর ২৮৬ কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উত্পন্ন হবে। তা ছাড়া, এই প্রকল্প থেকে প্রতিবছর স্থানীয় অধিবাসীরা ১৪০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানীয় জল পাবে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নে প্রায় ৭০ মাস লাগবে। প্রকল্পের পিক সময়ে পাকিস্তানিদের জন্য ৬ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

৩. চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের সফ্টওয়ার খাতে রাজস্ব আয় হয়েছে ৯০৭৪০ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩.৬ শতাংশ বেশি। আর ওই দু'মাসে সফ্টওয়ার খাতে মুনাফা হয়েছে ১০,৩২০ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তথ্যপ্রযুক্তি-সেবা খাতে রাজস্ব আয় হয় ৫২,৫৪০ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬.৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ক্লাউড কম্পিউটিং ও বিগ ডেটা খাতে প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ১৩ শতাংশ ও ২৭ শতাংশ।

৪. চলতি বছর এবং আগামী বছর চীনের অর্থনীতিতে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ২০১৯ ও ২০২০ সালে যথাক্রমে ৬.৩ ও ৬.১ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে।

এদিকে, এডিবি'র প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুইয়ুকি সোয়াদা বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমলেও, চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে চীনের অর্থনীতিতে যথাক্রমে ৬.৮ ও ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। চলতি বছর ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে ধারণা করছে চীন সরকার।

৫. চীনের রাষ্ট্রীয় ইন্টারনেট কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা সম্প্রতি বেইজিংয়ে বলেছেন, গত বছর শেষ নাগাদ পর্যন্ত চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা চীনের জিডিপি'র এক-তৃতীয়াংশ। ভবিষ্যতে চীন কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি গবেষণা-কার্যক্রম আরও জোরদার করবে, অবকাঠামো সুসংহত করবে, এবং ডিজিটাল অর্থনীতির আরও উন্নতি ঘটাবে। আর এর মাধ্যমে সার্বিকভাবে ডিজিটাল চীন গড়ে তোলা হবে।

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস প্রিফিংয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় ইন্টারনেট কার্যালয়ের উপ-মহাপরিচালক ইয়াং সিয়াও উই বলেন, বর্তমানে চীনের ইন্টারনেট অবকাঠামো সম্প্রসারণ, ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্টসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়, এবং জনগণের জন্য সুবিধাজনক তথ্যসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

৬. বেসরকারি অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলবে চীন। সম্প্রতি বেইজিংয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রচারসংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী পরিদর্শন গ্রুপের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সভায় এ কথা বলেন চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লি চান শু।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার বেসরকারি অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় দিক্‌-নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুসারে, সিপিসি ও সরকার ধারাবাহিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেসরকারি অর্থনীতির উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় প্রাণশক্তি যুগিয়ে চলেছে।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রচারসংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী পরিদর্শন-ব্যবস্থা প্রেসিডেন্ট সি'র নির্দেশনা অনুযায়ী চালু হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দফতরগুলো আইন অনুসারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা সমাধানে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অধিকার সংরক্ষণেও সরকার সচেষ্ট আছে। আর এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে, শহর ও গ্রামের উন্নয়নে ভারসাম্য রক্ষা করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, ও জনগণের জীবনমান আরও উন্নত করা।

৭. চীন-দক্ষিণ কোরিয়া অবাধ বাণিজচুক্তি আলোচনার দ্বিতীয় দফার চতুর্থ রাউন্ড সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এই রাউন্ডে প্রথমবারের মতো 'নেগেটিভ লিস্ট' বা 'নেতিবাচক তালিকা' নিয়ে আলোচনা হয়।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা বিভাগের উপ-পরিচালক পাই মিং বলেন, অবাধ বাণিজ্যচুক্তি আলোচনায় 'নেতিবাচক তালিকা' অন্তর্ভুক্ত থাকা সম্পূর্ণ যৌক্তিক। চীন এই তালিকা হালনাগাদ করার কার্যকর ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে। আলোচনা সফল হলে, চীন তার 'নেতিবাচক তালিকা'-র প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনবে।

উল্লেখ্য, চীন-দক্ষিণ কোরিয়া অবাধ বাণিজ্যচুক্তি আলোচনার পাশাপাশি, ২৫ থেকে ২৮ মার্চ চীন-নরওয়ে অবাধ বাণিজ্যচুক্তি আলোচনাও বেইজিংয়ে চলেছে। চীন ইতোমধ্যেই ২৫টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে ১৭টি অবাধ বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

৮. সম্প্রতি তিব্বতের নাছু শহরের নিমা জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ-নেটওয়ার্কের মেরামতকাজ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ,

এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৫৩০ কোটি ইউয়ান। প্রকল্পের আওতায় ৬৬টি ৩৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মিত বা মেরামত করা হবে। আর এর সরবরাহ-লাইনের মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৩২০০ কিলোমিটার। তা ছাড়া, ১০ কিলোওয়াট বিদ্যুতলাইন হবে প্রায় ৩৮০০ কিলোমিটার, যার কিছুটা মেরামত করা হবে এবং কিছুটা নতুন করে নির্মিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, চলতি বছরের শেষ দিকে তিব্বতের ৬৬টি জেলা বা অঞ্চলে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ২৫ হাজার বৃদ্ধি পাবে।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাজ শেষ হবে ২০২০ সালের প্রথমার্ধে। তখন নিমা জেলা চীনের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুত নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এতে জেলার ৯৮৮টি পরিবারের ৫ সহস্রাধিক গ্রামবাসী বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

৯. চীনের তাইওয়ানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত মার্চশেষে দাঁড়ায় ৪৬,৪০৮ কোটি মার্কিন ডলারে, যা আগের মাসের চেয়ে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি। তাইওয়ানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

১০. চীন-আরব সহযোগিতা ফোরামের অষ্টম শিল্পপতি সম্মেলন সম্প্রতি তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছেন শিয়াও কুয়াং, চীনের বাণিজ্য উন্নয়ন সমিতির প্রধান কাও ইয়ান, তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ চাহেদ, আরব লীগের উপ-মহাসচিব কামাল হাসান আলি প্রমুখ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছেন শিয়াও কুয়াং বলেন, আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা হচ্ছে চীন-আরব সহযোগিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীন হচ্ছে আরব দেশগুলোর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। আর আরব দেশগুলো হচ্ছে চীনের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ অংশীদার।

তিনি আরও বলেন, গত বছর দু'পক্ষের পারস্পরিক বিনিয়োগ ছিল ২৪,৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার। বিভিন্ন খাতে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা দু'পক্ষের জন্য বাস্তব কল্যাণ এনে দিয়েছে। গত বছর দু'পক্ষ 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংক্রান্ত সহযোগিতার ঘোষণাও দিয়েছে। এর মাধ্যমে দু'পক্ষের সার্বিক সহযোগিতা নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।

সম্মেলনে কাও ইয়ান বলেন, চীন-আরব শিল্পপতি সম্মেলন ২০০৫ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর পর থেকে চীন-আরব সহযোগিতা আরও বৈচিত্র্যময় হয়েছে। দু'পক্ষের মধ্যে পরমাণু, মহাকাশযান এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানিসম্পদ খাতে সহযোগিতার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।

তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ চাহেদ সম্মেলনে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের উচ্চ প্রশংসা করে বলেন, এর মাধ্যমে চীন এবং আরব দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা নতুন পর্যায়ে উন্নীত হবে।

তিনি বলেন, তাঁর দেশ ইউরোপ ও আফ্রিকায় চীনের বিনিয়োগকেন্দ্রে পরিণত হতে চায়। দেশের শিল্পপতিদের উচিত চীনের উন্নয়নের সুযোগ কাজে লাগানো।

সম্মেলনে ৬ শতাধিক শিল্পপতি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনশেষে 'তিউনিস ঘোষণা' প্রকাশিত হয়।

১১. মরক্কোর বাণিজ্য-ঘাটতি ফেব্রুয়ারিশেষে ১০.৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারে। দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

১২. ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মিয়ানমারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৬.৬ শতাংশ। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ পূর্বাভাস দিয়েছে। মিয়ানমারের চলতি অর্থবছর শেষ হবে সেপ্টেম্বরে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040