তিব্বতে 'সমৃদ্ধি, সুখ ও আনন্দের সড়ক'
  2019-04-13 12:55:59  cri

গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে চীনের তিব্বতে সিছুয়ান-তিব্বত সড়ক, ছিংহাই-তিব্বত সড়ক ও লাসা-লিনচি সড়ক নির্মাণের কাজ চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে। বর্তমানে তিব্বতে পরিবহন-ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। অসংখ্য পুলিশ, সৈন্য ও শ্রমিক বছরের পর বছর ধরে এর জন্য পরিশ্রম করেছেন। তাঁরা তিব্বতে সড়ক সুরক্ষা ও মেরামত এবং যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে চলেছেন। আগে সিছুয়ান-তিব্বত দক্ষিণ লাইনে থংমাই থানা থেকে ফাইলং থানা পর্যন্ত মোট ১৪ কিলোমিটার বিপজ্জনক পাহাড়ি সড়ক ছিল। পাহাড়ে মাটি খুবই আলগা। বৃষ্টি ও তুষার পড়লেই মাটির ধস নামে। এখন ইকংজাংবু নদীর উপর তিনটি সেতু নির্মিত হয়েছে। ২০০০ সালের মে মাসে ইকংয়ে বড় ভূমিধসে আগের সেতুটি ধ্বংস হয়।

২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে ইস্পাতের একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুটি ছিল একমুখী এবং এর বহন-ক্ষমতা ছিল খুবই কম। কিন্তু যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় সেতুর কাছে সবসময় জ্যাম লেগে থাকতো। ২০১১ সালে অস্থায়ী সেতুর কাছাকাছি একটি নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চার বছর পর ২০১৫ সালে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়। নতুন সেতু মোট ৩৮০ মিটার লম্বা এবং এর ভিত্তি দৃঢ়। মোট বহন-ক্ষমতা ৪০০ টন। চীনা সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর একটি বিভাগের তৃতীয় পরিবহন দলের চতুর্থ রক্ষণাবেক্ষণ দল তিব্বতে তিনটি সেতু নির্মাণে অংশ নেয়। দলটির প্রধান ওয়াং ফা মিং সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তিব্বতে পরিবহন-ব্যবস্থা পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে গর্বিতভাবে বলেন, "নতুন সেতু নির্মিত হওয়ার পর দু'টি পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমত, পরিবহন-ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দুর্ঘটনা হ্রাস পেয়েছে। কারণ, তিব্বতের সেতুগুলো একটার থেকে আরেকটা ঠিক আলাদা না। সেতুগুলো সুড়ঙ্গপথে একটার সঙ্গে আরেকটা সংযুক্ত। সেতু নির্মিত হওয়ার পর সিছুয়ান-তিব্বত সড়কের সমস্যা পুরোপুরি মিটে গেছে।" পুলিশদের কাজ ছিল কঠিন। কিন্তু তাঁরা দৃঢ়ভাবে পরিবহন-ব্যবস্থা সুরক্ষার কাজ করে এসেছেন। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ দলের প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা রেন জুন জিয়ে বলেন, "সিছুয়ান-তিব্বত লাইনের ১৪ কিলোমিটার নির্মাণে অংশ নিতে পেরে আমি আনন্দিত। আগে এই ১৪ কিলোমটার সড়ক ছিল মাটির রাস্তা।

বৃষ্টি হলে এই রাস্তায় গাড়ি চলতো না। সড়ক নির্মাণ করার সময় আমাদের মনে 'অন্যদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা পালন করি, সবার নিরাপত্তা সুরক্ষা করি আমরা, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তাও আমরা সুরক্ষা করি'-এর চেতনা গড়ে ওঠে।" দীর্ঘকাল ধরে পুলিশ-সদস্যরা কঠিন পরিবেশ এবং অতি ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে তিব্বতে সড়ক সুরক্ষা এবং ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন। পুলিশ ও সৈন্য ছাড়া, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণকারী বেসামরিক কর্মীরাও তিব্বতে পরিবহন-ব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রেখে এসেছেন। আগে ৩১৮ নম্বর জাতীয় সড়কের লিংচি থেকে লাসা পৌঁছাতে ৮ ঘন্টা লাগতো। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লাসা-লিংচি রাজপথ চালু হয়। এখন দু'টি শহরের মধ্যে গাড়িতে যাতায়াতে অনেক কম সময় লাগে। সড়কে সেবা-এলাকা, চিকিত্সাকেন্দ্র ও পার্কসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে।

রাজপথের একটি অংশে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণকারী কর্মীর সংখ্যা ৩৭ জন। তাঁরা ১৩৩.৬৫ কিলোমিটার সড়ক সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তাঁদের আছে ৫৫টি যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার যন্ত্র, তুষার অপসারণ যন্ত্র, তুষার ছুড়ে ফেলার যন্ত্র ইত্যাদ। সার্বিকভাবে কর্মীরা এখন যন্ত্রের সাহায্যেই সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ-কাজ করেন। শ্রমিকরা ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করেন। এখন তারা জরুরি অবস্থা সামাল দিতে সক্ষম। সুড়ঙ্গে আগুন নেভানো, পরিবহন দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ইত্যাদি কাজে তারা দক্ষ। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সড়ক পরিচালনা ব্যুরোর রাজপথ রক্ষণাবেক্ষণকেন্দ্রের কর্মী চু জিয়ে বলেন, "বর্তমানে আমাদের যৌথ পর্যবেক্ষণ ও সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ব্যবস্থার আওতায় আছে পরিবহন পুলিশ, জরুরি উদ্ধার-ব্যবস্থা, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও অগ্নি-নির্বাপণ ইত্যাদি। সুড়ঙ্গে আগুন লাগবে বা গাড়িতে আগুন লাগলে, আমরা তাত্ক্ষণিক জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।

বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা দ্রুততম সময়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেন।" এসব রাজপথ নির্মিত হওয়ার পর দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও এখন তিব্বতে আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ বোধ করেন। তাঁদের তিব্বত ভ্রমণ এখন আগের চেয়ে নিরাপদ ও সুবিধাজনক। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পরিবহন-ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি তিব্বতের বিভিন্ন স্থানের অর্থনীতিও আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অনেক বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং হচ্ছে। স্থানীয় নাগরিকরা আধুনিক সড়কগুলোকে 'সমৃদ্ধি, সুখ ও আনন্দের সড়ক' বলে ডেকে থাকে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040