৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পথে বাংলাদেশে : চ্যালেঞ্জ টেকসই প্রবৃদ্ধি
  2019-04-07 18:06:57  cri

একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদ বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি প্রধান সূচক। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় কোনো দেশের অর্থনীতির হাল-হকিকত। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকার ৮ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে। শুরুতে একে উচ্চাভিলাষী ও অর্জনযোগ্য নয় বললেও বিভিন্ন সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে অনেকটা কাছাকাছি পূর্বাভাস দিচ্ছে।

গত ৩ এপ্রিল এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি তাদের এক প্রতিবেদনে জানায় এবার বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতির সামগ্রিক গতিপ্রকৃতি নিয়ে 'ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৯' নামে প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভালো রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, ভোগ্যব্যয় ও সরকারি বিনিয়োগ বাড়ার কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী অবস্থানে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ রপ্তানিতে সুবিধা পাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে মানুষের ভোগ্যব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে। অবকাঠামোখাতে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে সরকারি বিনিয়োগ। এর ফলে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কোঠায় পৌঁছতে পারে। এর আগে এডিবি সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানিয়েছিল।

আগের পূর্বাভাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হার বাড়ছে কীভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ জানান, আগের প্রতিবেদনে তথ্যে অপূর্ণতা ছিল। তবে এ প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে বাংলাদেশকে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে মনে করে এডিবি। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার ও করপোরেট খাতে স্বচ্ছতার মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ এডিবির।

এডিবির ইতিবাচক এ প্রতিবেদনের ঠিক পরদিন ৪ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকও তাদের প্রতিবেদনে এবার বাংলাদেশের ভালো প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। 'বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট' নামে প্রতিবেদনে এডিবির মতোই বলা হয়, রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি, সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ভোগ্যব্যয় বাড়ার কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ভালো হবে। তবে তা ৮ শতাংশের বেশি বা ৮ শতাংশও নয়, ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, ভুটান, ভারত এবং বাংলাদেশ- বিশ্বের এই পাঁচটি দেশে এবার সবেচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। তবে খেলাপি ঋণ রুগ্ন ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব আদায়ে নিম্নগতি, দক্ষ মানবসম্পদে অভাব, সরকারি ব্যবসায়িক নিয়মনীতির দুর্বলতার কারণে এ প্রবৃদ্ধি টেকসই নাও হতে পারে। আগামীতে তাই এ সব খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দেয়ার পরামর্শ ঋণদানকারি সংস্থাটির।

বাংলাদেশে এবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে থাকবে- সরকারি মহলে এমন আশাবাদ শুরু থেকেই ছিল। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এবার প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরেই হবে। তিনি বলেন আওয়ামী লীগ সরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছে। বলেন, সরকার দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে। রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশীয় বাজার সৃষ্টিতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নেও সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সব কিছু মিলিয়ে অর্থনীতিতে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু, এখন প্রশ্ন হলো- অর্থনীতির এ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতে অব্যহত থাকবে তো? এ জন্য আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিচ্ছেন সকলে। ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা বিশেষ করে খেলাপি ঋণ, ঋণের সুদহার না কমানোয় বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার কোটি টাকায়। এ ঋণ আদায়ে সরকার ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে খেলাপিদের। অথচ ভালো ব্যবসায়ীদের সুদ দিতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ। এতে করে ভালো ব্যবসায়ীদের মধ্যেও খেলাপি হবার আশঙ্কা তৈরি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকারকে খেলাপিঋণ-বান্ধব হবার দরকার নেই। এতে উল্টো ফল হতে পারে। তাই দেশের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে সুচিন্তিত নীতিমালার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনার পরামর্শ তার।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040