তিব্বতি হস্তশিল্প  এবং একদল প্রতিবন্ধীর সাবলম্বী হবার গল্প
  2019-04-03 13:26:51  cri

তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত এলাকার রাজধানী লাসা শহরের তুই লং ত্য ছিং বিভাগের তুং কা গ্রামে তিব্বত কু চুয়ান জাতীয় হস্তশিল্প কোম্পানিতে অনেক কর্মী নীল রঙের ইউনিফর্ম পরে মন দিয়ে হস্তশিল্প তৈরি করেন। ৫৮ জন কর্মীর মধ্যে ৪৮ জন প্রতিবন্ধী। তারা এখানেই সবকিছু শিখেছেন এবং এ দক্ষতার মাধ্যমে নিজ নিজ স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তিব্বত জাতির তান চেং লুও পু বিংশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের পর জন্মগ্রহণকারী। নানী এবং মাসিমা তাকে লালনপালন করেন। তার মাসিমা একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। তাই তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন যে, প্রতিবন্ধীরা কী ধরনের জীবনযাপন করেন এবং কর্মসংস্থান পাওয়া তাদের জন্য কত কঠিন এক ব্যাপার। তান চেং লুও পু সবসময় গণকল্যাণমূলক কাজের প্রতি আগ্রহী। তিনি তিব্বত শান নান অঞ্চলের পু মা চিয়াং থাং উপজেলার এক প্রাথমিক স্কুলের ভবন নির্মাণে অর্থ প্রদান করেন, রিদ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা দেন এবং নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হবার পর তিনিও সেখানে গিয়ে ত্রাণকাজে অংশগ্রহণ করেন। নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় কারানোর পর তিনি শিল্প ও গণকল্যাণমূলক কাজে সংযুক্ত হন। তিনি প্রতিবন্ধীদের সাবলম্বী করার কাজ মন দেন। এর জন্য তিনি প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তিনি একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ কোম্পানির মূল ব্যবসা হলো তিব্বতি তাবু, কাপড়, নিটওয়্যার এবং কারুশিল্প তৈরি করা।

কোম্পানিতে কঠোর পেশাদার প্রশিক্ষণব্যবস্থা চালু হয় এবং প্রতিবন্ধীদেরকে কীভাবে এ পণ্যগুলো তৈরি করতে হবে, তা শিখিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাদের অনেককেই কাজ দেওয়া হয়। নিয়মিতভাবে কর্মীদের মধ্যে পেশাদার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় এবং যারা সবচেয়ে ভালো কাজ করে, তাদের পুরস্কার দিয়ে উত্সাহ দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধীরা নিজেদের পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতি মাসে আড়াই হাজার থেকে ৩৪০০ ইউয়ান পর্যন্ত আয় করতে পারেন এবং তাদের জীবনমান অনেক উন্নত হয়।

মেই তুও ছু চি একজন প্রতিবন্ধী নারী। আগে তিনি গ্রামে পশুপালক হিসেবে কাজ করতেন। কোম্পানিতে আসার সময়ে তিনি এর বাইরে আর কিছুই করতে পারতেন না, বুঝতেন না। তবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর তিনি এখন খুব ভাল সেলাই করতে পারেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে দেখে তিনি খুব খুশি। তিনি বলেন, "এখানে এসে আমি নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে সেলাই শিখেছি। আমি এখন আমার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে পারি। এটা আমার জন্য খুব খুশির ব্যাপার।"

কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তান চেং লুও পু নিজে এক বছরের মধ্যে ইশারা ভাষা বা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শিখেছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তিনি ইশারা ভাষার ক্লাসে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি এখন হান ও তিব্বতি দু'রকমের ইশারা ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন। তিনি তার কর্মীদেরকে বই পড়তে উত্সহ দেন। কারণ, বই পড়লে নিজেকে উন্নত করা যায়। তেং চেং লুও পু মনে করেন, তিনি ও তার কর্মীরা মিলে একটি পরিবার। সবাই একসাথে কাজ করে, লেখাপড়া করে এবং জীবন যাপন করে। তার কোম্পানিতে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষকেও ইশারা ভাষা শিখতে হয়, যাতে সবাই পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। তার উদ্যোগে কর্মীরা নিয়মিতভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। তার মতে অন্যদেরকে সাহায্য দেওয়া একটি সুখ এবং তিনি আশা করেন তার কর্মীরা এমন সুখ অনুভব করবেন। তিনি বলেন, "আমি সবসময় কর্মীদেরকে নিয়ে এমন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। কেন? আমাদের সরকারের এমন কথা আছে, প্রকৃত দারিদ্র্যমুক্তির জন্য কাউকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করার চেয়ে, তাকে অর্থ আয় করার জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা দরকার। আমি আশা করি আমাদের কর্মীরা বুঝতে পারেন যে, তারা প্রতিবন্ধী হলেও, অন্যদেরকে সাহায্য করতে পারেন।"

২০১৮ সালে কোম্পানির বিক্রয়য়ের পরিমাণ ছিল ৭০ লাখের বেশি এবং স্থানীয় সরকার কোম্পানিকে অনেক সুবিধা দেয়। গেল বছর তারা দারিদ্র্যবিমোচন কার্যালয়ের কাছ থেকে ১৮ লাখ ইউয়ান অর্থ সহায়তা ও ৫ লাখ ইউয়ান ভাতা পেয়েছে, যা কোম্পানির উন্নয়নের অনেক সমস্যা দূর করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় তান চেং লুও পুর বিষয় ছিল কম্পিউটিং এবং তিনি নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে একটি ওয়াবসাইট এবং একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন। ভোক্তারা এখন ইন্টারনেট ও মোবাইলের মাধ্যমে অর্ডার দিতে পারেন। তারা ওয়াবসাইটে ইচ্ছামতন পণ্যের রঙ ও প্যাটার্ন বাছাই করতে পারেন।

তান চেং লুও পু বলেন, তারা এখন কোম্পানির দ্বিতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। তারা তুই লং ত্য ছিং বিভাগের শিল্পপার্কে কারখানা খুলবেন এবং তখন তিন বছেরে আরও ১০০০টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন।(শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040