চীনে সংখ্যালঘু ইয়াও জাতির লোকসংখ্যা ২৬ লাখের বেশি এবং দক্ষিণ চীনের কুয়াং সি, হুনান, কুয়াং তুং, ইউন নান, কুই চৌ ও চিয়াং সি—এই ৫টি প্রদেশের ১৩০টিরও বেশি জেলায় এদের বাস। এর মধ্যে কুয়াং সি প্রদেশে বাস করে সবচেয়ে বেশি ইয়াও জাতির মানুষ।
ইয়াও জাতির মানুষের অনেক ধরনের নাম আছে। এ জাতির উত্সের কাহিনী, উত্পাদনের পদ্ধতি, বাস ও পোশাকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের নাম নানা রকমের হয়। যেমন, কেউ কেউ নিজেকে মিয়ান বলে ডাকে। তাদের ভাষায় 'মিয়ান' মানে মানুষ। ভাষা, ঐতিহ্য ও ধর্মের পার্থক্য রয়েছে ইয়াও জাতির মানুষের মধ্যে। ইয়াও জাতির মানুষকে ৪টি শাখায় ভাগ করা হয়। পান চি ইয়াও জাতি, তারা 'মিয়ান' নামের একটি ভাষায় কথা বলে। পু নু ইয়াও জাতি, তারা মিয়াও জাতির ভাষা ব্যবহার করে। চা শান ইয়াও এবং নান সি ইয়াও দুটি ইয়াও জাতির মানুষ তং জাতির ভাষায় কথা বলে।
এর মধ্যে প্রথম দুটি ইয়াও জাতির মানুষ সবচেয় বেশি। তারা যথাক্রমে মিয়াও, তং এবং হান জাতির ভাষায় কথা বলে।
ইয়াও জাতির নিজস্ব কোনো লিখিত ভাষা ছিল না বলে পণ্ডিতদের ধারণা। প্রাচীনকালে তারা কাঠের উপর চিহ্ন এঁকে দৈনন্দিন জীবনের রের্কড রাখত।
অনেক আগে ইয়াও জাতির মানুষ হান ভাষা দিয়ে গানের কথা লেখে, ধর্মীয় গ্রন্থ রচনা করে। আর এর ভিত্তিতে নতুন নতুন অক্ষরও সৃষ্টি করে। এই সৃষ্ট অক্ষরকে 'প্রাচীন ইয়াও ভাষা' বলে ডাকা হয়। এমন অক্ষর চার ধরনের। এক ধরনের অক্ষর হান ভাষার মতোই অর্থ বহন করেদ উচ্চারণও একই। দ্বিতীয় ধরনের অক্ষর দেখতে হান ভাষার মতো তবে উচ্চারণ ইয়াও ভাষার। এমন অক্ষর সবচেয়ে বেশি। কোনো কোনও অক্ষরের উচ্চারণ হান ভাষার, তবে তার অর্থ পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কোনো কোনো অক্ষর নতুন সৃষ্টি হয়েছে।
১৯৮২ সালে ইয়াও জাতির ভাষার পিনইন প্রকাশিত হয়। এতে রয়েছে ১৩০টি 'ফাইনাল', ৩০টি 'ইনিশিয়াল' ও ৮টি টোন রয়েছে।
ইয়াও জাতির অধিকাংশ মানুষের বাস সাবট্রপিকাল রেনফরেস্ট অঞ্চলে। কিছু পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়া সব জায়গায় পানিসম্পদ প্রচুর। একসময় ইয়াও জাতির মানুষ পাহাড়ে বাস করত। চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণনীতি চালু হবার পর এখন ইয়াও জাতির মানুষ পাহাড় থেকে নেমে ইটের ভবনে বাস করছে।
থাং রাজবংশ আমলের কবিতায় আমরা দেখি হু নান প্রদেশের ইয়াও জাতির মানুষ শিকার ভাল করত। যখন কৃষিকাজ থাকে না, তখন তারা গ্রুপে গ্রুপে শিকারে বের হতো। কুয়াং তুং প্রদেশে বসবাসকারী ইয়াও জাতির মানুষও এমন শিকারে বের হতো।
ইয়াও জাতির ঐতিহাসিক উত্সব অনেক এবং প্রায় প্রতিমাসে থাকে উত্সব। বসন্ত উত্সব ও সমাধি পরিষ্করণ উত্সবসহ চীনে ব্যাপক পালিত উত্সব ছাড়া, ইয়াও জাতির বৃহত্তম উত্সব 'ভান ওয়াং উত্সব'। তারা জাতির প্রথম পূর্বপুরুষ, ভান ওয়াং নামে একজন মানুষ-দেবতার পূজা করে। গত শতাব্দির আশির দশক পর্যন্ত নানা জায়গায় ভান ওয়াং উত্সবের তারিখ ভিন্ন ছিল। সাধারণত শরৎ কাল থেকে বসন্ত উত্সবের আগ পর্যন্ত এক সময়। ১৯৮৪ সালে চীনের সব ইয়াও জাতি চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতি বছরের দশম মাসের ১৬তম দিন 'ভান ওয়াং উত্সব' হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তা ছাড়া, বিভিন্ন জায়গার ইয়াও জাতি নিজেদের বিশেষ উত্সবও রয়েছে।
ইয়াও জাতির লোকসাহিত্য বেশিষ্ট্যপূর্ণ। মুখে মুখে প্রচারিত লোকসাহিত্য বেশ সমৃদ্ধ। কিছু গান ও কাহিনী হান ভাষায় রের্কড করাও হয়েছে পরবর্তী কালে। গান গাওয়া ইয়াও জাতির মানুষের অভ্যাস। তারা যে-কোনো বিষয় নিয়ে গান গাইতে পারে। (শিশির/আলিম/রুবি)