0406jingji
|
১. গত ১০ বছরে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এশিয়ার অবদান ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। সম্প্রতি চীনের হাইনানে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান বোআও এশিয়া ফোরাম কাউন্সিলের মহাসচিব লি পাও তুং।
এদিকে, চীনের তাইওয়ানের এক ওয়েবসাইটে ২৬ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন-মার্কিন বাণিজ্য-সংঘাত চীনা অর্থনীতির ওপর কঠোর আঘাত হানলেও, চীনের অর্থনীতি এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী আছে। চীনের অর্থনীতি এশিয়ার অর্থনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ইস্ট এশিয়া রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক বলেন, চীনের প্রযুক্তিগত রূপান্তর এবং আর্থিক খাতে উন্নয়ন দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নতুন শক্তি যুগিয়েছে।
ওদিকে, 'বোআও এশিয়া ফোরাম, ২০১৯'-এ পাঁচটি প্রধান বিভাগে ৫০টিরও বেশি আলোচনায় সবচেয়ে বেশী মনোযোগ পেয়েছে চীনা অর্থনীতি। একটি সাব-ফোরামে ইতালির অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বলেন, জি-৭-এর সদস্য এবং ইইউ'র অন্যতম সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে, ইতালি চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে যোগ দেওয়ায়, আরও বেশী ইইউ সদস্যরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
২. চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বলেছেন, দেশে বিদেশি পুঁজির প্রবেশে বিধিনিষেধ আরও কমাতে হবে। সদ্যগৃহীত 'বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ আইন'-এর পরিপূরক অন্যান্য নিয়ম-বিধিও দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে। তিনি সম্প্রতি হাইনানে 'বোআও এশিয়া ফোরাম, ২০১৯'-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী লি জোর দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতার প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন পক্ষের উচিত পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতার উপায় খুঁজে বের করা, যাতে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা রক্ষা পায়।
তিনি আরও বলেন, এশিয়া হচ্ছে বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিও এশিয়া। অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া এবং জীবিকা উন্নয়ন হচ্ছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভিন্ন লক্ষ্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বোআও এশিয়া ফোরামের কাউন্সিলার বান কি-মুন শুভেচ্ছা-ভাষণ দেন। বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ২ সহস্রাধিক প্রতিনিধি ফোরামে অংশ নেয়।
৩. ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোমানো প্রোদি বলেছেন, চীনের সঙ্গে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় সহযোগিতার গুরুত্ব ইউরোপ বুঝতে পারে। তিনি সম্প্রতি হাইনানে 'বোআও এশিয়া ফোরাম, ২০১৯'-এর একটি সাব-ফোরামে এ কথা বলেন।
প্রোদি বলেন, বর্তমান জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ইউরোপ ও চীনের উন্নয়নের ওপর বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাব ফেলছে। এই অবস্থায় দু'পক্ষের উচিত সহযোগিতার মাধ্যমে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা।
সাব-ফোরামে এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট চিন লি ছুন বলেন, এআইআইবি ও 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত; উভয়ের লক্ষ্য অভিন্ন।
চীনের উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান চেং চি চিয়ে বলেন, অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সমন্বয়ের জন্য একটি বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনার প্রয়োজন মেটাতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সাব-ফোরামে চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী চৌ চিয়া ই বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ব্যাপারে চীনা ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় 'এক অঞ্চল, এক পথ'-এর মাধ্যমে চীন দিয়েছে একটি বৈশ্বিক প্লাটফর্ম।
৪. চীনে গ্রামীণ পর্যটন খাতে ২০১৮ সালে আয় হয়েছে ৮০,০০০ কোটি ইউয়ান। ২০১২ সালে এ খাতে আয় হয়েছিল ২৪,০০০ কোটি ইউয়ান। সম্প্রতি আনহুই প্রদেশে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ পর্যটন প্রমোশন অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান হয়।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ চীনের কৃষি ও গ্রামীণ মন্ত্রণালয় গ্রামীণ পর্যটনের জন্য ৩৮৮টি 'জাতীয় দৃষ্টান্তমূলক গ্রাম' প্রতিষ্ঠা করে এবং ৭১০টি 'অবসর গ্রাম' চালু করে।
চীনের কৃষি ও গ্রামীণ মন্ত্রণালয়ের শিল্প উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীনে গ্রামীণ পর্যটন খাতে আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি এর আওতাও ক্রমশ বাড়ছে।
৫. 'চীনের আইটি শিল্প উন্নয়ন প্রতিবেদন' অনুসারে, আইটি উন্নয়ন-সূচকে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে চীন। সম্প্রতি শেনচেনে অনুষ্ঠিত 'আইটি লিডারশিপ শীর্ষ সম্মেলন, ২০১৯'-এ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ডিজিটাল চীন ফেডারেশনের স্থায়ী প্রতিনিধি লি ইং অনুষ্ঠানে বলেন, চীনের আইটি শিল্প আরও শক্তিশালী ও আরও বড় হওয়ার পথে রয়েছে। এ খাতে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও জার্মানির পরে চতুর্থ স্থানে রয়েছে চীন।
চীনের ১৯টি শহরের আইটি খাতের উন্নয়নের অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেইজিং, শেনচেন ও শাংহাইয়ের আইটি উন্নয়ন-সূচক চীনে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে চীনের টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যবসার মোট পরিমাণ ছিল ৬.৫৫৫৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের মোট ব্যবসার ১৩৭.৯ শতাংশেরও বেশি। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যাও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ৪জি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি, চীনে ৫জি নেটওয়ার্কের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
৬. গত ২৯ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চীনের সি'আনে রেশমপথ আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী মেলায় 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট ৪৩টি দেশ ও অঞ্চল, চীনের ৩১টি প্রদেশের ৫০০টি পর্যটন সংস্থা অংশগ্রহণ করে।
চীনের সাংস্কৃতিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এবং শানসি, কানসু, নিংশিয়া, ছিংহাই ও শিনচিয়াং-এর যৌথ উদ্যোগে এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার উদ্দেশ্য ছিল দেশি-বিদেশি পর্যটন-শিল্পের উন্নয়নের জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ সৃষ্টি করা। মেলা চলাকালে তিন শতাধিক জনকল্যাণমুলক কর্মতত্পরতা অনুষ্ঠিত হয়।
৬. ব্রিক্সের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) চলতি বছর ১৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করবে। গেল বছর ব্যাংকটি ঋণ অনুমোদন করেছিল ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। এনডিবি'র প্রেসিডেন্ট কুন্দাপুর ভামান কামাথ সম্প্রতি কেপটাউনের অনুষ্ঠিত ব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরদের ৪র্থ বার্ষিক সভায় এ কথা জানান। এবারের সভার প্রতিপাদ্য ছিল: টেকসই উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্ব।
সভায় সদস্যরাষ্ট্রগুলোর উন্নয়ন-চাহিদার পাশাপাশি উদীয়মান বাজার-অর্থনীতিগুলোর উন্নয়ন-চাহিদার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। কামাথ বলেন, এনডিবি টেকসই উন্নয়নের ওপর অধিক গুরুত্ব দেবে এবং এক্ষেত্রে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
কামাথ জানান, বর্তমানে ব্যাংকের ঋণের প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবহন, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, সুপেয় পানি, স্যানিটেশন, শহর উন্নয়ন, ও পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োজিত আছে।
উল্লেখ্য, এনডবি একটি উন্নয়ন ব্যাংক। এটি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোগ স্থাপিত হয়।
৭. দু'দিনব্যাপী নেপাল বিনিয়োগ সম্মেলন সম্প্রতি কাটমান্ডুতে শেষ হয়। ৪০টি দেশের ৩০০টিরও বেশি কম্পানি এতে অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনে একাধিক সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সম্মেলনে বিভিন্ন বিদেশি বিনিয়োগকারী, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারি বিভাগের মধ্যে জল-বিদ্যুত ও সৌরশক্তিসংক্রান্ত ১৫টি সমঝোতাচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে ইয়ুননান শিনহুয়া জল-বিদ্যুত কম্পানি নেপালের পশ্চিমাঞ্চলে ৩৬ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের একটি জল-বিদ্যুত প্রকল্পের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে।
বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা নেপালের উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় সমর্থন যোগানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে। বিশ্ব ব্যাংকের অধীনে আন্তর্জাতিক ফাইনান্স কম্পানি আগামী ৪ বছরে নেপালে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা পেশ করে।
সম্মেলনের প্রাক্কালে নেপাল সরকার ৩২০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ৭৭টি প্রকল্প বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরে। শেষ পর্যন্ত ১৭টি প্রকল্পে প্রাথমিক বিনিয়োগচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে ৭টি যোগাযোগ, ৪টি জ্বালানিসম্পদ এবং ৩টি কৃষিবিষয়ক প্রকল্প।
৮. বাংলাদেশের জলে ও স্থলে বড় পরিসরে গ্যাস অনুসন্ধানে যাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রম-কে সহযাত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। দেশটির সরকার বহুজাতিক এই কোম্পানিটির সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো।
বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, দেশের সমুদ্র ও স্থলে গ্যাস-খনিজ অনুসন্ধানে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে আলাদা সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা গেছে, ৫টি গ্যাসক্ষেত্রে গভীর কূপ খননে গ্যাজপ্রম ১৬ কোটি মার্কিন ডলার দাবি করেছে। এ ছাড়া সমুদ্রের ২৬টি ব্লকের মধ্যে ২২টিতে জরিপ পরিচালনায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মার্কিন ডলার প্রস্তাব করেছে গ্যাজপ্রম। এ অর্থে তারা প্রায় ৩৫ হাজার লাইন কিলোমিটার এলাকায় জরিপ পরিচালনা করবে।
(আলিমুল হক)