190331
|
ভাই, আমি মাঝে মাঝে বিকালে কাজ শেষে লাউ শান পার্কে গিয়ে রানিং করি। একদিন সেখানে একটি ঘটনা ঘটে, জানো?
টুটুল: কি ভাই?
আকাশ: সেখানে থিয়ান থান দাদাদের সাথে আমার দেখা হয় এবং পরিচয় হয়।
টুটুল: তাই নাকি? বন্ধুরা, এর আগে আমরা আমাদের এই অনুষ্ঠানে থিয়ান থান দাদাদের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি, মনে আছে?
থাই থান মানে 'টেম্পল অব হ্যাভেন'। এ পার্কে অনেক দাদা আছেন, তাদের বয়স ৫০ এর উপরে। কিন্তু তারা প্রতিদিন জিমনেস্টিক্স চর্চা করেন। তারা এখন সারা বেইজিংয়ে অনেক বিখ্যাত । তাদের ডাকনাম হচ্ছে থাই থান দাদা। আমি আসলে তাদের গল্পের মাধ্যমে অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছি।
আকাশ: আসলে ওই দিন লাউ শান পার্কে যাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে তাদের আমি 'লাও শান দাদা' বলতে পারি, তাইনা? তারা সেখানে একটি ছোট জায়গায় আনুভূমিক বারের মাধ্যমে আসিনের মত জিমনেস্টিক্স চর্চা করেন। অনেকবার চক্রাকারে পরিভ্রমণ করেন।
একজন দাদা বিশ্রাম নেওয়ার সময় লাউড স্পিকারে ডিস্কো সঙ্গীতের সাথে নাচ করেন। তখন ওই পরিবেশ অনেক ফ্রি ও আনন্দে ভরা।
তারা তাদের জীবনের আনন্দ আমাকে দিয়েছেন এবং আমিও তাদের কাছ থেকে জিমনেস্টিক্সের কিছু অভিজ্ঞতা শিখেছি। ওই দিনের আনন্দ আমার এখনো মনে আছে।
টুটুল:...
আকাশ: বন্ধুরা, আমাদের জীবনে আসলে দু:খ করার সময় নেই। এজন্য আমরা সবাই থিয়ান থান বা লাও শান দাদাদের মত সাহস ও আবেগ নিয়ে পছন্দের জীবনপথে চলবো এবং শরীর চর্চা করবো, কেমন?
সংগীত
আকাশ: বন্ধুরা, আমরা এখন অব্যাহতভাবে চীনের ম্যারাথন খেলোয়াড় ওয়াং চুন শিয়ার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?
টুটুল:
কষ্ট মানুষকে আরো শক্তিশালী করে
ওয়াং চুন শিয়ার রেকর্ড দিন দিন ভালো হতে থাকে। ১৯৯৩ সালের ৪ এপ্রিল, এ দিনটি ওয়াং চুন শিয়ার খুব খুশির একটি দিন। সপ্তম জাতীয় গেমসে নারীদের ম্যারাথনে তিনি ২ ঘন্টা ২৪ মিনিট ৭ সেকেন্ডে রেকর্ড সৃষ্টি করে চ্যাম্পিয়ন হন। এটি নারীদের ম্যারাথনে এশিয়ায় নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে।
এ বছরটি ওয়াং চুন শিয়ার খুশির বছর হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু এরপর একটি দুর্ঘটনা তার সমস্ত আনন্দ ধ্বংস করে ফেলে। চ্যাম্পিয়ন হবার পর ওয়াং চুন শিয়া দেশের বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু অগাস্টে অনুষ্ঠেয় চতুর্থ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তিনি মাত্র কয়েকদিন বাসায় থাকেন। তারপর তিনি সেন ইয়াং শহরে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ফিরে যান।
চলে যাওয়ার সময় ওয়াং চুন শিয়ার বড় ভাই তার সঙ্গে তা লিয়ান ট্রেন স্টেশনে যান। ছোটবেলা থেকেই বড় ভাই তাকে আদর করেন। এ কয়েক বছরে তিনি খুব কম দেশের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। তাই বড় ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের সুযোগও কম। বিদায়ের সময় তাদের মধ্যে অনেক অনুভূতি কাজ করে।
ট্রেন শুরু হবার সময় ওয়াং চুন শিয়া ট্রেনে বড় ভাইকে ডাকেন: "ভাইয়া, আবার দেখা হবে!" কিন্তু, তিনি জানেন না যে, এটা হচ্ছে তাদের শেষ দেখা!
ওয়াং চুন শিয়া চলে যাওয়ার পর, গ্রামের বাইরে একটি রাস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনায় তার বড় ভাই মারাত্মক আহত হন। তারপর হাসপাতালে জরুরি চিকিত্সা নেয়ার পরেও তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ওয়াং চুন শিয়ার বাবা-মা মনে ভীষণ আঘাত পান। এ খবর ওয়াং চুন শিয়াকে জানাবেন কিনা তা নিয়ে তারা ভাবতে থাকেন। অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, এখন এ খবর শুনলে তাঁর মধ্যে আঘাত তৈরি হবে, এতে গেমসে তার নেতিবাচক ফলাফল তৈরি হবে। এ জন্য তারা তাকে এ খবর জানাতে চান না ।
তবে বাবা-মা ওয়াং চুন শিয়ার কোচ মা চুন রেনকে টেলিফোন করে জানান যে, "ওয়াং চুন শিয়ার বড় ভাই মারা গেছেন, আমরা তাকে জানাতে চাই না, কারণ তার বড় ভাই তার খুব খোঁজ খবর নিতো, এ খবর তাকে জানালে সে সহ্য করতে পারবে না।"
দেশের বাড়িতে বড় ভাইয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় ওয়াং চুন শিয়ান ফোন করেন, বাবা-মা মনের কষ্ট গোপন রেখে মেয়েকে বলেন, "মা, তুমি ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নেবে, বাসায় সব ঠিক আছে, সবাই ভালো, তোমার বড় ভাই এবং বড় বোন তোমার সেরা রেকর্ডের প্রত্যাশা করছে, তুমি চীনের খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে ভালোভাবে খেলবে।"
টেলিফোন রাখার পর বাবা-মা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, তাদের চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে ওয়াং চুন শিয়া বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় গেমসে আবার দশ হাজার মিটারে স্বর্ণ পদক অর্জনের পর, পুনরায় তিনি দেশের বাড়িতে ফোন করেন।
টেলিফোনে তিনি বড় ভাইয়ের খোঁজখবর জিজ্ঞাস করেন। তখন তিনি খুব তাড়াতাড়িই অক্টোবরে স্পেনে ম্যারাথন বিশ্ব কাপে অংশগ্রহণ করবেন। এজন্য বাবা-মা আবার তাকে কিছুই জানান না, মনের কষ্ট গোপন রেখে তারা তাকে শুধু অভিনন্দন জানান ও উত্সাহিত করেন।
কিন্তু ওয়াং চুন শিয়ার স্পেন যাওয়ার প্রাক্কালে, হু নান প্রদেশের একটি স্পোর্টস পত্রিকা তার বড় ভাইয়ের গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করে। দলের নেতা, কোচ এবং সব খেলোয়াড় এ খবর দেখতে পান। ওয়াং চুন শিয়াও এ খবর দেখেন এবং ভীষণ আঘাত পান। প্রথমে তিনি এ খবর বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, "যদি এই খবর সত্যি হয়, তাহলে কেন পরিবারের সবাই আমাকে তা বলেন নি?"
কাঁদতে কাঁদতে ওয়াং চুন শিয়া ভাবতে থাকেন, "হঠাত বড় ভাইয়ের এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, আমার প্রশিক্ষণ এবং আবেগে যেন এ ঘটনার কোনো প্রভাব না পড়ে তাই বাবা-মা এ ঘটনা তাকে জানান নি"। তিনি অবশেষে বুঝতে পারেন।
সবাই ওয়াং চুন শিয়ার কাছে এসে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। সবাই আশা করেন তিনি এ চাপ সহ্য করতে পারবেন। মাতৃভূমির সম্মানের জন্য ওয়াং চুন শিয়া সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি সমস্ত কষ্ট ভুলে নিজেকে চাঙ্গা রাখবেন।
তিনি বলেন, "সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার প্রতি বড় ভাইয়ের ভালোবাসা, বাব-মার ভালোবাসা, দলের নেতৃবৃন্দ, কোচ, দলের সব খেলোয়াড়ের আমার প্রতি যে সমর্থন, এ সব কিছুর কারণে আমি সেরা রেকর্ড সৃষ্টি করবো।"
স্পেন ম্যারাথন গেমসে, ওয়াং চুন শিয়া মনের কষ্ট ও দু:খ সহ্য করে সব প্রচেষ্টা চালিয়ে ভালো রেকর্ড তৈরির চেষ্টা করেন। এই রেকর্ডের মাধ্যমে তিনি বড় ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখাতে চান। অবশেষে তিনি স্বর্ণ পদক অর্জন করেন। চীনের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় ওয়াং চুন শিয়ার চোখ থেকে পানি বের হতে থাকে.......... বিদেশের ভূমিতে।
বিশ্বের দিকে রানিং করা ওরিয়েন্টাল রেইনডিয়ার
১৯৯৬ আটলান্টা গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণে, ওয়াং চুন শিয়া একটানা ছয় মাস কঠোর প্রশিক্ষণ নেন। প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটার সময় পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে ২০ কিলোমিটার রানিং করেন তিনি। এ ছয় মাসের মধ্যে তিনি একবারও চলচ্চিত্র দেখেননি, একবারও বাইরে ঘুরতে যান নি, হাঁটুতে আঘাত পেলেও তিনি একদিনও বিশ্রাম নেন নি। কারণ তিনি আবারো অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন হতে চান। এ স্বপ্ন তাকে সবসময় উত্সাহিত করে।
পরিশ্রম অবশেষে পুরস্কার হয়ে ওঠে। ১৯৯৬ সালের ২৮ জুন, আটলান্টা গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে ওয়াং চুন শিয়া পাঁচ হাজার মিটার ও দশ হাজার মিটারে দু'টি স্বর্ণ পদক পান। তিনি প্রথম চীনা খেলোয়াড় যিনি একই অলিম্পিক গেমসের ট্র্যাক ও ফিল্ড ইভেন্টে একসাথে দু'টি স্বর্ণ পদক লাভ করেন। ট্র্যাক ও ফিল্ড ইভেন্টে ওরিয়েন্টাল রেইনডিয়ার অলৌকিক ঘটনা সৃষ্টি করেন।
ছোটবেলা থেকে ওয়াং চুন শিয়া বাতাসের মতো রানিং করতে থাকেন। এ অব্যাহত রানিং ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি একজন সেরা ম্যারাথন খেলোয়াড়ে পরিণত হন এবং প্রত্যেক চীনার গর্ব হয়ে ওঠেন।