২০১৮ সালে চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যের রফতানি বেড়েছে ৪.৯ শতাংশ (অর্থ-কড়ি; ২৩ মার্চ ২০১৯)
  2019-03-23 14:13:09  cri


১. ওয়াশিংটনভিত্তিক ফরেন পলিসি থিংক-ট্যাঙ্ক 'কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস'-এর এশিয়া কার্যক্রমের সিনিয়র ফেলো ইউকন হুয়াং বলেছেন, বিগত কয়েক বছরে চীন ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস্‌ সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং এ-বছর প্রণয়ন করেছে 'বিদেশি বিনিয়োগ আইন', যা দেশটির সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।

সম্প্রতি সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, এটা সত্য যে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস্‌ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চীন উন্নত দেশগুলো থেকে খানিকটা পিছিয়ে আছে। তবে, এ ক্ষেত্রে চীন দ্রুত উন্নতি করছে।

তিনি বলেন, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি (আইপি) রাইটস্‌ সংরক্ষণের জন্য চীন তার বিচারব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছে। শাংহাই, বেইজিং, শেনচেনের মতো বড় শহরগুলোতে উন্নত আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া, গত চার-পাঁচ বছরে গোটা চীনজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে নিরপেক্ষ আদালত।

তিনি জানান, বেইজিংয়ে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স সম্প্রতি একটি জরিপ চালায়। জরিপ অনুসারে, ৯০ শতাংশ মার্কিন কোম্পানি মনে করে, আইপি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চীন দ্রুত উন্নতি করছে। সদ্য-প্রণীত 'বিদেশি বিনিয়োগ আইন'-ও আইপি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চীনের একটি যথাযথ উদ্যোগ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি চীনের গণকংগ্রেসে 'বিদেশি বিনিয়োগ আইন' পাস হয়। এটি ২০২০ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত, চীনে বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৬০ হাজার। এ ছাড়া, এ সময় পর্যন্ত চীনে বিদেশি বিনিয়োগ ২.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

২. চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বলেছেন, তাঁর দেশ বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়নে বরাবরের মতোই অবদান রেখে যাবে। পাশাপাশি, চীন বাজারের প্রাণশক্তি চাঙ্গা রাখতেও সচেষ্ট থাকবে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন তিনি।

রয়টার্সের সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী লি বলেন, চীনের অর্থনীতি বর্তমানে সত্যিই নিম্নমুখী চাপের সম্মুখীন। তবে বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নয়নের গতিও ধীর। গত এক মাস ধরে কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংস্থা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। চীনও প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, চীন বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে, অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।

৩. চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনা অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল; পরিস্থিতির উন্নতিও ঘটছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় অর্থনীতি বহুমুখী পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালক ও মুখপাত্র মাও শেং ইয়ং সম্প্রতি বেইজিংয়ে এ কথা বলেন।

মাও শেং ইয়ং বলেন, 'বসন্ত উত্সব' চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অর্থনীতির কোনো কোনো সূচকের ওপর প্রভাব ফেলেছে। তবে, প্রথম দুই মাসে আমদানি-রফতানি স্থিতিশীলভাবে বেড়েছে। তিনি মনে করেন, সরকার ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেওয়ায়, বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

এদিকে, চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সারা চীনে, কৃষি খাত ছাড়া, জাতীয় স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.১ শতাংশ বেশি ছিল। আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে পণ্যের মোট খুচরা বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮.২ শতাংশ বেশি।

৪. ২০১৮ সালে চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যের রফতানি আগের বছরের চেয়ে ৪.৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯২৫৩ কোটি মার্কিন ডলারে। সম্প্রতি দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।

মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৮ সালে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে চীন সাংস্কৃতিক পণ্য রফতানি করেছে রেকর্ড ১৬২৯ কোটি মার্কিন ডলারের। এ বছর ব্রিকসভুক্ত দেশসমূহ ও লাতিন আমেরিকায় চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যের রফতানি বেড়েছে যথাক্রমে ১৮.১ ও ১৪.৫ শতাংশ।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ২০১৮ সালে চীন বিদেশ থেকে সাংস্কৃতিক পণ্য আমদানি করেছে ৯৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের, যা আগের বছরের চেয়ে ১০.৩ কোটি মার্কিন ডলার কম। ফলে ২০১৮ সালে এই খাতে চীনের বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত ছিল ৮২৬৮ কোটি মার্কিন ডলার।

৫. ২০১৮ সালে চীনের টেক ফার্ম সিয়াওমি নিট মুনাফা করেছে ১৩৪৮ কোটি মার্কিন ডলার। এ বছর কোম্পানি ১১ কোটি ৮৭ লাখ স্মার্টফোন শিপমেন্ট করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪১.৩ শতাংশ বেশি।

৬. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের তিব্বতের কৃষি ও পশুপালন অঞ্চলে আর্থিক সেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষ দিক পর্যন্ত তিব্বতে কৃষকদের সহায়তাসংক্রান্ত ক্যাশ-মেশিনের সংখ্যা দাঁড়ায় চাহিদার ৯২.৬ শতাংশ। আর সারা বছর আর্থিক সেবাকেন্দ্রগুলোতে লেনদেনের পরিমাণ ২০১৭ সালের তুলনায় ২৯.৭ শতাংশ বেশি ছিল।

চীনের গণব্যাংকের লাসা শাখা থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ, তিব্বতে কৃষকদের সহায়তাসংক্রান্ত ক্যাশ-মেশিনসহ সংশ্লিষ্ট সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯১৬টিতে।

৭. ২০১৮ সালে ব্রুনেইয়ের বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত কমেছে। সরকারি হিসেব অনুসারে, ২০১৮ সালে দেশটির বাণিজ্য-উদ্বুত্ত ছিল ৩২৫ কোটি ব্রুনেই ডলার, যা আগের বছরে ছিল ৩৪৬ কোটি ব্রুনেই ডলার। ২০১৮ সালে দেশটির রফতানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। কিন্তু আমদানি ৩২ শতাংশ বাড়ায়, নিট বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত কমেছে।

৮. ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশি মুদ্রার মজুত কমেছে। কোরীয় মু্দ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমনটা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেব অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে দেশের বিদেশি মুদ্রার মজুত ছিল ৭৩৬৮ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৮৪ কোটি ডলার কম।

৯. লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)-র জরিপ অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের সঙ্গে এখন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় আছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। ২০১৮ সালে এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল।

বিশ্বের ১৩৩টি শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে জরিপ চালিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়। গত ৩০ বছর ধরে এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে ইআইইউ। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

শহরগুলোয় সাধারণ কিছু পণ্য ও সেবার মূল্যের তুলনা করে তালিকা তৈরি করেছে ইআইইউ। এসব সেবা ও পণ্যের মধ্যে আছে রুটির মতো খাবার ও পানীয়, পোশাক, বাড়িভাড়া, গৃহস্থালি পণ্য, প্রসাধনসামগ্রী, পরিবহন-ব্যয়, স্কুল-খরচ, ইউটিলিটি বিল ও বিনোদন-ব্যয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের জীবনযাপনে যে-ব্যয় হয়, তার সঙ্গে বিশ্বের অন্য শহরগুলোর তুলনা করে ইআইইউ এ তালিকা প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে নিউইয়র্ক শহরকে বেঞ্চমার্ক হিসেবে ধরা হয়।

প্রতিবেদনের লেখক রোক্সানা স্লাভশেভা বলেন, ২০০৩ সাল থেকে শীর্ষ ১০ ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় সবসময় প্যারিসের নাম ছিল। এই শহর জীবনযাপনের জন্য অতিরিক্ত ব্যয়বহুল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এ শহরে চুল কাটাতে নারীদের গড়ে ব্যয় করতে হয় ১১৯.০৪ মার্কিন ডলার, যেখানে জুরিখে ৭৩.৯৭ ডলার ও জাপানের ওসাকা শহরে ৫৩.৪৬ ডলার ব্যয় করতে হয়।

ইআইইউয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর হলো সিঙ্গাপুর, হংকং ও প্যারিস। এর পরেই আছে সুইজারল্যান্ডের শহর জুরিখ ও জেনিভা। এ তালিকায় শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে আরও স্থান পেয়েছে জাপানের ওসাকা, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ইসরায়েলের তেলআবিব ও যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস।

১০. চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-র প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮.১৩ শতাংশে এবং মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১৯০৯ মার্কিন ডলারে। গত অর্থবছরে মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৭৫১ মার্কিন ডলার।

সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসির সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ পূর্বাভাস দেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৮৬ শতাংশ। মূলত শিল্প খাতের হাত ধরে প্রবৃদ্ধির আকার বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা।

বিবিএসের তথ্যমতে, কৃষি খাতে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৫১ শতাংশ; শিল্প খাতে ১৩.০২ শতাংশ, এবং সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৫০ শতাংশ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি বিশেষ করে রফতানি, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে অবস্থা ভালো থাকায় উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সহজ হয়েছে। আগামী চার বছরে প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040