রোববারের আলাপন-190324
  2019-03-24 13:33:13  cri


আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি এনামুল হক টুটুল এবং শিয়েনান আকাশ।

আকাশ: বন্ধুরা ৮ মার্চ চীনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হয়। আমরা প্রথমে এ সম্পর্কিত একটি খবর আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?

টুটুল: বেইজিংয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন

মার্চ ৮: আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ৭ মার্চ বেইজিংয়ে দেশি-বিদেশি নারী প্রতিনিধিদের নিয়ে এক উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

চীনের নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ম্যাডাম শেন ইউয়ে ইউয়ে দেশি-বিদেশি নারী প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, কমরেড সি চিন পিংকে কেন্দ্র করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন কর্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। নারীরা সিপিসি'র নির্দেশনা অনুসরণ করে চীনা সমাজের উন্নয়ন, সুন্দর জীবনযাপন গড়ে তোলা ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে নতুন অবদান রাখবেন বলে আশা করেন তিনি। চীনা নারীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীদের সাথে আরো সুন্দর ও সুখী বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালাবেন বলে কামনা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, চীনের শ্রেষ্ঠ নারী প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও কূটনীতিকসহ সহস্রাধিক অতিথি এতে অংশ নেন।

আকাশ: বন্ধুরা, আন্তর্জাতিক নারী দিবস চীনে ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হয়। নারীরা চীনের বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। চীনে এদিনটি বিভিন্নভাবে উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আমাদের অফিসের সব নারী বন্ধুরা চকলেট এবং চলচ্চিত্রের টিকিট পেয়েছেন।

টুটুল:....

আকাশ: ভাই, আমি তোমাকে এবং আমাদের ভাইবোনদেরকে একটি মজার ঘটনা শেয়ার করবো, কেমন?

টুটুল: কি ভাই?

আকাশ: সম্প্রতি আমি একদিন সিআরআইয়ের ক্যান্টিনে লাঞ্চ খাওয়ার পর ডিকাথলোন অর্থাত তি খা নং গিয়েছিলাম। (ডিকাথলোনকে চীনা ভাষায় তি খা নং বলা হয়)

টুটুল: আপনি তি খা নং গেলেন, কিন্তু আমাকে নিয়ে গেলেন না কেন?

আকাশ: সরি ভাই, নেক্সট টাইম আমি তোমাকে নিয়ে যাবো, কেমন?

টুটুল: অবশ্যই আমাকে নিয়ে যেতে হবে। তি খা নং আমার স্পোর্টস জগতের ভালোবাসার জায়গা।

আকাশ: সেখানে আমি অনেক কিছু দেখেছি। তি থা নংয়ের অনেক জিনিস ছেলেমেয়েরা অনেক পছন্দ করে, যেমন বাইক। আমি সেদিন তি খা নংয়ে দুটি ছোট বাচ্চার ঝগড়া দেখেছি। অবশ্য ছোট সমস্যা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এসময় তাদের মা বাচ্চা দু'জনকে থামানোর চেষ্টা করেন এবং নিজের ছেলেকে অন্য ছেলের কাছে সরি বলার জন্য বলেন।

একজন ছেলের রাগ হয়তো তখনো শেষ হয়নি। তাই তার মা ছেলের রাগ কমানোর জন্য তাকে দোকানের ভিতরে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখান। তারপর তাদের মায়েরা নিজের ছেলেকে অন্য ছেলের কাছে সরি বলার জন্য চেষ্টা করেন। তাদের মিলিত প্রচেষ্টায় দুই ছেলে পরস্পরের বন্ধু হয়ে যায়।

একজন ছেলে কি বলেছে জানো, সে বলে, কে প্রথম সরি বলবে, কে হবে বিগ হিরো! এ কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করেন। হাসতে হাসতে দুই ছেলে পরস্পরকে সরি বলে। এরপর আবার আনন্দ নিয়ে একসাথে খেলা শুরু করে।

ভাই, আমি এটা দেখার পর অনেক মুগ্ধ হয়েছি। এ দুই মা হচ্ছেন মহান মা। তাদের শিক্ষা এবং নির্দেশনায় এ সাধারণ জিনিস থেকে দুই ছেলে অনেক ভালো জিনিস শিখেছে এবং সারাজীবন তাদের মধ্যে এই শিক্ষা থাকবে।

পারিবারিক শিক্ষা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ। মা-বাবা কি রকম মানুষ, তাদের আচরণ কি রকম, এসব বিষয় তাদের সন্তানদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ভাই, এ সম্পর্কে তুমি কি বলো?

টুটুল:....

সঙ্গীত

আকাশ: বন্ধুরা, আমরা গত অনুষ্ঠানের মত আজও অব্যাহতভাবে ম্যারাথন খেলোয়াড় ওয়াং চুন শিয়ার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?

টুটুল:

B 'ওয়াইল্ড রেইনডিয়ার' থেকে 'ভালো প্রশিক্ষিত রেইনডিয়ার'

১১ বছর বয়সে ওয়াং চুন শিয়ার পরিবার ফি চিয়া কুয়ো থেকে তালিয়ানে ছোট মাছ ধরার গ্রামে চলে যায়। সমুদ্র দেখে ওয়াং চুন শিয়া আনন্দের সাথে জাম্প শুরু করেন। তখন তিনি যখনই সময় পেতেন তখনই সমুদ্র সৈকতে রানিং করতেন। সমুদ্রের বাতাসে তার মুখ লাল হয়ে যায়। সেখানে অনেক নতুন লোকের সাথে তার পরিচয় হয়। সমুদ্র সৈকতের পাশে অবস্থিত স্কুলে তিনি লেখাপড়া করেন। তিনি যখন সময় পেতেন তখন সমুদ্র সৈকতে হাটাহাটি করতেন, ঝিনুক সংগ্রহ করতেন, মাছ ধরতেন, এভাবে অনেক মজার সময় কাটাতেন।

স্কুলে খেলাধুলার গেমস আয়োজন উপলক্ষে একজন শিক্ষক ওয়াং চুন শিয়াকে জিজ্ঞাস করেন, ওয়াং চুন শিয়া, তুমি কি লম্বা দূরত্বের রানিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবে? আমাদের ক্লাস থেকে অন্তত একজনকে অংশ নিতে হবে।

ওয়াং চুন শিয়া জবাবে বলেন, স্যার, কিন্তু আমি কখনই এত লম্বা দূরত্ব রানিং করিনি। শিক্ষক বলেন, সমস্যা নেই, শুধু চেষ্টা করো। এরপর ওয়াং চুন শিয়া ৮০০ মিটার রানিংয়ে অংশ নেন এবং চ্যাম্পিয়ন হন।

জুনিয়র হাইস্কুলে লেখাপড়ার সময় ওয়াং চুন শিয়া স্কুলের স্পোর্টসে ১৫০০ মিটারের রানিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। তখন থেকে সবাই জানতে পারেন ওয়াং চুন শিয়া রানিংয়ে অনেক দক্ষ। যখনই স্কুলে স্পোর্টস আয়োজন করা হয়, তখনই ওয়াং চুন শিয়া লম্বা দূরত্বের রানিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হন।

তারপর ওয়াং চুন শিয়াকে বাছাই করা হয়। তিনি তালিয়ান শহরের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্পোর্টসে অংশ নেন। সেখানে পেশাদার দক্ষ খেলোয়াড়দের পরাজিত করে ওয়াং চুন শিয়া লম্বা দূরত্বের রানিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হন।

খেলা শেষে অনেকেই সন্দেহ করেন যে, ওয়াং চুন শিয়ার স্কুল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য স্পোর্টস স্কুল থেকে তাকে ধার করেছে। এরপর তদন্তের পর নিশ্চিত করা হয় যে, ওয়াং চুন শিয়া সত্যি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী।

ওই গেমসের পর, স্কুলের একজন শিক্ষক ওয়াং চুন শিয়াকে স্পোর্টস স্কুলে পড়ালেখার জন্য সুপারিশ করেন। তখন স্পোর্টস স্কুলের কোচ বলেন, ওয়াং চুন শিয়া খুবই ছোটোখাটো, সে খেলোয়াড় হওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়।

শিক্ষক বলেন, ওয়াং চুন শিয়া লেখাপড়ায় অনেক ভালো, সে সবসময় মন দিয়ে শিক্ষকের কথা শোনে, আপনি দয়া করে তাকে একবার সুযোগ দিন। এ কথা শোনার পর স্পোর্টস স্কুলের কোচ রাজি হন।

গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ওয়াং চুন শিয়া স্পোর্টস স্কুলে যান। কয়েকদিন পর কোচ তাকে ফেরত পাঠান। কোচ স্কুলের শিক্ষককে বলেন, "ওয়াং চুন শিয়ার সমন্বয়-ক্ষমতা খুবই দুর্বল, সে কোনোকিছুই ভালোভাবে করতে পারে না, এমনকি, সে যৌথ মুভমেন্টও ভালোভাবে করতে পারেনা, তাকে আমরা নিতে পারি না।"

ওয়াং চুন শিয়া মনে করেন, তিনি পেশাদার প্রশিক্ষণ নেন নি, কিভাবে অন্য খেলোয়াড়দের সাথে রানিং করতে হয় তা তিনি জানেন না, এজন্য কোচ তাকে নিতে চান নি, এ কথা ঠিক।

স্কুলের শিক্ষক আবার কোচের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, দয়া করে আবারও ওয়াং চুন শিয়াকে একটি সুযোগ দেন। কোচ তখন অনিচ্ছাকৃতভাবেই রাজি হয়ে যান। এবার ওয়াং চুন শিয়া আরো কঠোর পরিশ্রমের সাথে প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। তখন একটি গেমস আয়োজন করা হয়। কোচ ওয়াং চুন শিয়াকে একটি সুযোগ দিতে চান, তিনি তাকে বলেন, "তোমার খেলার ফলাফল দেখতে চাই, যদি তুমি ভালো খেলতে না পারো, তাহলে আর প্রশিক্ষণ নিতে আসবে না।"

ওয়াং চুন শিয়ার খেলা শুরু হয়। অনেক বিস্ময়কর ফলাফল তৈরি হয়। তিনি ৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে ১৫০০ মিটারের রানিং সম্পন্ন করেন। তিনি তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। কোচ তখন অনেক খুশি হন। তিনি ওয়াং চুন শিয়াকে বলেন, "ওয়াং চুন শিয়া, তুমি কোনো চিন্তা করবে না, আমি নিশ্চয়ই তোমাকে চাই, তুমি খেলোয়াড় দলে ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করবে, কেমন?"

ওয়াং চুন শিয়া অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে স্পোর্টস স্কুলে ভর্তি হন। তখন তার বয়স ১৫ বছর। ওয়াং চুন শিয়া স্পোর্টস স্কুলে যেতে চান, কিন্তু তার মাথায় কিছু চিন্তা কাজ করে। তার মা বা তাকে বলেন, "তোমার মধ্যে যদি বাড়ির প্রতি দুর্বলতা না থাকে, যদি মন যেতে চায়, তাহলে যাও।" এরপর ওয়াং চুন শিয়া স্পোর্টস স্কুলে যান এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পেশাদার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।

C. উজ্জ্বলতার দিকে রানিং

স্পোর্টস স্কুলে প্রবেশ করার পর, ওয়াং চুন শিয়া আবিষ্কার করেন যে, তিনি হলেন গ্রাম থেকে আসা একমাত্র মেয়ে। তিনি কিছুই জানেন না। কিন্তু তিনি তার 'গ্রাম্য বৈশিষ্ট্য' খেয়াল করেন না। তিনি শুধু তার প্রশিক্ষণের ফলাফলকে গুরুত্ব দেন।

কোচ তাঁর কথা বাস্তবায়ন করেন। তিনি ওয়াং চুন শিয়াকে প্রশিক্ষণ দলের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব দেন।

এ স্পোর্টস স্কুল হচ্ছে একটি চার বছর মেয়াদী বিশেষ মাধ্যমিক স্কুল।

তারা সিনিয়র গ্রেডের খেলোয়াড়। তাই সবাই ওয়াং চুন শিয়ার মতো একজন কালো ও ছোটখাটো গ্রাম্য মেয়েকে ক্যাপ্টেন মানতে পারেন না।

যখনই ওয়াং চুন শিয়া তাদের কাছে যান, তারা মুখ অন্যদিকে সরিয়ে নেন, তার কথা শোনেন না। এমনকি, একবার সবাই গোল হয়ে ওয়াং চুন শিয়াকে মাটিতে ফেলে আঘাত করে। ওয়াং চুন শিয়া আর সহ্য করতে না পেরে কোচের কাছে গিয়ে বলেন, স্যার, আমি আর ক্যাপ্টেন থাকতে চাইনা।

কোচ তখন ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব অন্য একজনকে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার ওয়াং চুন শিয়া ক্যাপ্টেন হন। কারণ, ওয়াং চুন শিয়া মনে করেন, অন্যরা তাকে অবজ্ঞা করে, কারণ তাদের দক্ষতা যথেষ্ট শক্তিশালী না। এজন্য তিনি নিজেকে আরো গভীরভাবে প্রশিক্ষণে যুক্ত করেন, এবং অব্যাহতভাবে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেন। অবশেষে তিনি সবার সম্মান পেয়ে ক্যাপ্টেন হন।

১৯৯১ সালে কোচ মা চুন রেন ওয়াং চুন শিয়াকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এরপর ওয়াং চুন শিয়া আরো কঠোর এবং পেশাদার প্রশিক্ষণ পান।

মা চুন রেনের প্রশিক্ষণ দলে আসার পর প্রথমদিকে ওয়াং চুন শিয়ার প্রশিক্ষণের ফলাফল তেমন ভালো ছিলোনা, এ কারণে ওয়াং চুন শিয়া একটু অস্থির হয়ে ওঠেন। তিনি ভাবতে থাকেন, কেন তার ফলাফল ভালো নয়? এরপর তিনি আরো কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন। অনেক কষ্ট এবং ক্লান্তির সময় তিনি নিজেকে উত্সাহ দেন যে, "অন্য মানুষ অবিরত লেগে থাকতে পারলে আমি কেন পারবো না?"

এভাবে তিনি নিজেকে অব্যাহতভাবে উত্সাহ দিতে থাকেন। এরপর তিনি খুব দ্রুত অগ্রগতি লাভ করেন।এমনকি অন্য মানুষের চেয়ে তিনি তখন সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040