২০০১ সাল থেকে সিপিপিসিসি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী চীনাদের প্রতিনিধিদের অধিবেশনে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। সিপিপিসিসি'র অধিবেশনে আমন্ত্রণ পাওয়া প্রথম প্রবাসী চীনা চুয়াং লি ফেং, যিনি বাংলাদেশে বসবাস করেন। মানে, বাংলাদেশ থেকে এর আগে কোনো চীনা প্রবাসী সিপিপিসিসি'র অধিবেশনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পাননি। চুয়াং লি ফেং বাংলাদেশে চীনা প্রবাসী ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও তিনি হলেন বাংলাদেশের চীনা প্রতিষ্ঠান লিদেছেং গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। চুয়াং লি ফেং মনে করেন সিপিপিসিসি'র বার্ষিক অধিবেশনে অংশগ্রহণ তাঁর জন্য একটি বিশাল মর্যাদার ব্যাপার। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,"একবার সিপিপিসিসি'র অধিবেশনে উপস্থিত হতে পারা আমার জন্য আজীবনের মর্যাদা। এটি শুধু যে মর্যাদা তা নয়, বরং দায়িত্ব। আমরা তথা চীনা প্রবাসীরা 'দুই অধিবেশন'-এর কণ্ঠ হয়ে আবার বিদেশে ফিরে যাবো। আমরা দুই অধিবেশনের চেতনা ও ধারণা প্রবাসী চীনাদের কাছে প্রচার করব।"
চুয়াং লি ফেং সাংবাদিকদের বলেন, চীনের দুই অধিবেশন হলো বিশ্বের মনোযোগের বিষয়। বাংলাদেশে বসবাসকারী চীনারাও দুই অধিবেশনের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন। এবারের সম্মেলনে তিনি প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সরকারি কর্মবিবরণী শোনার পর বলেন,"আমি মনে করি, আমাদের সরকার ২০১৯ সালে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে খুবই আস্থার পরিচয় দেবে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) ও রাষ্ট্র জনগণের স্বার্থকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। আমরা দেখেছি, রাষ্ট্র বরাবরই জনগণের স্বার্থে কাজ করার চেষ্টা করে থাকে।"
বাংলাদেশ হল 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশে চীনা প্রবাসীদের প্রতিনিধি হিসেবে চুয়াং লি ফেং সরকারি কর্মবিবরণীতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর বেশি মনোযোগ দেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,"'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের কথা পাঁচ বার সরকারি কর্মবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। এ কাঠামোয় দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে চীনারা কাজ করছেন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নে চীনা মানুষ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।"
চুয়াং লি ফেং আরও বলেন, তিনি বাংলাদেশে বিগত ২০ বছর ধরে আছেন। অথচ এই দীর্ঘ সময়ে তিনি এটা বুঝতে পারেননি যে, চীনের উন্নয়ননীতি ও 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের মধ্যে সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশে তার সময় যত কাটে, তিনি তত মাতৃভূমিকে ভালবাসেন। বিদেশে চীনা প্রবাসীদের সাফল্যকে মাতৃভূমির সাফল্যই বলা যায়। চুয়াং লি ফেং ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা শুরু করেন। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠিত লিদেছেং গোষ্ঠী বাংলাদেশের বৃহত্তম পোষাক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গোষ্ঠীটির কর্মীসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। তাঁর গোষ্ঠী বিরাট মুনাফা লাভ করার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতি ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। এছাড়াও তাঁর প্রতিষ্ঠান স্থানীয় নাগরিকদের চীনকে জানানোর জানালায় পরিণত হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,"আসলে আমাদের উচিত পরিশ্রম করা। আমরা স্থানীয় কর্মীদেরকে নিজের পরিবারের সদস্যদের মত যত্ন করি। এছাড়াও আমরা স্থানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মকে সম্মান করি। আমি বাংলাদেশে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করছি। আমি বাংলাদেশকে নিজের দ্বিতীয় জন্মস্থান হিসেবে ভাবি।"
চুয়াং লি ফেং বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের কেন্দ্রীয় ধারণা হল 'শান্তি, সহযোগিতা, পারস্পরিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং অভিন্ন কল্যাণ।' এ সম্পর্কে তিনি বলেন,"আমার প্রতিষ্ঠান শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত। আমি কর্মীদের পরিবহনের সমস্যা সমাধান করার জন্য তাঁদেরকে কারখানার কাছাকাছি এলাকায় আধুনিক ডরমেটরি নির্মাণ করে দিয়েছি। এতে জিম, ক্যান্টিন, কিন্ডারগার্ডন, চিকিত্সালয় রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশের কর্মীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। বাংলাদেশে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান আর নেই। আসলে আমাদের কর্মীদের ডরমিটরি তাঁদের নিজেদের বাড়ির চেয়েও সুবিধাজনক।"
বিদেশে চীনা প্রবাসী হিসেবে সিপিপিসিসি'র অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে মাতৃভূমির সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র দেখে চুয়াং লি ফেং খুশি। বাংলাদেশে চীনা প্রবাসী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি মনে করেন, একদিকে দুই অধিবেশনের চেতনা বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল চীনার কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত, এবং অন্যদিকে তাঁদেরকে মাধ্যমে বাংলাদেশে চীনের ভাবমূর্তি উজ্জল করা উচিত। তিনি বলেন,"আমরা বরাবরই বলি যে, ভালভাবে চীনা গল্প বলা উচিত। যদি আমরা প্রত্যেক চীনা প্রবাসী ভালভাবে নিজের গল্প বলি, তাহলে বাংলাদেশে চীনা গল্প সৃষ্টি হবে। আমরা নিজের কন্ঠ দিলে শক্তিশালী চীনা কন্ঠ গড়ে তোলা হবে। আমাদের লক্ষ্য হল, বাংলাদেশে সকল চীনা প্রবাসীকে নেতৃত্ব দিয়ে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে উন্নয়ন করা এবং অভিন্ন মানব ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলায় নিজেদের অবদান রাখা।"