নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলা: বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
  2019-03-17 18:45:15  cri
বিশ্বের নিরাপদ দেশের তালিকায় দুই নম্বরে থাকা নিউজিল্যান্ড সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হলো ১৫ মার্চ। দেশটির ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২ বাংলাদেশিসহ নিহত হয়েছে ৫০ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩ বাংলাদেশি।

বর্বরোচিত এ হামলায় কেঁপে ওঠে নিউজিল্যান্ডসহ গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশের জন্যও এ হামলা সৃষ্টি করে ব্যাপক অভিঘাত। শুধু এ জন্য নয় যে হামলায় বাংলাদেশি নাগরিক হতাহত হয়েছে। বরং নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে তৃতীয় টেস্ট খেলতে ক্রাইস্টচার্চে ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। শুধু তাই নয়, হামলার শিকার দুই মসজিদের একটি আল নূর মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় টাইগাররা। তাদের মসজিদে ঢোকার একটু আগেই আল নূর ও লিন উড মসজিদে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। একটা ভয়াবহ জাতীয় ট্রাজেডি ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। এ ঘটনার পর বিদেশে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের নিরাপত্তার প্রশ্নটিকেও সামনে নিয়ে এসেছে।

ক্রাইস্টচার্চে হামলাটি ছিল নানা দিক থেকে ব্যতিক্রমী। ফিল্মি কায়দায় সামাজিক গণমাধ্যমে লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হঠাৎ দেখলে মনে হবে কোনো ভিডিও গেমস। কিন্তু নারকীয় এ দৃশ্যটি ছিল নির্মম বাস্তব। আল নূর মসজিদে হামলাকারী ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান ব্রেন্টন ট্যারেন্ট ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে ৪০ জনের বেশি মুসল্লিকে। পলায়নপর মুসল্লিদের টার্গেট করে করে সে গুলি করে। আহত-রক্তাক্ত মরণাপন্ন মানুষদের কাছে থেকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কী অভাবিত পৈশাচিকতা! শেষ দিকে তাকে থামাতে ধস্তাধস্তি করেন এক পাকিস্তানি মুসল্লি-যার সন্তানকেও হত্যা করে ব্রেন্টন তারই চোখের সামনে। ধস্তাধস্তিতে গুরুতর আহত সেই পাকিস্তানি বাবা শেষ পর্যন্ত নিজেও মারা যান হাসাপাতালে। তবে তার সাহসিকতায় প্রাণ বেঁচেছে অনেকের। ধস্তাধস্তির সময় অনেক মুসল্লি নিরাপদে সরে যেতে পারেন মসজিদ থেকে। পরে হামলাকারীও বেগতিক দেখে পালিয়ে যায়। কয়েক কিলোমিটার দূরে লিনউড মসজিদেও ৭ জনকে হত্যার পর হামলাকারীর হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেয় এক অসম সাহসী মুসল্লি। সেখানেও পালিয়ে যায় হামলাকারী। তবে পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ব্রেন্টন ট্যারেন্ট।

শ্বেতাঙ্গ যুবা ব্রেন্টন ট্রারেন্টের এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ স্তম্ভিত করেছে গোটা বিশ্ববাসীকে। জাতিগত ঘৃণা কতো তীব্র হলে একজন মানুষের পক্ষে এমন নির্মমতা সম্ভব! গণমাধ্যমের খবরে এসেছে, মুসলিম ও অভিভাসন বিরোধিতা থেকেই ব্রেন্ট এই হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে সবসময় এ সব বিষয়ে সমালোচনামুখর ছিল। আর তার হিরো ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আদালতে নেয়ার পরও ব্রেন্টনের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি। বরং সে দম্ভভরে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠতের চিহ্ন দেখায়।

ক্রাইস্টচার্চের এ হামলাকে নিউজিল্যান্ডের জন্য কালো দিন হিসেবে অভিহিত করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডার্ন। হতাহতের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে অভিবাসীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন তিনি। বলেন, অভিবাসীরা নিউজিল্যান্ডকে নিরাপদ মনে করে এ দেশে এসেছিলেন, তারপরও তারা হামলার শিকার হলেন। জানান দুই শো'র বেশি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও ১৬০টির বেশি ভাষাভাষীর দেশ নিউজিল্যান্ডের মানুষ বৈচিত্র্যের মধ্যেই পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা নিয়ে বসবাস করেন। উগ্রবাদী হামলার মধ্য দিয়ে নিউজিল্যান্ডের সেই মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না বলেও তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। শুধু বক্তব্য দিয়েই ক্ষান্ত হননি দেশটির প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদলীয় নেতাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার পরপরই তিনি হামরাস্থলে যান। হতাহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন, তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তাঁর এ ভূমিকা অভিবাসীদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করবে আশা করা যায়।

ক্রাইস্টচার্চে এ হামলার অভিঘাত নিঃসন্দেহে সারা বিশ্বে পড়বে। এর প্রতিক্রিয়ায় জঙ্গি ইসলামি গোষ্ঠী আইএস বা এর মতো উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে আবারো তৎপর করতে পারে বলে আশঙ্কা অনেক বিশ্লেষকের।

বাংলাদেশের জন্য এ হামলাটি অন্যরকম একটি সতর্কবার্তা নিয়ে এসেছে। অনেকে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ক্রাইস্টচার্চ হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল- এমন ভাবনা অমূলক নয়। এ ঘটনায় বিদেশে টাইগারদের নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে সামনে এনেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ভবিষ্যতে ক্রিকেট দলকে বিদেশে পাঠানো হবে। গোটা জাতির প্রত্যাশা বিদেশে জাতীয় ক্রিকেটদলের সদস্যদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।

ঢাকা থেকে মাহমুদহ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040